ইবনু রসুলিল্লাহ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম

আল্লামা শরাফত খান: মহান আল্লাহ  ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তাদেরকে (উম্মাহকে) আমার বিশেষ বিশেষ দিনগুলো স্মরণ করিয়ে দিন।”

সব বিশেষ দিনের বিশেষ দিন বা মূল দিন হচ্ছে পবিত্র পবিত্র ২ যিলহজ্জ শরীফ দিনটি। যে দিন সব ঈদেরও শ্রেষ্ঠ ঈদ তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ। যে দিনের মহিমান্বিত স্মরণ কুল-মাখলুকের অস্তিত্বের জন্য অনিবার্য।

পাশাপাশি রহমত, মাগফিরাত ও ফযীলতের সর্বাধিক ও সর্বোচ্চ প্রাচুর্যের কারণ। সুবহানাল্লাহ! মহিমান্বিত ২ যিলহজ্জ শরীফ। যা ইবনু রসূলিল্লাহ, আশবাহুল খলক্বি বিরসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুল বাশার, সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, আল মুবাশ্শির, আল আবাররু, আল আজওয়াদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক প্রকাশ করার সুমহান দিবস।

ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি ৮ম হিজরী সনের পবিত্র ২ যিলহজ্জ শরীফ লাইলাতুল জুমুয়াহ তথা জুমুয়াবার রাতে দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারক অনুযায়ী তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলো ৬১ বছর। সুবহানাল্লাহ!

ইবনু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার সবচেয়ে বড় পরিচয় মুবারক হচ্ছেন, তিনি হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার, মহাসম্মানিত আবনা (ছেলে) আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আবনা (ছেলে) আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে তিনি হচ্ছেন- রাবি’ তথা চতুর্থ। তাই উনাকে ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম বলা হয়। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন- সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।

সম্মানিত লক্বব মুবারক হচ্ছেন- ইবনু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুল বাশার, সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, আল মুবাশ্শির, আল আবাররু, আল আজওয়াদ। এছাড়াও উনার আরো অসংখ্য-অগণিত সম্মানিত লক্বব মুবারক রয়েছেন। তবে তিনি “ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম”- এই সম্মানিত লক্বব মুবারক-এ সম্মানিত পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন ঈমান। সুবহানাল্লাহ! দুঃখজনক হলেও সত্য যে, উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার দিবস ও উনার বেমিছাল শান-মান মুবারক, মর্যাদা মুবারক, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহ চরম বেখবর। অথচ উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সুমহান দিবসে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আলাদাভাবে রহমত মুবারক, বরকত মুবারক, সাকীনা মুবারক ও ইহসান মুবারক যমীনে নাযিল করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গত, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তারকারাজি হচ্ছে আসমানের নিরাপত্তাদানকারী আর সম্মানিত হযরত আহলু বাইতে রসূলগণ উনারা হচ্ছেন যমীনবাসীদের জন্য নিরাপত্তা দানকারী।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

কিন্তু সরকার অথবা জনগণ তথা সাধারণ মুসলমানগণ এসব বিষয় উপলব্ধি না করার কারণেই আজ ওৎপ্রোতভাবে বিবিধ খোদায়ী আযাব-গযবে ভারাক্রান্ত।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে ও পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা হয়েছে। একই সাথে তীব্র তাপদহ রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না- এর থেকে রক্ষা পেতে হলে ইবনু রসূলিল্লাহ, আশবাহুল খলক্বি বিরসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুল বাশার, সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, আল মুবাশ্শির, আল আবাররু, আল আজওয়াদ সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানার্থে খুব সহজেই এ গযব থেকে রক্ষা পেতে পারে। কিন্তু চরম পরিতাপ, গভীর দুঃখ ও আফসুসের বিষয় যে- ইবনু রসূলিল্লাহ, আশবাহুল খলক্বি বিরসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুল বাশার, সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, আল মুবাশ্শির, আল আবাররু, আল আজওয়াদ সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার কোনো স্মরণ বা শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি না আমরা।

৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত ও রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র ইসলাম উনার দেশ- বাংলাদেশ সরকারও কিছু করছে না। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা যারা আমার নিয়ামত মুবারক উনার শুকরিয়া আদায় করবে না, জেনে রাখো- আমার আযাব অনেক কঠিন।”

মূলত এ পবিত্র ইসলামী অনুভূতি তখনই আসবে, যখন ইবনু রসূলিল্লাহ, আশবাহুল খলক্বি বিরসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুল বাশার, সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, আল মুবাশ্শির, সাইয়্যিদুনা হযরত রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার মূল্যায়নের জজবা জাগ্রত হবে। এলক্ষ্যে উনার মহান নাম মুবারক-এ ও মহান শান মুবারক-এ সারা দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ও অগণিত রিসার্চ সেন্টার গড়তে হবে। উনার সুমহান শান মুবারক-এ ইলম অর্জনকারী, বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণকারী, মুহব্বতকারী উনাদের মূল্যায়ন করতে হবে। উনার বিশুদ্ধ সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (জীবনী মুবারক) সরকারিভাবে বিনামূল্যে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। উনার সম্পর্কে শিক্ষাঙ্গনের সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক সিলেবাস করতে হবে। উনার সম্পর্কে পবিত্র ইলম, আক্বীদা ও মুহব্বত অর্জন ব্যতিরেকে কাউকে চাকরি-ব্যবসার সুযোগ দেয়া চলবে না।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছেন তার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। আর আমাকে মুহব্বত করো মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য। আর আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য।”

লেখক: গবেষক, লেখক, শিক্ষক