মেয়াদোত্তীর্ণ ভারতীয় পণ্যে সয়লাব সীমান্ত হাট

ফেনী: সীমান্ত অভিমুখে শত শত মানুষের স্রোত। সবার গন্তব্য ফেনীর ছাগলনাইয়ার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে বসা মোকামিয়া সীমান্ত হাট। মানুষের ভিড় হলেও কোনও বিশৃঙ্খলা নেই। লাইন ধরে টিকিট কেটে সবাই যাচ্ছেন সীমান্ত হাটে। স্থানীয়দের কাছে এ হাট খুবই জনপ্রিয় হলেও নানা অভিযোগও রয়েছে। হাটে বিক্রি নিষিদ্ধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ভারতীয় পণ্যে সয়লাব। পণ্যের মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। সম্প্রতি এ হাট সরজমিনে ঘুরে এসব অভিযোগ পাওয়া যায়।

প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার মোকামিয়া সীমান্তে এ হাট বসে। হাটে দুদেশের হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়।

গত বছর ২৭ ডিসেম্বর সরজমিনে মোকামিয়া সীমান্ত হাট ঘুরে দেখেন এ প্রতিবেদকদ্বয়। দেখা গেছে, হাটকে ঘিরে ভারতীয়দের চেয়ে বাংলাদেশিদের আগ্রহ বেশি। মসলা, কসমেটিকস, দুধ, হরলিকস ও ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যের প্রতিই আগ্রহ বেশি বাংলাদেশিদের। এ আগ্রহকে পুঁজি করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা হাটে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও বিক্রি করছেন।

বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত হাটে প্রবেশের ফটকের পাশেই একটি নির্দেশনা চোখে পড়ে। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘নিম্নলিখিত দ্রব্য সামগ্রী সীমান্ত হাটে ক্রয়-বিক্রয় আইনত অপরাধ। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে, সব ধরনের ইলেক্ট্রিক পণ্য, আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্য, প্যাকেটজাত মসলা, হরলিকস, তেল, কসমেটিকস, বিদেশি ক্রিম, পাউডার, চা পাতা ও গুড়া দুধ ইত্যাদি।’ অথচ সীমান্ত হাটে এসব পণ্যই কেনাবেচা হয় সবচেয়ে বেশি।

ভারতের দিক দিয়ে সীমান্ত হাটে প্রবেশ মুখে ত্রিপুরা সরকারের খাদ্য, জনসংভরণ ও ভোক্তা বিষয়ক দফতরের একটি নির্দেশনা রয়েছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘পণ্যের সুরক্ষা ও গুণমানের জন্য ইলেক্ট্রনিকস ও ইলেক্ট্রিক্যাল দ্রব্যের ক্ষেত্রে যথা সম্ভব আইএসআই মার্ক, স্বর্ণ ও মূল্যবান রতেœর ক্ষেত্রে হলমার্ক এবং খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে আগমার্ক (উৎপাদনের তারিখ) যুক্ত দ্রব্য ক্রয় করবেন।’ এছাড়া ভোক্তা সুরক্ষা ও সচেতনতার জন্য রয়েছে আরও বেশ কিছু নির্দেশনা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিমেন্টের পিলারের সঙ্গে কাঁটাতার দিয়ে সীমান্ত হাটের চারদিক ঘেরাও করে দেয়া হয়েছে। হাটে প্রবেশের জন্য দুটি গেট রয়েছে। একটি ভারতের দিকে ও অন্যটি বাংলাদেশের দিকে। দুদেশের তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ২৭টি করে ৫৪টি দোকান বরাদ্দ থাকলেও হাটে বেচাকেনা করছেন আরও বেশি ব্যবসায়ী। সকাল ৯টা-বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলে এ হাট। প্রতি হাটেই কয়েক হাজার লোকের সমাগম ঘটে। ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি এ সীমান্ত হাট চালু করা হয়।

ছাগলনাইয়া বাজারের ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিনের অভিযোগ, ‘সীমান্ত হাট একটি অসম বাজার। এ হাটের কারণে ছাগলনাইয়া বাজারের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নিম্নমানের গুড়া দুধ, কসমেটিকস ও চা পাতাসহ যেসব ভারতীয় পণ্য বিক্রি হয়, বিশেষ করে কসমেটিকসের বেচাকেনা একেবারেই মন্দা। অসচেতনতার কারণে সাধারণ মানুষ সীমান্ত হাটের নিম্নমানের পণ্য কিনে নিয়ে ঠকছেন।’

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা জানান, ‘সীমান্ত এলাকায় ২১টি হাট বসার অনুমোদন থাকলেও বর্তমানে মোকামিয়ার তাকিয়া মাজারের সীমান্ত হাটসহ চারটি হাট চালু রয়েছে। আরও ১৭টি হাট দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।