নিহত রোহান সম্পর্কে যা বললেন তার বাবা ইমতিয়াজ খান বাবুল

ডেস্ক: শুক্রবার রাতে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারী হামলাকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ। রোহান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-মহাসচিব এস এম ইমতিয়াজ খানের ছেলে। ঢাকার স্কলাসটিকা স্কুলের সাবেক ছাত্র ছিলেন রোহান।

আক্রমণকারীদের ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পরই ঢাকার ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ খান বাবুল প্রথম জানতে পারেন যে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে তার ছেলে রোহান– যে ছয় মাস আগে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমতিয়াজ খান বাবুল রোহান সম্পর্কে  যা বললেন-
‘শুক্রবার আমার বড় ভাই মারা যান। তার কুলখানি নিয়ে পারিবারিক কথাবার্তার মধ্যেই শনিবার আমাকে একজন ফোন করে জানালেন, গুলশানের হোলি আর্টিজানে আক্রমণের পর আইএসের ওয়েবসাইটে যে ছবি দেয়া হয়েছে তাতে আপনার ছেলের ছবি এসেছে। শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। দৌড়ে বাড়িতে আসলাম।’

‘ফেসবুকে দেখলাম, কনফার্ম হলাম : পাঁচজনের যে ছবি দিয়েছে তাতে আমার ছেলের ছবি আছে।’

গুলশানে ক্যাফেতে আক্রমণের পর দিন সকালে চালানো সেনা অভিযানে আক্রমণকারীদের পাঁচ জন নিহত হয়, একজন আহত অবস্থায় ধরা পড়ে।

‘আমার ছেলে রোহান গত ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ থেকে নিখোঁজ। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী চিকিৎসার জন্য কোলকাতায় ছিলাম। ত্রিশ তারিখ রাতে ওর দুই বোন একটি দাওয়াত থেকে ফিরে এসে দেখতে পায়, রোহান বাড়িতে নেই।’

‘দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতে সে বললো, সন্ধ্যেবেলা কলেজে যাবার ব্যাগ নিয়ে সে বেরিয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করাতে সে বলেছিল, ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে। এ খবর শোনার পর আমি এক তারিখ ঢাকা ফিরে আসি।’

‘আমার যত আত্মীয়স্বজন, ওর বন্ধুবান্ধবদের যে কয়েকজনকে চিনতাম তাদের কাছে খোঁজখবর নিলাম, ও কোথাও নেই। এর পর আমি থানায় একটা জিডি করলাম। তারপর আমি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করলাম, কথা বললাম। আইজিপি, র‌্যাব, যেখানে যত সোর্স আছে সবার সাথে কথা বললাম, খুঁজলাম, ছবি দিলাম। কিন্তু ওর কোনো খোঁজই আমরা পাইনি। ও কোথায় গেছে কোনো তথ্য নেই, কোনো যোগাযোগ নেই। অনেক চেষ্টা করেছি, অনেক খুঁজেছি।’

‘ও আমার একমাত্র ছেলে। বাবা হিসেবে যা করার সবই চেষ্টা করেছি। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমি অন্তত চার বার গেছি। উনিও অনেক চেষ্টা করেছেন। কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।’

‘ওর পাসপোর্ট ছিল কিন্তু তাতে কোনো দেশেরই ভিসা করা ছিল না। ওই পাসপোর্ট তার কাছেই ছিল। কিন্তু ওই পাসপোর্ট নিয়ে সে যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারে – ইমিগ্রেশনকে বলে আমি সে ব্যবস্থাও করেছিলাম।’

কট্টরপন্থী ইসলামের দিকে যে রোহান ঝুঁকে পড়েছে – এমন কোন সন্দেহ কি তার হয়েছিল?

‘আমার ছেলে ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। ওর নানার সাথে মসজিদে যাওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু অন্য ধরণের কোনো কিছু আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। বাসায় কোনো বইটই বা ওই জাতীয় কিছু কখনো ছিল না। আমাদের নজরে আসেনি।’

‘আমার ছেলে যখন এ লেভেলে – সে পর্যন্ত তার দিকে বেশি খেয়াল রাখতাম। কিন্তু ইউনিভার্সিটিতে ওঠার পর কি আর ওইভাবে খেয়াল রাখা যায়? তবে ওর রুমে আমরা মাঝেমধ্যে যেতাম, দেখতাম। কোনো কিছু নজরে পড়েনি।’

তাহলে কিভাবে এটা হলো? রোহানের বাবা বলছেন, তিনি ভেবে কোনো কুলকিনারা করতে পারছেন না।

‘কুলকিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা এতই হতভম্ব, এত দুঃখজনক, লজ্জাজনক একটা ঘটনা। কি বলবো। পুলিশের কর্মকর্তা শেখ মারুফ সাহেব ওর সন্ধান পাবার চেষ্টায় অনেক সাহায্য করেছিলেন। আর এই ঘটনায় তিনিই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। এটা যে কত লজ্জাজনক, তা আমি বোঝাতে পারছি না।’

আমি ব্যবসার কাজে ব্যস্ত, ওর মাও টিচার, সে-ও ব্যস্ত থাকে। এই কারণে হয়তো হতে পারে যে আমরা নজর দিতে পারিনি। কিন্তু তখন তো তা বুঝি নি। কারো সাথে তার কোনো ঝগড়া কথাকাটাকাটি হয়নি । সে লেখাপড়া করছে, ভালো রেজাল্ট করছে, টিচাররা আমাদের কনগ্রাচুলেট করছে, আমরা ভাবছি সব ঠিকই আছে। বুঝতেই পারছি না কিভাবে কি হলো।’

‘তবে একটা কথা বলি। আমার ছেলের সন্ধা্ন করতে গিয়ে আমি দেখতে পেলাম যে এরকম অনেক ছেলেই নিখোঁজ হয়ে আছে। অনেক ভালো ভালো ছেলে। এডুকেটেড ফ্যামিলির ছেলে, অফিসারের ছেলে, সরকারি কর্মকর্তার ছেলে নিখোঁজ। তারাও খুঁজে পাচ্ছে না। এরকম কয়েকজনকেই আমি চিনি। তাদের সাথে আমি আমার কষ্টের কথা শেয়ার করতাম।’

তাহলে কেন কিভাবে এমনটা হলো?

‘আমরা বুঝে উঠতে পারছি না। হয়তো ইন্টারনেট থেকে হতে পারে, কিন্তু আমি জানি না কিভাবে হয়েছে। অনুমান করতে পারি। ইন্টারনেট ছাড়া আর কিছু তো আমার মাথায় আসছে না। কিন্তু আমরা তো চোখে দেখিনি কিছু।’