হত্যান্ডের ২৩ বছর পর রায়, সব আসামি খালাস

উচ্চ আদালতে বিচারপতি মানিকের রায় পুনঃশুনানী

চট্টগ্রাম: সন্দ্বীপের গাছুয়া ইউনিয়নে ২৩ বছর আগে আক্কাস উদ্দিন হত্যা মামলায় সব আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত। চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আজ রোববার এ আদেশ দেন। এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সহকারী পিপি অজয় বোস জানান, এদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় নির্ধারিত ছিল। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায় ঘোষণা করে। “আদালত বলেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেয়া হল।” দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এ মামলার বিচার শেষ করতে তিন মাস সময় বেঁধে দিয়েছিল হাই কোর্ট। ওই সময়ের মধ্যেই বিচার শেষ করে রায় দিল চট্টগ্রামের আদালত।

এ মামলায় খালাস পাওয়া আট আসামি হলেন- গাছুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, দফাদার শাহজাহান হক, চৌকিদার আবুল কাসেম, চৌকিদার ফয়েজ উদ্দিন আহমেদ, চৌকিদার সিদ্দিক, মেম্বার আশরাফ উদ্দিন, মেম্বার মোমিনুল হক ফেরদৌস ও চৌকিদার সাফিউল হক। তাদের মধ্যে শফিকুলসহ প্রথম তিনজন বিচার চলার মধ্যেই মারা গেছেন। আশরাফ উদ্দিন ও মোমিনুল হক ফেরদৌস জামিনে আছেন। পলাতক আছেন সিদ্দিক ও সাফিউল হক। কেবল চৌকিদার ফয়েজ এখনও কারাগারে রয়েছেন।

চলতি বছরের ১১ মে চৌকিদার ফয়েজ গ্রেপ্তার হন। নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন নাকচ হলে তিনি হাইকোর্টে যান। ওই জামিন শুনানিতেই গত ৮ অগাস্ট বিচারক এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারক জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ জানতে চায়- কেন ১৭ বছরেও মামলাটি নিষ্পত্তি করা যায়নি। সেই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয় ওই বেঞ্চ থেকে।

১৯৯৩ সালের ৪ অগাস্ট চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নে আক্কাস উদ্দিনকে (৩০) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মামলার নথিতে বলা হয়, স্থানীয় আবুল কাশেমের ১৫ হাজার টাকা চুরির অভিযোগে গাছুয়া ইউনিয়নের সেই সময়ের চেয়ারম্যান শফিকুল আলমের বাড়িতে ডেকে নিয়ে আক্কাসকে মারধর করা হয়।

এজাহারে বলা হয়, চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার বাড়ির সামনের গাছে বেঁধে আক্কাসকে দীর্ঘ সময় মারধর করা হয়। এরপর আবার নতুন আকবর হাট ও হক সাহেবের বাজারে নিয়েও তাকে মারধর করা হয়। ওই রাতেই আক্কাস মারা যান।

ঘটনার পর নিহত আক্কাসের বাবা আবুল খায়ের বাদী হয়ে ১৯৯৩ সালের ৭ অগাস্ট ছয় জনের বিরুদ্ধে সন্দ্বীপ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্দ্বীপ থানার সেই সময়ের এসআই এ এইচ এম মান্নান ১৯৯৩ সালের ১৯ অক্টোবর অভিযোগপত্র দেন। ১৯৯৯ সালে অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্য শুরু হয় ১০ অগাস্ট। মামলার নথিতে দেখা গেছে, রাষ্ট্রপক্ষ বিচারের শুরু থেকেই সাক্ষী হাজির করতে বেশ কয়েকবার সময় প্রার্থনা করে। পাশাপাশি আসামিপক্ষও কয়েকবার সময় নেয়।

আসামিদের মধ্যে কেবল জামিনে থাকা মোমিনুল হক ফেরদৌসই নিয়মিত মামলার শুনানির দিনে হাজিরা দিতেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিতে হাজির না হওয়ায় এ মামলার বিচার কাজ আটকে থাকে ১৭ বছর। হাই কোর্টের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম আবার গতি পেলে চলতি বছরের ২২ অগাস্ট চট্টগ্রামের আদালতে সাক্ষ্য দেন ডা. ফখরুল করিম, যিনি সন্দ্বীপ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। ওইদিন আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে তিনি বলেন, নিহতের মাথার পেছনে, বুকের বাঁ পাশে, তলপেট, দুই হাত ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মস্তিকে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ফলে তার মৃত্যু হয়েছিল। এটি একটি হত্যাকান্ড।

২২ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্দ্বীপ থানার সেই সময়ের ওসি এ এইচ এম মান্নানকে হাজির করতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ওই দিন সাক্ষ্য দেন সন্দ্বীপ থানার সেই সময়ের কনস্টেবল গোপাল চন্দ্র সরকার এবং জব্দ তালিকার দুই সাক্ষী স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।

সর্বশেষ গত ২০ নভেম্বর আদালতে এসে হাজিরা দেন এ এইচ এম মান্নান। অভিযোগপত্রের ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত বাদীসহ ১১ জন এ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। একজন সাক্ষী মারা গেছেন। তিন জন সাক্ষীর হদিস পায়নি পুলিশ।