হাইকোর্ট বেঞ্চের এখতিয়ার বহির্ভূত কাণ্ডে নানা গুঞ্জন

ঢাকা: এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে একাধিক আসামিকে জামিন দিয়ে আলোচনায় এসেছেন হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও কাজী ইজহারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত এই বেঞ্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় দুই আসামিকে জামিন দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতপাড়ায় আইনজীবীদের মধ্যে নানা গুঞ্জন চলছে।

সুপ্রিমকোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শুরু আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটলো।
এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এখতিয়ার নেই এমন আদালত আসামিকে কোনোভাবেই জামিন দিতে পারেন না।

অবশ্য দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ বাতিল করেছেন। আসামিদের এ মামলায় বিচারিক আদালতে আত্মসমপর্ণের নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

দুর্নীতি মামলা শুনানির জন্য হাইকোর্টে তিনটি বেঞ্চের এখতিয়ার নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। বেঞ্চ তিনটি হলো- বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেন; বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি মো. সেলিম; বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।

হাইকোর্ট বিভাগের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজহারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের এখতিয়ারে বলা হয়েছে- ডিভিশন বেঞ্চে বসবেন এবং ডিভিশন বেঞ্চে গ্রহণযোগ্য ফৌজদারি মোশন, ফৌজদারি আপিল মঞ্জুরির আবেদনপত্র এবং তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদনপত্র; ফৌজদারি মঞ্জুরিকৃত আপিল শুনানি; ফৌজদারি রিভিশন এবং ফৌজদারি বিবিধ মোকদ্দমাসমূহ এবং উপরোল্লিখিত বিষয়াদি সংক্রান্ত রুল ও আবেদনপত্র গ্রহণ এবং শুনানি করবেন।

এখানে দুদকের মামলা শুনানির জন্য কোনো ধরনের এখতিয়ারের কথা উল্লেখ নেই। তারপরেও তারা দুদকের মামলা শুনানি করে বেসিক ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে পর পর জামিন দিয়েছেন।

এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে শুনানি করায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, হাইকোর্টের কোন বেঞ্চ কোন মামলা শুনানি করবে তা সুনির্দিষ্টভাবে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে অন্য মামলার শুনানি করা উচিত নয়।

হাইকোর্টের ওই ডিভিশন বেঞ্চটি গত ২৯ এপ্রিল বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলার আসামি ফারশি ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফাইজুন নবী চৌধুরীকে জামিন দেন। আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে, গত ১৬ জুন ফাইজুন নবীকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমপর্ণের নির্দেশ দেন আদালত। এ সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে বিচারিক আদালতকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

৫৫ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের হওয়া দুইটি মামলায় গত ২৮ মার্চ গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হন ওই আসামি।

এরপর গত ১৩ জুন একই বেঞ্চ বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের দায়ের করা পাঁচ মামলার আসামি শেখ হাসিবুল গনি গালিবকে জামিন দেন। এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধেও দুদক আপিল করেছে। আগামী ১০ জুলাই চেম্বার আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।