ফ্লাইওভার: সমাধান নয়, যানজট হয়েছে আরো প্রকট

ঢাকা: রাজধানীতে যানজট সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান হবে এমন স্বপ্ন বাস্তবায়নে লক্ষ্যে রাজধানীর বুক চিড়ে নির্মিত হয়েছে একাধিক ফ্লাইওভার। যা রাস্তার যানজট কমিয়ে যানবাহনকে দ্রুত গতিতে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে সহায়তা করার কথা। ঢাকায় এমন ফ্লাইওভারের সংখ্যান বর্তমানে ৬টি। আরো কিছু ‘ফ্লাইওভার স্বপ্ন’ বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।

কিন্তু এই ফ্লাইওভার বাস্তবতায় নগরবাসীর কতটুকু কাজে আসছে? কিংবা যানজট সমস্যা সমাধানে কতুটকু কার্যকরী ভূমিকা রাখছে? এ ব্যাপারে নগরবাসীর অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়।

নগরবাসীর অভিযোগ, দ্রুত যেতে সহায়তা তো দূরে থাক, বরং নগরীর রাস্তায় এখন দেখা দিয়েছে দোতলা যানজট। বিশ্লেষকরা এর জন্য দায়ী করছেন ভুল বা অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও ফ্লাইওভার নির্মাণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে। সরকার বলছে, নতুন সমস্যা সমাধানে ঢাকায় সমন্বিত ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখ দখল করে আছে বাম লেনের গাড়ি। তাই উপরে ফাঁকা থাকলেও যানবাহনগুলোকে উঠতে হচ্ছে ধীরগতিতে। কিছু সময় গাড়ি চললেও ফ্লাইওভারের মাঝখান থেকেই শুরু হয় দীর্ঘ যানজটের। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা বনানী থেকে মহাখালী ফ্লাইওভারের প্রতিদিনকার চিত্র এটি।

সাতরাস্তা মগবাজার ফ্লাইওভার কিংবা বিজয় সরণী ওভারপাসের অবস্থা আরো ভয়াবহ। নগরবাসীর সুবিধার্থে এসব করা হলেও ভুক্তভোগীরা বলছেন, অপরিকল্পিত ফ্লাইওভারের কারণে রাস্তার যানজট টেনে তোলা হয়েছে আকাশে। ফ্লাইওভার থেকে নামার পরই একাধিক মোড় থাকায় যানজট আরো বেশী হচ্ছে বলে দাবি তাদের।

বিশ্লেষকদের বক্তব্য, আলাদা আলাদা পাঁচটি সেবাদানকারী সংস্থার মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলো। ফলে একটির সাথে আরেকটির কোন সমন্বয় না থাকায় এর সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। এছাড়া ফ্লাইওভারগুলো প্রয়োজনের তুলনায় আকারে ছোট হওয়ায় যানজট দুই স্তরে পৌঁছেছে বলেও মনে করেন তারা।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘প্রতিটা ফ্লাইওভার এক একটা পুলসিরাতে পরিণত হয়েছে। এগুলোকে যদি সংযোজন করা যায় এবং এক অংশ থেকে আর এক অংশ নিরবিচ্ছিন্ন করা যায় তবেই আমরা এর সুফল পেতে পারবো।

সমস্যা সমাধানে ঢাকাকে কেন্দ্র করে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকাকে সংযুক্ত করে ঢাকায় সমন্বিত কয়েকটি ফ্লাইওভারের কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিটিসিএ।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা হলো একটা ফ্লাইওভার ঢাকার ভেতর দিয়ে উঠে ঢাকার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে।’

রাজধানী ঢাকার যানজট সমাধানের স্থায়ী ব্যবস্থা কি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্লেষক নগর প্রকল্পবিদ প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক হাসান বলেন, আসলে ফ্লাইওভার দিয়ে রাজধানীর যানজট কখনোই দূর হবে না, একথাটি আমি আগেও বলেছিলাম এখনও বলছি। ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে হলে সিটিকে ডিসেন্ট্রালাইজ (বিকেন্দ্রীকরণ) করার বিকল্প নেই। মোট কথা  ঢাকার অফিস আদালত, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, গার্মেন্টস সহ শিল্প কারখানা এসব রাজধানী থেকে সরিয়ে বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যেতে হবে। প্রতিটা জেলা শহরকে ঢাকার মতো উন্নত সুযোগ সুবিধা স্ট্যান্ডার্ড লিভিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারলে ঢাকা থেকে নদীর ভাটার   মতো  মানুষ সরে যাবে।

নগর বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া রাজধানীর যানজট কমানোর আর কোন সমাধান নেই বলে মনে করেন তিনি।