এক নজরে গুলশান হামলার শুরু থেকে শেষ

নিউজ নাইন২৪ ডেস্ক: গুলশানে গত শুক্রবার (১ জুলাই) রাত ৮:৪৫ মিনিটে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা ঘটে সময়ের ধারাবাহিকতায় তার বর্ননা দেয়া হলো।

১. শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে ২০ থেকে ২৮ বছর বয়সী আট থেকে নয়জন অস্ত্রধারী গুলশানের কূটনৈতিক এলাকার হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় গোলাগুলি শুরু করে।

২. রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত এবং ৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তি আহত হয়।

৩. রাত ১:৩০ এর দিকে জঙ্গিদের অনলাইন-ভিত্তিক কর্মকান্ড তদারককারী মার্কিন সংস্থা সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপ গতানুগতিক ধারায় এক টুইট বার্তায় দাবি করে যে, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। উল্লেখ্য, আইএস’র দায়স্বীকারোক্তি নাটকের অভিজ্ঞতার আলোকে নিউজ নাইন২৪ডটকম’এ একটি মতামত প্রকাশ হয় ‘এবারও কি আইএস দায় স্বীকার করবে?’ শিরোনামে। প্রকাশের প্রায় এক ঘন্টা পরই কথিত আইএস-এর দায় স্বীকার করার খবর প্রকাশ করে সাইট।

৪. শনিবার সকাল ৭:৩০টার দিকে জিম্মিদের উদ্ধারে যৌথ কমান্ডো অভিযান শুরু হয়। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সোয়াত সদস্যদের নিয়ে এই কমান্ডো অভিযান চালানো হয়।

৫. সকাল সোয়া আটটার দিকে কমান্ডোরা পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এতে তারা সময় নেয় মাত্র ৪৫ মিনিট। বেলা ১১টার দিকে যৌথ কমান্ডো অভিযান শেষ করা হয়। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক কর্নেল রাশিদুল হাসান জানান, অভিযান শেষ হয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে।

শ্বাসরূদ্ধকর চৌদ্দ ঘন্টায় কী কী ঘটেছিল-
রাত ৮:৪৫ : ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ৮-৯ জন বন্দুকধারী সন্ত্রাসী ঢাকার গুলশান এলাকার স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করে।

রাত ১০:৩০: একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং গোলাগুলি শুরু হয়। এতে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন এবং ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়।

রাত ১০:৩০: বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন ও পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করা হয়। জিম্মিকারী সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের সময় তাঁরা গুলিবিদ্ধ হন।

রাত ১০:৩৪: জিম্মি পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জন কিরবি ঢাকার ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। কিরবি বলেন, ‘দূতাবাসের পক্ষে কাজ করা সব মার্কিন নাগরিকের দায়িত্ব আমাদের। কোনো মার্কিন নাগরিক এবং স্থানীয় কোনো কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কি না, তা নির্ধারণ করতে আমরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছি।’

রাত ১১:৩০: র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ গণমাধ্যমকে ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধের আহ্বান জানান।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১:৩০: মার্কিনভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ একটি টুইট পোস্ট করে যাতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হয়।

শনিবার ভোর ৪:০০: পুলিশ এক তরুণকে আটক করে। গ্রেপ্তার এড়াতে পালানোর সময় তাঁর পায়ে গুলি করে পুলিশ।
ভোর ৪:২০: ইতালির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, ঢাকার রেস্তোরাঁয় বন্দুকধারীদের হাতে জিম্মিদের মধ্যে ইতালির সাতজন নাগরিক আছেন। ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, ঘটনাস্থল থেকে একজন ইতালিয় জিম্মি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। দেশটির গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, পালিয়ে আসা ইতালিয় পুলিশকে জানিয়েছেন, ভেতরে আরও সাতজন ইতালিয় আটকে আছেন।

শনিবার ভোর ৫.০০: আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হন। যৌথ বাহিনীতে ছিল- সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), নৌবাহিনীর কমান্ডো এবং বিশেষ বাহিনী সোয়াত।

শনিবার সকাল ৭.০০: সেনাবাহিনীর কমান্ডো ফোর্সকে জিম্মি এলাকায় মোতায়েন করা হয়।

শনিবার সকাল ৭:৩০: যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে।

শনিবার সকাল ৭:৪০: যৌথ অভিযানের প্রথম ১০ মিনিটে পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়।

শনিবার সকাল ৮:১৫: যৌথ বাহিনী ৪৫ মিনিটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সূত্র: গণমাধ্যম