দুদকে অভিযোগ জানাতে আসছে হটলাইন

ঢাকা: দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ সরাসরি নিতে একটি হটলাইন চালু করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থাটি আশা করছে, আগামী মার্চেই ১০৬ নম্বরে ফোন করে ভুক্তভোগীরা বিনা খরচে তাদের অভিযোগ আর সমস্যার কথা দুদককে জানাতে পারবেন।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ইতোমধ্যে দুদকের জন্য ওই হটলাইনের নম্বর বরাদ্দ দিয়েছে। হটলাইন চালু হওয়ার পর দুদক কর্মীরা ফোনে অভিযোগের কথা শুনবেন। সেই অভিযোগ দুদকের তদন্তের আওতায় থাকলে তা রেকর্ড করে কমিশনের যাচাই-বাছাই কমিটিতে তুলে ধরা হবে। কীভাবে কাজটি হবে, তা ঠিক করে ইতোমধ্যে একটি নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে। নীতিমালাটি এখন কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক সামিউল মাসুদ ওই নীতিমালা নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে হটলাইন মনিটর করা হবে। “সরাসরি দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণের নিয়ম, দৈনিক কতটি অভিযোগ রেকর্ড করা হবে, দৈনিক কত ঘণ্টা হটলাইনটি চালু থাকবে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বিষয় সম্পৃক্ত করে তাদের এই ‘অপারশেনাল ম্যানুয়াল’ তৈরি করা হয়েছে।”

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে চার জন কর্মী নিয়ে এই সেবাটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। পরে লোকবল বাড়িয়ে ১০ জন করা হবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টেলিফোনে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ নেওয়া হবে। ফোন কলের জন্য অভিযোগকারীর নম্বর থেকে কোনো চার্জ কাটা হবে না।

দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানায়, প্রতি বছর হাজার হাজার লিখিত অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়ে, কিন্তু অধিকাংশ অভিযোগ কমিশনের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় সেগুলো তদন্তের জন্য গ্রহণ করা যায় না।

অভিযোগ করতে যা যা থাকতে হবে:
প্রণব জানান, বর্তমান নিয়মে অভিযোগকারী কমিশনের তফসিলভুক্ত কোনো অপরাধের বিবরণসহ কমিশনের চেয়ারম্যান বা পরিচালক, বিভাগীয় কার্যালয় বা উপ-পরিচালক সমন্বিত জেলা কার্যালয় বরারব অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগের বিবরণ ও সময়কাল; অভিযোগের সমর্থনে তথ্য-উপাত্তের বিবরণ; যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার নাম, পদবী ও ঠিকানা এবং অভিযোগকারী নাম, ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর উল্লেখ করতে হয়।

একইভাবে যারা টেলিফোন দুর্নীতির বিষয়ে কমিশনে অভিযোগ করবেন, তাদেরও ওইসব তথ্য-উপাত্ত দিতে হবে এবং তার অভিযোগ দুদক আইনের তফসিলভুক্ত হতে হবে।
অভিযোগকারীর দেয়া তথ্য রেকর্ড করে নিয়ম অনুযায়ী কমিশনের যাচাই-বাছাই কমিটিতে উপস্থাপন করা হয় জানিয়ে প্রণব বলেন, “যাচাই-বাছাই কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে একটি দুর্নীতির অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।”

কমিশনের তফসিলভুক্ত অপরাধ:
দুর্নীতি দমন আইনে দুর্নীতির তফসিলভুক্ত অপরাধ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে।
>> কোনো সরকারি কর্মচারী বৈধ পারিশ্রমিক ছাড়া অন্য কোনো পন্থায় বকশিশ নিলে
>> সরকারি কর্মচারী বা ব্যাংকার, ব্যবসায়ী বা অন্য কোনো ব্যক্তি ‘অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ’ করলে
>> কারও ক্ষতি করতে সরকারি কর্মচারী অশুদ্ধ বা মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করলে
>> সরকারি কর্মচারী, বেসরকারি ব্যক্তি, ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সরকারি অর্থ, সম্পত্তি আত্মসাত করলে বা কোনো ক্ষতি করলে
>> প্রতারণা বা জালিয়াতিতে সরকারের কোনো কর্মচারী বা অন্য কোনো ব্যক্তি সহায়তা দিলে
>> অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে আয়ের অবৈধ উৎস গোপন করলে বা আড়ালে সেই অর্থ বিদেশে পাচার করলে বা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আনা হলে
>> দুর্নীতি বা ঘুষের মাধ্যমে অথবা অবৈধভাবে অর্জিত কোনো ব্যক্তির অঘোষিত আয় বা সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তি তার দখলে থাকলে তা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।