শিগগিরই গ্রেপ্তার মেজর জিয়া, নজরবন্দি অর্ধশতাধিক জঙ্গি

ঢাকা: সাতদিনের ব্যবধানে ভয়াবহ দু’টি জঙ্গি হামলায় নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনি। এবার জঙ্গিদের সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্যে আটঘাট বেঁধে নামছেন তারা। ইতিমধ্যে এসব হামলার সমন্বয়কারী থেকে শুরু করে নির্দেশদাতা পর্যায়ের অর্ধশতাধিক জঙ্গি নেতা ও সদস্যদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতাকর্মী। তবে এখনই এদের আটক বা গ্রেপ্তার দেখানোর পরিকল্পনা নেই। পুরো চক্রকে ধরার আগে এ বিষয়ে মুখ না খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এখনই নজরবন্দিতে থাকা নেতাকর্মীদের নাম প্রকাশ করলে, এদের অর্থদাতা থেকে শুরু করে অনান্য সহযোগীরা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই পুরো চক্রটিকে ধরে গোড়া থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলের পরিকল্পনা করছে সরকার।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এরই মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি), জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ পর্যায়ের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে  নজরবন্দি করে রেখেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ মাসেই গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে এবিটি সামরিক শাখার কমান্ডার মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হককে। ২০১২ সালের সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার অন্যতম পরিকল্পনাকারী তিনি। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনায় তিনিসহ অন্তত চার শীর্ষ সমন্বয়ককে শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে। বাকিরা হলেন- জেএমবির কিলিং মিশনের স্বমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন ওরফে আকাশ, বাইক হাসান ওরফে নজরুল, মামা খালেক এবং বিজয়।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি মাসে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টায় চাকরি হারান মেজর জিয়া। এই ঘটনার পেছনে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে ধারণা করা হয়।

পুলিশের ভাষ্যমতো, চাকরি হারানোর পর থেকেই তিনি এবিটির সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব নেন। সামরিক প্রশিক্ষণ দেন দু’শতাধিক সদস্যকে। পরবর্তীতে এই প্রশিক্ষিত সদস্যদের মাধ্যমে নাস্তিক, ব্লগার ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের হত্যার টার্গেট সেট করে কিলিং মিশন পরিচালনা করেন- এমন তথ্যও রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।

সবশেষ ১৯ ফেব্রুয়ারি বাড্ডার সাতারকুলের একটি বাসায় এবিটি সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়ার সময় জিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় ডিবির সাথে এবিটি সদস্যদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সেখানে ডিবি দক্ষিণ বিভাগের ইন্সপেক্টর বাহউদ্দিন ফারুকী গুরুতর আহত হোন। তবে জিয়া আগেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হোন।

কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার সময় হাতেনাতে আটক হোন জেএমবি সদস্য শফিউল। তিনি উত্তরবঙ্গের চারটি হত্যা মামলার আসামি। র‌্যাব হেফাজতে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দু’জন বড়ভাইয়ের ব্যাপারে তিনি তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া ‘অপারেশন শোলাকিয়া’য় অংশ নেয়া জঙ্গিদের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন জেএমবি সদস্য জয়নাল আবেদীন ওরফে আকাশ। তিনিই হামলার আগে তাদের জন্য ওই এলাকায় বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা করে রাখেন। আকাশসহ বাইক হাসান, মামা খালেক এবং বিজয়কে চলতি সপ্তাহেই আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র।