বগুড়ায় নকল দুধের কারখানায় অভিযান, আটক ৩

লকডাউনে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে দুধ, লিটার ২৫ টাকা

বগুড়া: বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শিহিপুর মধ্যপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে নকল দুধের কারখানায় অভিযান চালিয়েছে বগুড়া ডিবি পুলিশ। শনিবার দিবাগত মধ্যরাতের ওই অভিযানে নকল দুধ তৈরিতে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। তিন জনকে আটকও করেছে পুলিশ। আজ রবিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ওই অভিযানের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন বগুড়া পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।

নকল দুধের কারখানা থেকে আটক তিনজন হলেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাকুল্যা ঘোষপাড়ার অশ্বিনী ঘোষের ছেলে সজিব কুমার ঘোষ (২২), পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়া গ্রামের অজিত ঘোষের ছেলে সরজিত ঘোষ (২০) ও একই উপজেলার পাঁচুরিয়া পশ্চিমপাড়ার মনতাজ মল্লিকের ছেলে আবদুল হান্নান (২০)। সোনাতলা থানায় এই তিন জন ছাড়াও বাড়ি ও কারখানা মালিককে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম। আটক তিন জনের প্রত্যেকের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, আটক ব্যক্তিরা সোনাতলার শিহিপুর মধ্যপাড়া গ্রামের আলহাজ্ব আবদুল মান্নানের বাড়িতে গত দেড় বছর ধরে নকল দুধ তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল। বাজার থেকে অল্প পরিমাণ দুধ কিনে এর সাথে পানি ও মিল্ক পাউডারসহ নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে নকল দুধ তৈরি করত তারা। এই নকল দুধের বড় একটি অংশ বিক্রি করা হতো ব্র্যাকের দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্রে। বাকি দুধ সরবরাহ করা হতো হোটেলে মিস্টি, দই তৈরি ও দুধ চা বিক্রির জন্য।

আসাদুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে ডিবি পুলিশের একটি চৌকস দল গোপনে শনিবার গভীর রাতে ওই বাড়িতে অভিযান চালান। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির মালিক মান্নান ও কারখানার মালিক সনজিত ঘোষ পালিয়ে যান। এ সময় আটক করা হয় সনজিতের ছোট ভাই সরজিত ঘোষ, কর্মচারী সজিব ও গাড়ি চালক হান্নানকে। অভিযানে নকল দুধ তৈরির বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়াও বেশকিছু কন্টেইনার ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করে পুলিশ।
নকল এই দুধ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নিয়মিত এই দুধ খেলে ক্যান্সারও হতে পারে। তাছাড়া শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এবং মেধা বিকাশের অন্তরায় হতে পারে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এ তথ্যও জানান বগুড়া পুলিশ সুপার।

আটক সরজিত ঘোষ বলেছে, ‘বড় ভাই সনজিত ঘোষের সহযোগিতায় পাবনা থেকে নকল দুধ তৈরি করা শিখেছি। আমরা সোনাতলার বিভিন্ন গ্রামের গৃহস্থের বাড়ি থেকে দুধ কিনে আনতাম। এরপর এতে নানা ধরনের রাসায়নিক দ্র্যবাদি মিশিয়ে আসল দুধের ফ্লেভার আনার জন্য প্রক্রিয়াজাত করতাম। ছয়-সাত মাস আগে আমরা নকল দুধের এই কারখানা স্থাপন করি।’ প্রতিদিন উৎপাদিত দুধের মধ্যে তিনশ লিটার ব্র্যাক দুধ ক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করা হতো বলে জানান তিনি।

ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আটক তিন জন ছাড়াও বাড়ির মালিক ও কারখানার মালিক সনজিদ ঘোষকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। আটক তিন জনকে আজ (রবিবার) বিকালে আদালতে হাজির করে সাতদিন করে রিমান্ড চেয়েছি। শুনানি শেষে আদালত সিদ্ধান্ত জানাবেন। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’