চরম হুমকিতে রাষ্ট্রযন্ত্রের নিরাপত্তা, বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ও আতঙ্কিত দেশ

মোস্তাফিজ আহমাদ: গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে জিম্মি সঙ্কটের অবসান ঘটেছে। সেনাকমান্ডোর নেতৃত্বে ১২-১৩ মিনিটের যৌথ অভিযান অপারেশন ‘থান্ডার বোল্ট’ এ সঙ্কটের অবসান ঘটলো। অভিযানে নিহত হয়েছে ৬ সন্ত্রাসী। এর আগেই ইয়াওমুল জুমুয়াতি বাজুমুয়াবার সন্ধ্যায় ওই রেস্টুরেন্টে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। যৌথ বাহিনীর অভিযানে সেখানে থেকে মোট ২০ বিদেশির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে রাতেই হাসপাতালে মারা গেছে ওসি সালাউদ্দিন এবং ডিবির এসি রবিউল ইসলাম। সেনাবাহিনীরসদরদপ্তরে গত ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার বেলা দেড়টায় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আসফাক চৌধুরী।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানের মাধ্যমে ৭টা ৪০ মিনিটে অভিযানশুরু করে ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে। অভিযানে ৩ বিদেশি নাগরিকসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। অভিযানে ৬ সন্ত্রাসী নিহত হয় এবংএক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উল্লেখ্য, ইয়াওমুল জুমুয়াতি বা জুমুয়াবার সন্ধ্যায় গুলশান ২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে ৫নং বাসার দ্বিতীয় তলায় হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় কয়েকজন অস্ত্রধারী। রেস্টুরেন্টে প্রবেশের সময় তারা বেশকয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি চালায়। এসময় পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময় হয়। তখনই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন, ডিবির এসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের দুই কনস্টেবল, একজন মাইক্রোবাসচালকসহ ২০ জনেরবেশি। বলার অপেক্ষা রাখেনা, সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী ঘটনা দেশের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে।

কিন্তু ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের দেশে এ ঘটনা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। প্রসঙ্গত, সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রদ্বীন হলো সম্মানিত দ্বীন ইসলাম। আর পবিত্রদ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু বৈদেশিক আক্রমণের দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অভ্যন্তরীণ দিক থেকেও হুকুমাত বা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।মুসলমানদের মান-ইজ্জত, ধন-সম্পদ এবং রক্ত যাতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নিপতিত না হয়, সে জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মুসলমান মুসলমানের ভাই। প্রত্যেক মুসলমানেরমান, ইজ্জত, ধন-সম্পদ ও রক্ত অন্য মুসলমানের উপর হারাম।” (মুসলিম শরীফ) অর্থাৎ মানুষের সামাজিক বা হুকুমাতের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে এমন কাজকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কঠোরভাবেহারাম ঘোষণা করেছেন।

প্রকৃত মুসলমানের পরিচয় তুলে ধরে শেষ নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ।” (বুখারী ওমুসলিম) তাই জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বজায় রাখা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে অপরিহার্য কর্তব্য এবং ঈমানী দায়িত্ব। কোনো রকম অশান্তি সৃষ্টি, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা ওসহিংসতা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “আর তোমরা পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর এতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।” (সূরা আরাফ : ৫৬) কিন্তু শান্তির জন্য প্রচেষ্টা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সর্বদাই অশান্তিকামী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী স্বার্থপর লোকেরা খড়গহস্ত থাকে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে  ইরশাদ হয়েছে, “এবং তারা (পবিত্র দ্বীনইসলাম উনার শত্রুরা) দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, আর মহান আল্লাহ পাক তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪) পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করাকঠোর ভাষায় নিষিদ্ধ করেছে।

নিরপরাধ ব্যক্তিদের গুলি করে, বোমা মেরে বা অগ্নিসংযোগে হত্যা করা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সঙ্গে কখনো সংগতিপূর্ণ নয়। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা, জানমালের ক্ষতিসাধন ও দেশের সম্পদ বিনষ্ট করাকে কবিরা গুনাহআখ্যায়িত করে এর ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “মানুষ হত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেনদুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করলো; আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করলো।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)

মানুষের জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা কোরো না।” (সূরা বনি ইসরাইল :৩৩) হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “দুনিয়া ধ্বংস করে দেয়ার চেয়েও মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।” (তিরমিযী শরীফ)

সঙ্গতকারণেই তাই বলতে হয়, পবিত্র দ্বীন ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম নির্বাচনভিত্তিক বর্তমানগণতান্ত্রিক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে হত্যা, বোমা মারা, দগ্ধ করার মতো ভয়াবহ ফিতনা তথা চরম অনিরাপত্তার বলয় বা বর্ণনাতীত আতঙ্কজনিত অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতে হবে তথা শক্তভাবে আখেরী নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শ-সুন্নতের রজ্জু শক্তভাবে আকড়ে ধরতে হবে। এ লক্ষ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহিমান্বিত জীবনী মুবারকআলোচনা ও অনুসরণ করতে হবে। হিংসা, বেইনসাফ, যুলুম, ফিতনা-ফাসাদ, মারামারি, কাটাকাটি তথা হত্যা, নাশকতা ও সহিংসতা থেকে মুক্তি পেতে সম্মানিত কুরআন শরীফ ও সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার শিক্ষা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

লেখক: গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ

jamindar786@gmail.com