কথা রাখেনি ভারত, বাংলাদেশেই ফিরতে চায় ‘সুখের আশায়’ ভারতে যাওয়া ছিটবাসীরা

ডেস্ক: বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহল থেকে যেসব ছিটবাসী ভারতে গিয়ে সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়েছিলো তারা আবার বাংলাদেশেই ফিরতে চায়।

পুনর্বাসনের অভাবে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ এই ছিটবাসীদের বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যেই গোপনে বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছে বলেও জানা গেছে। বিষয়টি প্রথমে জানতে পারেন বাংলাদেশে ভারতের সহকারী হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

গত মে মাসে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তিনি পঞ্চগড়ে গিয়েছিলো। সেই সময়ই তিনি জানতে পারেন যে, সুখে থাকার আশায় জমি-জমা বেঁচে যারা ভারতে চলে গিয়েছিলো তাদের অনেকেই আবার ফিরে আসতে চাইছে। তবে তারা সবাই ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে চলে আসলে নানারকম জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে পাঠানো রিপোর্টে তিনি জানিয়েছেন, যেসব ভারতীয় নিজের ভূখণ্ড গিয়েছিলো, নানা কারণে তারা এখন বাংলাদেশে ফিরতে চাইছে, যা কাঙ্খিত নয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রিপোর্টটি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। তারপরেই মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অধিকর্তা বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে বিশদে জানতে চেয়েছে।

হলদিবাড়ি ক্যাম্পের বাসিন্দা শরৎ রায় স্বীকার করেছে যে, তার এক ভাই-সহ দুই আত্মীয় চোরাপথে বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, তার ভাই বাংলাদেশে মিষ্টির দোকানের কারিগর ছিলো। হাজার দশেক টাকা আয় ছিল। এখানে রুজি না মেলায় বাংলাদেশে চলে গিয়েছে। কাজের সুযোগ না পেয়ে বাকিরাও গিয়েছে।

মেখলিগঞ্জ ক্যাম্পের বাসিন্দা শরৎচন্দ্র বর্মন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে তার দর্জির দোকানে পাঁচ জন কর্মী খাটত। পাঁচ বিঘার ওপরে জমি ছিল। খাওয়া-পরার কষ্ট ছিল না। কিন্তু ভারতে এখন তিনি দিনমজুর। তার আক্ষেপ, সাত জনের সংসার। এখানে কোথাও দোকান দেয়ার জায়গা নেই। তাই দিনমজুরি করতে হয়। সরকার না দেখলে নিরুপায় হয়ে ভিন্ন পথেই ফিরতে হবে।

নাগরিক অধিকার সমন্বয় কমিটির কর্তা দীপ্তিমান সেনগুপ্তও স্বীকার করেছেন যে, সাবেক ছিটমহলবাসীদের করুণ অবস্থায় দিন যাপন করতে হচ্ছে। ত্রাণ শিবিরে যারা রয়েছে তাদের আর্থিক সমীক্ষা জরুরি ছিল। সেসব কিছুই হয়নি।

নবান্ন সূত্রে খবর, কোচবিহার জেলাশাসকের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ভারতীয় ছিটমহলগুলো বাংলাদেশে মিশে যাওয়ার পর এপারে এসেছিলেন ৯২১ জন। তাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জন্মও হয়েছে ৪ জনের। দিনহাটায় ৫৬টি, মেখলিগঞ্জে ৫৪টি এবং হলদিবাড়িতে রয়েছে ৯৬টি পরিবার। সাবেক ছিটের বাসিন্দাদের রাখার জন্য ১০ কোটি টাকা খরচ করে দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ এবং হলদিবাড়িতে তিনটি ক্যাম্প তৈরি করেছে কোচবিহার প্রশাসন। কিন্তু ক্যাম্পগুলিতে ছোট টিনের ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে মানুষকে। বিভিন্ন ক্যাম্পে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে একটিই কথা, বছর ঘুরতে চললেও কিছুই হলো না। তাই অনেকেই চলে যেতে চাইছে।