পবিত্র কুরবানী করার বেমেছাল ফযীলত

ডেস্ক: اضحية বা প্রবিত্র কুরবানী শব্দটি এক বচন। বহু বচনে اضاحى। এর আভিধানিক অর্থ: কুরবানী, উৎসর্গ, পবিত্র কুরবানী উনার পশু ঈদুল আদ্বহার দিন যা যবেহ করা হয়। সম্মানিত শরীয়ত উনার পরিভাষায় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নামে নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট প্রাণী যবেহ করার নাম পবিত্র কুরবানী। অর্থাৎ পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যেকোনো দিনে দুম্বা, খাসী, উট, গরু, মহিষ ইত্যাদি গৃহপালিত হালাল চতুষ্পদ প্রাণীসমূহকে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করে উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের উদ্দেশ্যে যবেহ করাকে পবিত্র কুরবানী বলে। পবিত্র কুরবানী উনার বিধান সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
انا اعطيناك الكوثر فصل لربك وانحر
অর্থ: “হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার বা সমস্ত কল্যাণ হাদিয়া মুবারক করেছে। অতএব, (এর শুকরিয়াস্বরূপ ) আপনি নামায পড়–ন এবং কুরবানী করুন।” অর্থাৎ উম্মতদেরকে বলুন তারা যেন নামায পড়ে এবং কুরবানী করে। (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ-১,২)
উল্লেখ্য, পবিত্র কুরবানী উনার বিধান শুধু আমাদের জন্যেই দেয়া হয়েছে তা নয়, বরং পূর্ববতী উম্মতের প্রতিও উনার বিধান প্রবর্তিত ছিল । মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী উনার বিধান দিয়েছি, যাতে তারা গৃহপালিত পশুর উপরে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক স্মরণ করে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি ও নির্দেশ মুতাবিক উনার নামে পশু কুরবানী করে।”  (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
পবিত্র কুরবানী উনার ফযীলত সম্পর্কে বহু পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্নিত রয়েছে, হযরত যায়িদ ইবনে আরক্বাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানী কি? তিনি জাত্তয়াবে বললেন, তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত। উনারা পুনারায় জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এতে আমাদের জন্য কি পরিমাণ নেকী রয়েছে? তিনি বললেন, পবিত্র কুরবানী উনার পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহুম উনারা আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পশমওয়ালা পশুর ক্ষেত্রে কি হুকুম? তিনি বললেন, পশমওয়ালা পশুর প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকী রয়েছে। সুবহানাল্লাহ ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে মাযাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত দাউদ খলীফাতুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দরবার শরীফ-এ প্রার্থনা জানান, আয় বারে  ইলাহী! আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত উনারা পবিত্র কুরবানী করলে কি পরিমাণ ছওয়াব পাবে? মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি জবাব দেন, পবিত্র কুরবানী উনার পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে কুরবানীদাতা দশটি নেকী লাভ করবে, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি হবে। সুবহানাল্লাহ! আর পরকালে পবিত্র কুরবানী উনার পশুর মাথার প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একজন করে হুর দেয়া হবে। শরীরের প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে একটি করে বালাখানা দেয়া হবে। প্রতিটি গোশতের টুকরার বিনিময়ে একটি করে পাখি দেয়া হবে আর প্রতিটি হাড়ের বিনিময়ে একটি করে বোরাক (বাহন) দেয়া হবে। যাদ্বারা সে বিদ্যুত গতিতে পুলছিরাত পার হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ দশ বছর অবস্থান মুবারক করেছেন, প্রতি বছরই পবিত্র কুরবানী করেছেন, কখনো তা ছাড়েননি। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা গুরুত্ব দিয়েছেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বান্দা-বান্দী বা উম্মত পবিত্র কুরবানী উনার দিন যেসব নেকীর কাজ করে থাকেন তার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হলো পবিত্র কুরবানী করা। ক্বিয়ামত দিবসে পবিত্র কুরবানী উনার পশু, তার শিং পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে। এবং পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পৌঁছে যায়। সুবহানাল্লাহ! কাজেই তোমরা আনন্দচিত্তে পবিত্র কুরবানী করো। (তিরমিযী শরীফ ও ইবনে মাজাহ শরীফ)
এক বর্ণনা মতে, পবিত্র কুরবানী উনার পশু কুরবানীদাতার নাজাতের ব্যাপারে সাক্ষ্য দান করবে। পবিত্র কুরবানী উনার পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরবানীদাতার আমলনামায় অসংখ্য নেকী দান করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র ঈদুল আযহা উনার দিনে বান্দার পবিত্র কুরবানী উনার পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক তিনি তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে সমস্ত পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী করা হবে ক্বিয়ামতের দিন সেই পশুগুলো কুরবানীদাতাকে পিঠে করে বিদ্যুৎবেগে পুলছিরাত পার করে বেহেশতে পৌঁছিয়ে দিবে।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পবিত্র কুরবানী উনার পশু ক্বিয়ামতের দিন সাওয়ারী বা বাহন হিসেবে গণ্য হবে।” সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং কানা, খোড়া রোগাক্রান্ত, কানকাটা দন্তহীন ইত্যাদি যাবতীয় দোষযুক্ত পশু পবিত্র কুরবানী করা পরিহার করে সম্পূর্ণ দোষমুক্ত পশু দ্বারা পবিত্র কুরবানী করা উচিত।
যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব তারা তো পবিত্র কুরবানী করে অফুরন্ত ফযীলত লাভ করবেন। কিন্তু যাদের উপর পবিত্র কুরবানী ওয়াজিব নয়, তারাও ইচ্ছা করলে একাধিকজন মিলে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নাম মুবারকে দুম্বা, মেষ ভেড়া, ছাগল, গরু, মহিষ, উট, পবিত্র কুরবানী দিয়ে পবিত্র কুরবানী উনার ফযীলত লাভ করতে পারে।
মহান মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালম এবং সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানার্থে আমাদেরকে পবিত্র কুরবানী পবিত্র সুন্নত মুতাবেক করার তাওফীক দান করুন। আমীন! – আল ইহসান