কোরবানি নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধসহ ওলামা লীগের ৮ দফা দাবি
ডেস্ক: বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগসহ সমমনা ১৩টি ইসলামিক দলের উদ্যোগে পবিত্র কোরবানি নিয়ে ষড়যন্ত্র বন্ধ করার দাবিসহ ৮ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিশাল সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশ ও মানববন্ধনে বক্তারা যে দাবিসমূহ তুলে ধরেন তা নিউজ নাইন২৪ডটকমের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
(১) তরুণ প্রজন্মকে সন্ত্রাসবাদ থেকে বাঁচাতে পাঠ্যপুস্তকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত বানাত আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারক অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পবিত্র দ্বীন ইসলাম বর্জিত শিক্ষানীতির কারণে দেশে ছাত্র-ছাত্রীরা সন্ত্রাসবাদের দীক্ষা নিচ্ছে। অথচ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণ হারাম। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিভিন্ন পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে এবং বিভিন্ন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, তায়েফের ঘটনা আমরা সবাই অবগত। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আঘাতকারীদেরকে দু’পাহাড় একত্র করে পিষ্ট করার অনুমতি চাইলেন; তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরম দরদ মুবারক উনার সাথে বলেছিলেন, “এদেরকে যদি এভাবে মেরে ফেলা হয়, তবে কাদের প্রতি আমি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত পৌঁছাবো? এরা না হোক, এদের বংশধররাও তো পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করতে পারে।” সুবহানাল্লাহ!
বক্তারা বলেন, পবিত্র আজমীর শরীফ উনার মধ্যে হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এক কোটিরও বেশি বিধর্মীকে মুসলমান বানিয়েছেন রূহানিয়তের মাধ্যমে। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আপনারা মানুষকে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে ডাকুন হিকমতের সাথে সুন্দর সুন্দর কথা দ্বারা।” সুবহানাল্লাহ! (সূরা নহল: ১২৫)
বক্তারা বলেন, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে এসব শিক্ষা বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বরং যেগুলো ছিল সেগুলোও বাদ দেয়া হয়েছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দাদের দ্বারা পরিচালিত সন্ত্রাসী সংগঠন হিযবুত তাহরীর, জেএমবি, আল-কায়েদা, তালেবানে যোগ দিচ্ছে। এসব সন্ত্রাসী সংগঠন বিভিন্ন মুসলিম দেশে আগ্রাসন চালানোর ক্ষেত্র প্রস্তুতে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে। অথচ আমাদের পাঠ্যপুস্তকে যদি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক অন্তর্ভুক্ত থাকতো, তাহলে শিক্ষার্থীরা ‘সন্ত্রাসবাদ হারাম’- এ শিক্ষা অর্জন করতো। তাই দেশকে সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত করতে হলে পাঠ্যপুস্তকে অবিলম্বে উনাদের জীবনী মুবারক ও আদর্শ মুবারক সন্নিবেশিত করতে হবে।
বক্তারা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেছে- বর্তমান শিক্ষানীতি ইসলামবিরোধী নয়। কিন্তু যে শিক্ষানীতির আলোকে হিন্দুত্ববাদ সর্বস্ব রচনা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুসলমানদের পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী হিন্দুত্ববাদী চেতনা শিক্ষা দেয়া হয়, সে শিক্ষানীতি কখনো পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সম্মত হতে পারে না। বরং সম্পূর্ণরূপে সেটা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী শিক্ষানীতি। হিন্দুত্ববাদ হিন্দুদের ধর্মশিক্ষায় থাকতে পারে, কিন্তু সেটা মুসলমানদের পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে কেন? উল্লেখ্য, বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে ১ম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা বইয়ে অন্তর্ভূক্ত গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধসমূহের মধ্যে মুসলমান লেখকদের তুলনায় বিধর্মী হিন্দু লেখকদের লিখাকে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যেমন ১ম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত গল্প ও কবিতার সংখ্যা ১৯৩টি। এর মধ্যে হিন্দু ও নাস্তিকদের লেখার সংখ্যা হলো ১৩৭টি। যা সর্বনিম্ন শতকরা ৫৭ ভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৮২ ভাগ প্রাধান্য পেয়েছে। হিন্দুত্ববাদী পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষানীতির পক্ষে শিক্ষামন্ত্রীর সাফাই দেশবাসী মুসলমান কখনো মানে না এবং মানবে না। অবিলম্বে হিন্দুত্ববাদী কুফরী শিক্ষানীতি-২০১০ এবং হিন্দুত্ববাদী পাঠ্যপুস্তক বাতিল করতে হবে।
(২) সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো কর্মকান্ড নেয়া যাবে না, যাতে সাধারণ মুসলমানগণ ক্ষুব্ধ হন। ১৮ বছরের নিচে কুরবানী না করার সিদ্ধান্ত এবং নির্দিষ্ট স্থানে কুরবানী করার নির্দেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। মুসলমানদের ধর্ম পালনে বাধা নিষেধ আরোপ করা চলবে না। জনমনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরির মতো সমস্ত বিতর্কিত নির্দেশ ও কর্মকা- বন্ধ করতে হবে।
বক্তারা বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অজুহাতে কুরবানীর পশু জবাইয়ের জন্য ঢাকা উত্তরে ৫৬৭ ও ঢাকা দক্ষিণে ৫৮৩টি মোট ১১৫০টি স্থান নির্দিষ্ট করেছে দুই সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এছাড়া রাজধানীর বাইরে সারাদেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশনের মোট ৬২৩৩টি স্থান পশু কুরবানীর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, শুধু ঢাকা শহরেই প্রতিবছর ৩০ লাখ গরু কুরবানী হয়ে থাকে। সে হিসেবে দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্দিষ্ট ১১৫০টি স্পটে কুরবানীর করতে হলে একটি স্পটে ২৬৫০ জনকে কুরবানী করতে হবে। যা সম্পূর্ণ অসম্ভব ও অবাস্তব। ধারাবাহিকভাবে তিন দিন কুরবানী করলেও ২৬৫০ জন কখনো কুরবানী করতে পারবে না। একই অবস্থা হবে সারাদেশে।
বক্তারা বলেন, কুরবানীর স্থান নির্দিষ্ট থাকলে লাখ লাখ কুরবানীদাতারা একই সময়ে কুরবানী তো করতে পারবেনই না, বরং নির্দিষ্ট স্থানে কুরবানীর জন্য দীর্ঘ সারি, যাতায়াতের সমস্যা, পরিবহন সমস্যা, গোশত বহনের ঝামেলা, গোশত ও চামড়ার নিরাপত্তা, মাস্তান-সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতাসহ হাজারো সমস্যার মুখোমুখি হবেন। এতে ঢাকাসহ সারাদেশের লাখ লাখ কুরবানীদাতা দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে কুরবানী না করে ওয়াজিব তরক্বের গুনাহে গুনাহগার হবে।
বক্তারা আরো বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক এবার ১৮ বছরের নিচে কেউ কুরবানী বা জবেহ করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তও সম্পূর্ণরূপে ইসলামবিরোধী ও মনগড়া। কারণ ইসলামে এরকম কোনো সিদ্ধান্ত নেই যে, ১৮ বছরের নিচে কেউ কুরবানী করতে পারবে না। তাহলে এসব ইসলামবিরোধী নির্দেশদাতারা কি নতুন করে ইসলাম ধর্মের বাইরে সম্রাট আকবরের দ্বীনে ইলাহির মতো নতুন কোনো ধর্ম প্রবর্তন করতে চায়? কিন্তু এদেশের মুসলমানরা তা কখনো মেনে নিবে না।
বক্তারা বলেন, মুসলমানদের কুরবানী নিরুৎসাহিত করতে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও রাস্তাঘাটে যত্রতত্র যখন হিন্দুদের পূজামন্ডপ করা হয়, তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। রাস্তাঘাটে যত্রতত্র পূজামন্ডপ করা যাবে না- এরূপ নির্দেশনা জারি করা হয় না বা পূজামন্ডপের স্থানও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় না। এটা কি মুসলমানদের প্রতি সাম্প্রদায়িকতা নয়?
বক্তারা আরো বলেন, ইসলামবিদ্বেষীরা প্রতিবছর কুরবানী পশুর হাট নিয়ে অপপ্রচার করে। অথচ যখন পহেলা বৈশাখে সারা বাংলাদেশের সবচেয়ে মুমূর্ষু রোগীদের পাঠানো স্থান ঢাকা মেডিকেল, পিজি হাসপাতালে ও বারডেমসহ গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে আগত সবগুলো রাস্তাই ব্যারিকেড দিয়ে আটকানো থাকে, চতুর্দিকে থাকে হারাম বৈশাখপ্রেমী অজস্র মানুষের ভীড়, সেখানে অ্যাম্বুলেন্স চলা তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে মানুষই চলতে পারে না। তখন তা নিয়ে কোনো মাতামাতি করে না কেন? শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থানের কারণে বারডেম, পিজি, ঢাকা মেডিকেলের রোগীরা টানা ৬ দিন ধরে অবরুদ্ধ ছিল। তখনো এসব ইসলামবিদ্বেষীরা কিছু বলেনি। যখন কুরবানীর সময় আসে, তখন তারা কুরবানীর পশুর হাটের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে। কুরবানীর পশুর হাট কমালে বা রাজধানীর বাইরে বসালে যাতায়াতের সমস্যা, পরিবহন সমস্যা, নগদ অর্থ বহন করাসহ মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে পড়বেন লক্ষ লক্ষ কুরবানীদাতারা। এজন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে যদি পশুর হাটের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে জনদুর্ভোগ লাগব হবে।
বক্তারা বলেন, অবিলম্বে উদ্ভট ও ইসলামবিরোধী মনগড়া সব সিদ্ধান্ত বাতিল করে সিটি কর্পোরেশনগুলোকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি কুরবানীদাতাদের সুবিধার্থে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে কুরবানীর পশুর হাটের ব্যবস্থা করতে হবে। কুরবানীর পশুর হাট নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করা যাবে না।
(৩) শিক্ষাঙ্গনে ইসলামবিরোধী সংস্কৃতি তথা নাচ-গানের মতো হারাম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাধ্য করে দিলে এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানরা সরকারবিমুখ হয়ে পড়বে। বরং ইসলামী সংস্কৃতি চালু করলেই সন্ত্রাসবিরোধী পূর্ণ চেতনা তৈরি হবে।
বক্তারা বলেন, মুসলমান মাত্রই সবাই জানে, ইসলাম ধর্মে গান-বাজনা ইত্যাদি সম্পূর্ণ হারাম। কিন্তু সম্প্রতি সংস্কৃতি মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছে, ‘শিক্ষাঙ্গনে সংস্কৃতি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে’। এর মাধ্যমে সংস্কৃতিমন্ত্রী তার ব্যক্তিমতাদর্শ হারাম গান-বাজনা মুসলমান শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এর আগেও আমরা দেখেছি, শিক্ষামন্ত্রী তার ব্যক্তিমতাদর্শ তথা বামপন্থী নাস্তিক্যবাদী মতাদর্শ শিক্ষাক্ষেত্রে চাপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দেশের জনগণ সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। শিক্ষানীতি ও হিন্দুত্ববাদী পাঠ্যপুস্তক বাতিলে দেশব্যাপী দাবি জোরদার হয়েছে। সুতরাং সংস্কৃতিমন্ত্রীর ইসলামবিরোধী ব্যক্তিমতাদর্শ মুসলমান শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দিলে সেটাও মুসলমানরা গ্রহণ করবে না। এসব সিদ্ধান্ত সরকারকে বেকায়দায় ফেলারই গভীর ষড়যন্ত্র। মূলত, আওয়ামী লীগের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা এসব মন্ত্রীরা সরকারকে ধর্মপ্রাণদের থেকে বিচ্ছিন্ন করতেই ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ চাপিয়ে দিচ্ছে।
বক্তারা বলেন, গান-বাজনার মাধ্যমে হারাম সংস্কৃতি দিয়ে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করা যাবে না। বরং ইসলামী সংস্কৃতি চালু করলে সন্ত্রাসবাদ দমন করা সহজ ও সম্ভব হবে। হারাম সংস্কৃতি চর্চা মুসলমান শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়া চলবে না।
(৪) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন আইন পাস মানে- বাঙালিদের উদ্বাস্তু বানানো এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতি সন্ত্রাসীদের স্বাধীন জুমল্যান্ড গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা; যা দেশবিরোধী গভীর চক্রান্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবিলম্বে এই কালো আইন বাতিল করতে হবে।
বক্তারা বলেন, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন আইন-২০১৬ পাস করেছে সরকার। এ আইনের বিরোধিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিরা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে। কারণ এ আইন পাসের ফলে পার্বত্যবাসী লাখ লাখ বাঙালি নিজ ভূমি হারিয়ে নিজ দেশে পরবাসী উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা দীর্ঘদিন থেকে এটাই চেয়ে আসছিলো। বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্ছেদ করতে তারা ফান্ড দেয়ারও প্রস্তাব করেছিলো। এ আইন পাসের মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা পূরণ হয়েছে।
বক্তারা বলেন, এ কালো আইন পাসের কারণে পার্বত্যবাসী বাঙালিদের বাস্তুচ্যূত করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতিদের হাতে তুলে দেয়া তাদের জন্য সহজ হয়েছে। পাশাপাশি বিচ্ছিন্নতাবাদী উপজাতিদের স্বাধীন জুমল্যা- গঠন ত্বরান্বিত হয়েছে। এটা দেশের এক দশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র। দেশপ্রেমিক সরকারকে এই গভীর ষড়যন্ত্র উপলব্ধি করতে হবে। অবিলম্বে এ কালো আইন বাতিল করে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষা করতে হবে এবং বাঙালিদের প্রতি সব বৈষম্যমূলক আচরণকারীদের গ্রেফতার করতে হবে।
(৫) শত্রু সম্পত্তি বা অর্পিত সম্পত্তি এখন রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। ভারতে শত্রু সম্পত্তি মুসলমানদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। তাহলে বাংলাদেশ ফেরত দেবে কেন? অবিলম্বে অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করতে হবে।
বক্তারা বলেন, অর্পিত সম্পত্তি মূলত ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময়ের শত্রু সম্পত্তি আইন থেকে এসেছে। পাক-ভারত যুদ্ধের সময় যারা দেশ ত্যাগ করে শত্রু দেশ ভারতের পক্ষাবলম্বন করেছিল তাদের সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ গণ্য করা হয়। একইভাবে যারা ভারতের যুলুমের কারণে ভরত থেকে যারা পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল তাদের সম্পত্তিকে ভারত শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করে। ভারত কর্তৃক ঘোষিত ‘শত্রু সম্পত্তি’ ভারত সরকার এখনো ভারতীয় মুসলমানদের ফেরত দেয়নি। বর্তমানে শুধু মুম্বাইতে ১৬০০০ শত্রু সম্পত্তি হিসেবে গণ্য মুসলমানদের সম্পত্তি রয়েছে। যা ফেরত পেতে ৫৫০টি মামলা হলেও মুসলমানদের তাদের ভূমি ফেরত দেয়া হয়নি। ভারতে শত্রু সম্পত্তি মুসলমানদের ফেরত দেয়া না হলে বাংলাদেশ এই শত্রু সম্পত্তি কেন ফেরত দেবে? এটা এখন সরকারি সম্পদ।
‘অর্পিত সম্পত্তি’র মোড়কে এই শত্রু সম্পত্তি বাংলাদেশের বিধর্মীরাও পেতে পারে না। তাদের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া বা দেশ ছেড়ে যাওয়া নাগরিকরা সম্পত্তির দাবিদার হতে পারে না। যারা দেশপ্রেম বাদ দিয়ে শত্রু দেশে আশ্রয় নেয় এবং স্বদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তারা কিভাবে ভূমি ফেরত পেতে পারে? ভারত যেখানে মুসলমানদের সম্পত্তি ফেরত দেয়নি, সেখানে বাংলাদেশের এই শত্রু সম্পত্তি ফেরত দিতে একশ্রেণীর কর্মকর্তারা অতিউৎসাহী কেন? তাই অবিলম্বে ‘শত্রু সম্পত্তি’ বা অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করতে হবে। কয়েক লাখ একর সরকারি সম্পত্তি কারো হাতে তুলে দেয়া যাবে না; বরং সরকারকে তা রক্ষা করতে হবে।
(৬) কারো সাম্প্রদায়িক নির্দেশে ‘দেবোত্তর সম্পত্তি’র নামে দেশব্যাপী মুসলমানদের সম্পত্তি হরণ চলবে না। কারণ অধিকাংশ দেবোত্তর সম্পত্তি মুসলমানদের লা-খেরাজ সম্পত্তি বা নিষ্কর ভূমি থেকে এসেছে। অবিলম্বে মুসলমানদের লা-খেরাজ সম্পত্তি মুসলমানদের ফেরত দিতে হবে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মুসলমানদের ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’র ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। এই বাংলার প্রায় সব জমির মালিক এক সময় মুসলমানরাই ছিলো। কিন্তু ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশ বেনিয়া কর্নওয়ালিশ ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ আইন পাস করে মুসলমানদের থেকে লা-খেরাজ জমি কেড়ে নিয়ে হিন্দুুদের দিয়ে দেয়। ফলে এক সময়কার সম্ভ্রান্ত মুসলমানরা পথে বসে যায় এবং কর্মচারি হিন্দুরা জমিদার বনে যায়। পরবর্তিতে সেসব জমি থেকেই হিন্দুরা অধিকাংশ দেবোত্তর সম্পত্তি গড়ে তোলে। এসব জমির মালিক মূলত মুসলমানরা। এসব লা-খেরাজ জমি এখনো যেসব মুসলমানদের দখলে রয়েছে; তাদের উচ্ছেদ করে দেবোত্তর সম্পত্তির নামে হিন্দুদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এটা কিভাবে বৈধ হতে পারে? কারো সাম্প্রদায়িক নির্দেশে এসব লা-খেরাজ জমি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ কোনো মুসলমান মেনে নিবে না। ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন’ এবং ‘দেবোত্তর সম্পত্তি আইন’ এর নামে ব্রিটিশ বেনিয়াদের মতো নতুন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা বন্ধ করতে হবে। মুসলমানদের লা-খেরাজ সম্পত্তি মুসলমানদের ফেরত দিতে হবে।
(৭) ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানদেরকে জান্নাতে যাওয়ার জন্য মন্ত্রী-এমপিদেরকেই পথ দেখাতে হবে ও দায়িত্ব নিতে হবে। সন্ত্রাসবাদীরা ও উলামায়ে সূ’রা জান্নাতে যাওয়ার কথা বলবে, তা হবে না। মুসলমানদের নেকী কামাইয়ের কথা ও গুনাহ না করার কথা মন্ত্রী-এমপিদেরকে বলতে হবে। পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।
বক্তারা বলেন, প্রত্যেক মুসলমানই সম্মানিত জান্নাতে যেতে চায়। কিন্তু সম্মানিত জান্নাতে যাওয়ার শিক্ষা মুসলমানরা শিক্ষা ব্যবস্থা বা সরকারি পর্যায় থেকে পাচ্ছে না। এ সুযোগটি গ্রহণ করছে সন্ত্রাসবাদীরা ও ওলামায়ে সূ’রা। তারা শিক্ষার্থীদের জান্নাতে যাওয়ার ধোঁকা দিয়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত করছে। তারা জান্নাতে নেয়ার নেতা সেজে বসেছে। তাই আমরা মনে করি, সরকারের মন্ত্রী-এমপিদেরকে মুসলমান শিক্ষার্থীদের জান্নাতে যাওয়ার উপায়গুলো শিখতে এবং আমল করতে পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত। মন্ত্রী-এমপিরা নেককাজ এবং সওয়াবের কথা বললে, বদকাজ এবং গুনাহ’র কাজ থেকে বেঁচে থাকার কথা বললে, পাশপাশি এর পৃষ্ঠপোষকতা করলে জনগণ ও শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হবে। এতে সন্ত্রাসবাদীরা হতাশ হবে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণকে জান্নাতে যাওয়ার কথা বলে সন্ত্রাসবাদী বানানোর কর্মসূচি ভন্ডুল হয়ে যাবে।
(৮) ১৫ আগস্টকে জাতীয় শাহাদাত দিবস ঘোষণা করতে হবে এবং দেশের ৬৮ হাজার গ্রামে পবিত্র মীলাদ মাহফিল, দোয়া-মুনাজাত ও তবারকের ব্যবস্থা করতে হবে। শহীদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগে ‘শহীদ’ এবং শেষে ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ লাগানোর জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।
বক্তারা বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। এ দিবসকে শুধু শোক দিবস হিসেব পালন করলে হবে না। কারণ এ দিবস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত দিবস। এ দিবসকে শাহাদাত দিবস হিসেবে পালন করতে হবে। এ দিবসে ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদের মর্যাদা নিয়ে সারাদেশে আলোচনা সভা মীলাদ মাহফিল আয়োজন করতে হবে। বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করে দেশের ১৫ লাখ মসজিদে বিশেষ মীলাদ মাহফিল ও তবারকের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি শহীদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগে ‘শহীদ’ এবং শেষে ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ লাগানোর জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী ওলামা লীগের সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, পীরজাদা, পীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান বিপ্লবী জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারী, (পীর সাহেব, টাঙ্গাইল), সভাপতি- বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। এছাড়া বক্তব্য রাখেন- আলহাজ্জ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সাধারণ সম্পাদক- বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, সভাপতি- সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদ, শায়েখ আলহাজ্জ মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফেয়ী, সভাপতি-বঙ্গবন্ধু ওলামা ফাউন্ডেশন। আলহাজ্জ লায়ন মাওলানা মুহম্মদ আবু বকর ছিদ্দীক্ব, সভাপতি- জাতীয় কুরআন শিক্ষা মিশন, মাওলানা মুহম্মদ শওকত আলী শেখ ছিলিমপুরী, দপ্তর সম্পাদক- বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, মাওলানা মুজিবুর রহমান চিশতি সহ সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। হাফেজ মাওলানা মোস্তফা চৌধুরী বাগেরহাটি-সভাপতি বাংলাদেশ এতিমখানা কল্যাণ সমিতি, হাফেজ মাওলানা আব্দুল বারী, অধ্যাপক কাজী মাওলানা নোমান চৌধুরী, আলহাজ্জ হাজী মাওলানা হাবীবুল্লাহ রূপগঞ্জী, আলহাজ্জ আতাউর রহমান বঙ্গ, হাফেজ আব্দুল জলিল, ডা. সাইফুদ্দীন মিয়াজি, মাওলানা তাজুল ইসলাম, জোবায়ের হাসান নিজামী, মাওলানা আব্দুর রহিম (পীর সাহেব), ডা. মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সোবহান, মুহম্মদ রুহুল আমীন বগুড়া, মাওলানা মুহম্মদ শেখ শোয়াইব গোপালগঞ্জী, ক্বারী মাওলানা মুহম্মদ আসাদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদ চেয়ারম্যান- আলহাজ্জ হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার। মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের এক বিরাট মিছিল করা হয়। মিছিল শেষে শহীদ বঙ্গবন্ধু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রূহের মাগফিরাত কামনা করে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হায়াতে তৈয়বার জন্য দোয়া মোনাজাত করেন- আলহাজ্জ কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী।
বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদ, জাতীয় কুরআন শিক্ষা মিশন, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখ ঐক্যজোট, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা পরিষদ, কেন্দ্রীয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, বাংলাদেশ, হাক্কানী আলেম সমাজ, জাতীয় ওলামা পরিষদ, বাংলাদেশ এতিমখানা কল্যাণ সমিতি, ইমাম মোয়াজ্জিন কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ ফেৎনা প্রতিরোধ কমিটি, আমরা ঢাকাবাসী, বঙ্গবন্ধু ওলামা ফাউন্ডেশন-এর পক্ষে স্বাক্ষর করেন আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার, কার্যকরী সভাপতি
বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।