ঈদের আগে অবাধে আসছে ভারতীয় শাড়ি-থ্রিপিস

চট্টগ্রাম: পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মিরসরাইয়ের সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে অবাধে আসছে ভারতীয় শাড়ি-থ্রিপিসসহ বিভিন্ন পণ্য। ৫ কিলেমিটার সীমান্ত এলাকায় কাটাতারের বেড়া না থাকায় নির্বিঘ্নে এসব পণ্য নিয়ে আসছে চোরাচালানীরা। এ ছাড়াও সীমান্ত এলাকা দিয়ে নিয়ে আসছে ভরতীয় মুরগীর বাচ্চা ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।

সূত্র বলছে, ঈদকে সামনে রেখে চোরাকারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ গত ১৪ জুন অবৈধভাবে ভারতীয় শাড়ি আনার সময় সাত বস্তা আটক করেছে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ।

এসআই আমিরুল মুজাহিদের নেতৃত্বে একটি মিনি পিকআপসহ বারইয়ারহাট পৌরসভার কমফোর্ট হাসপাতালের সামনে থেকে শাড়িগুলো আটক করা হয়। তবে গাড়ির চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।
শাড়িগুলোর আনুমানিক মূল্য পাঁচ লাখ টাকা। এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জানা গেছে, আমলীঘাট থেকে করেরহাট কয়লার মুখ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জায়গায় কাটা তারের বেড়া না থাকায় চোরাকারবারীরা পাচারের সুবিধা হিসেবে বেছে নেয় ওই স্থানটি। এসব স্থানে বিডিআরের টহল তেমন একটা হয় না।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ফটিকছড়ি, হেঁয়াকো, মিরসরাইয়ের করেরহাট, বারইয়াহাট এবং ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমের একাধিক চোরাকারবারি সিন্ডিকেট দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পণ্য নিয়ে আসছে।

এ ছাড়া বনভূমি বেষ্টিত হওয়ায় সীমান্তরক্ষীবাহিনীর তৎপরতাও কিছুটা সীমিত। ফলে চোরাকারবারি সিন্ডিকেট অরক্ষিত ওই সীমান্ত এলাকাকে নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে।

রামগড় পৌর এলাকার মন্দির ঘাট, বল্টুরাম টিলা, অফিস টিলা, আনন্দপাড়া, পোস্ট অফিস সড়কের পাশের নদীর পাড়ের বসতি, দারোগাপাড়া, মহামুনি, ফেনীরকূল মারমা পাড়া, কাজির চর, উত্তর ফটিকছড়ির বাগান বাজার, যতিরচর, চা বাগান, নলুয়ার চর, আধারমানিক, পানুয়া এবং মিরসরাইয়ের ভবানী ইসলামপুর, রহমতপুর, কয়লা, কচুয়া, খুন্দা প্রভৃতি সীমান্ত পয়েন্ট হয়ে চোরাই পণ্য নিয়ে আসে।

সূত্রে জানা যায়, মূলতঃ চোরাচালানিদের অন্তঃদ্বন্দ্বের কারণেই মাঝে মধ্যে কিছু চোরাই পণ্য ধরা পড়ে। কোনো কোনো সীমান্ত পয়েন্টে বিডিআরের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচার কাজ হলেও কোথাও আবার সীমান্তরক্ষীদের সাথে গোপন যোগসাজশে এই চোরাচালান হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশিষ্ট সূত্র জানায়, মিরসরাইয়ের করেরহাট এলাকায় পণ্য প্রবেশের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

একটি সূত্রে জানা গেছে, ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই সীমান্ত দিয়ে শাড়ি, থ্রিপিস আসছে অবাধে। পুলিশ প্রসাশনকে ম্যানেজ করে লাখ লাখ টাকার শাড়ি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের তামাকুন্ডি লেইন, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, টেরি বাজারসহ বিভিন্ন বিপণী বিতানে। এ কাজে সরকার দলীয় বিশাল একটি সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে বলেও ওই সূত্র জানিয়েছে।
মিরসরাই অঞ্চলে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার নাম খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে করেরহাট এলাকার একাধিক সরকার দলীয় নেতার নাম। এ জন্য তারা গড়ে তুলেছে বিশাল একটি সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের কোনো সদস্য গ্রেফতার হলে টাকার বিনিময়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাঝে মধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় বিজিবি। এর বাইরে নিজ উদ্যোগে পাহারা কিংবা চোরাই পণ্য আটকের কোনো খবর নেই দীর্ঘদিন। দুর্বলতার সুযোগে সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের চোরাকারবারিরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে বিজিবি’র অলিনগর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার হায়দার আলী বলেন, ‘আমার এলাকায় কোনো চোরাচালান হয় না। আমরা সব সময় এ বিষয়ে তৎপর রয়েছি। এলাকার বাইরে কিছু হলে তো সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।’