টাই খ্রিস্টান ধর্মের প্রতীক

রাহাতুল আলম কাদরী: টাই খ্রিষ্টধর্মের ড্রেসকোডের একটি অংশ। টাই-এর ইতিহাস না জানার কারণে অনেক মুসলমান এটা পোশাকের অংশ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। অনেকে এমনটা প্রচারও করে যে, টাই একটি সাধারণ পোশাকের অংশমাত্র, এটা খ্রিস্টানদের পোশাক নয়। অনেকে এমনও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে থাকে যে, বাইবেলের কোথাও টাই খ্রিস্টানদের পোশাক বলা নেই।

হ্যা কথা সত্যি। থাকবে কি করে বাইবেল নাযিল হয়েছে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার উপর। তখন তো খ্রিস্টান ধর্ম পয়দা হয়নি। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম দুনিয়া থেকে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার পর উনার অনুসারিরা বিশ্বাস করতে লাগলো তাদের নবীকে শুলে চড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা তাদের নবীকে স্মরণ রাখার জন্য ক্রুশকে টাইয়ের ছুরতে নিদর্শন বা সম্মানের প্রতীক হিসেবে গলায় ব্যবহার করতে থাকে। কিন্তু যারা মুসলমান, তারা বিশ্বাস করেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে আকাশে তুলে নিয়েছেন। এটা পবিত্র কোরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত।

আল্লাহ সুবহানু তায়ালা সূরা আন নিসায় ইরশাদ করেন, “তারা ক্বতলও করেনি বা ক্রুশে বিদ্ধও করেনি, বরং সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।” অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন, “তারা অবশ্যই ক্বতল করেনি, বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে তুলে নিয়েছেন।”

হাদীস পাকের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে আকাশে তুলে নিয়েছেন এবং ক্বিয়ামতের পূর্বে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাকে খিলাফতের কাজে সাহায্য করার জন্যে ও দজ্জালকে হত্যা করা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি উম্মত হিসেবে উনাকে প্রেরণ করবেন।
কাজেই খিস্টানদের বিশ্বাস শুদ্ধ নয়।
সূতরাং কোরআন ও হাদীস মোতাবেক টাই ব্যবহার ইসলামের পরিপন্থী এবং বিজাতীয় পোশাক। কাজেই এটা ব্যবহার করা হারাম এবং ব্যবহারকারী কবীরাহ গুনাহে গুনাহগার হবে।
টাই এর ইতিহাস:

ক্রুশের চিহ্নরুপে টাই বা নেকটাই ধর্মীয় পরিচয় হিসেবে যুগ যুগ ধরে খৃষ্টানদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ বিষয়। ১৮৯৮ সালের পূর্বে প্রিন্ট দেয়া একটি এনসাইক্লোপিডিয়া একটি পৃষ্ঠায় বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়। উক্ত আলোকচিত্রের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, টাই বা নেকটাই’ খ্রিষ্টীয় জাতিসত্ত্বার পরিচয় বহনকারী ক্রুশের চিহ্ন।

এরই ধারাবাহিকতায় ষোড়শ শতাব্দীর কিছু আগে ক্রুশের চিহ্ন টাইকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দিয়ে চীন ও রোমান সেনাদের সামরিক ইউনিফর্মএ অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়। তেমনিভাবে ১৬১৮ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্য বিজয়ের পর ক্রোয়েশিয়ান সামরিক ফ্রন্টিয়ার প্যারিস পরিদর্শনে রাজা লুই চতুর্দশের সামনে ক্রুশের স্মারক চিহ্ন টাই পর নিজেদেরকে উপস্থাপন করেন।

অন্য একটি রিপোর্টে দেখা যায়, ১৭৯০ সালে পোপ সকল খ্রিস্টানকে ক্রুশের প্রতীক হিসেবে নেকটাই পরিধান করার জন্য জোর দেয়। ১৮৫০ সালের মধ্যে সকল খ্রিস্টান জাতি বিষয়টি গ্রহণ করে এবং পোপের আদেশ জারি করে দেয়।

টাই খিস্টানদের ক্রসের প্রতীক-এর দলিল
নেকটাই যে ক্রুশের প্রতীক তার দলিল কপি

বিখ্যাত মুসলিম লেখক কুরাইশি সাবেরি উপরের ঐতিহসিক ডকুমেন্টটি প্রকাশ করেন। উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইউরোপীয়রা তাদের ডিকশেনারী ও এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে প্রাথমিক যে সকল বিষয় (খ্রিষ্টীয় জাতিসত্ত্বার পরিচয় বহন করে এমন) বাদ দিয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘নেকটাই যে ক্রুশের প্রতীক’ তার দলিল।

লেখক: গবেষক