আগ্রাসী ইয়াবার অন্ধকারে ডুবছে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
![](https://i0.wp.com/newsnine24.com/wp-content/uploads/2016/06/yaba2.jpg?fit=516%2C397)
২০০৬ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রথমবারের মতো ইয়াবা হিসেবে পরিচিত রঙিন ট্যাবলেটটি আসে। সে সময় ট্যাবলেটটি সেবনকারী ছিলো ধনী লোকের সন্তানরা। আর এখন ইয়াবা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। বিষাক্ত মেটামফেটামিন ও ক্যাফেইন দিয়ে তৈরি ইয়াবা দেখতে লজেন্সের মতো। প্রজন্ম ধ্বংসকারী এই নেশাজাতীয় দ্রব্য বাংলাদেশে চালান দিচ্ছে ভারত ও মায়ানমার।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) একের পর এক পাচারকারীকে ধরছে। বাহিনীটি গত বছর দুই কোটি ৯০ লাখের বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করেছে। ২০১০ সালের তুলনায় গত বছর জব্দ করা ইয়াবার এই সংখ্যা ৩৫গুণেরও বেশি। তবে ইয়াবা টনে টন ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ আর ইয়াবা সম্রাট-সম্রাজ্ঞীদের গ্রেপ্তার করলেও সীমান্ত দিয়ে ইয়াবার চালান ঠেকাতে পারেনি প্রশাসন।
জাতিসংঘের অপরাধ ও নেশাবিষয়ক দপ্তর ইউএনওডিসির ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মেকং নদীর আশপাশের অঞ্চল (মেকং সাব-রেজিওন) এবং পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে জব্দ হওয়া মেটামফেটামিন ট্যাবলেটগুলোর প্রধান উৎপত্তিস্থল হিসেবেই মিয়ানমারকেই ধরা হয়।’ ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৩ সালে চীনে জব্দ হওয়া ৯০ শতাংশ ইয়াবা ট্যাবলেট মিয়ানমারে তৈরি।
বেসরকারি সংস্থা ন্যাশনাল গোলস টু বি অবটেইনড অ্যান্ড রিটেইনডেড (এনওএনজিওআর)-এর হয়ে মিয়ানমারের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় কক্সবাজারে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র চালান দিদারুল আলম রাশেদ। সেখানে ২৪ জনের মতো মাদকসেবীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ইয়াবাসেবী বাড়ার বিষয়টি খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি।
ইয়াবার আগে লোকজন গাঁজা ও হেরোইন সেবন করত জানিয়ে রাশেদ বলেন, ‘২০০২ সালে আমরা একটি অনানুষ্ঠানিক জরিপ করে দেখেছি, জেলাটিতে (কক্সবাজারে) ২০ হাজার লোক মাদকাসক্ত। কিন্তু তাদের কেউই ইয়াবাসেবী নয়।’ ‘কিন্তু ২০০৭ সাল ও এর পর থেকে সর্বত্র ইয়াবায় সয়লাব হয়ে গেছে। ২০১৬ সালে আমরা জরিপ করে দেখেছি, ৮০ হাজার লোক মাদকসেবী, যাদের প্রায় ৮০ শতাংশ ইয়াবা সেবন করে।’ রাশেদ বলেন, ‘ইয়াবা আমাদের তরুণদের ধ্বংস করে দিচ্ছে।’
২০১৩ সালে ১৭ বছর বয়সী কিশোরী ঐশী রহমান ইয়াবায় আসক্ত ছিল। আদরের সন্তানকে নিয়ে চিন্তিত ছিল মা-বাবা এবং তারা তার (ঐশী) ফোনটি কেড়ে নিয়ে ঢাকার ফ্ল্যাটে আটকে রেখেছিল। এতে ক্ষুব্ধ ঐশী মা-বাবার কফির কাপে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। এর পর ঘুমে এলে পড়েন বাবা-মা। পরে একটি ছুরি নিয়ে আঘাত করে দুজনকেই হত্যা করে সে।
মা-বাবাকে হত্যার সময় ছোট ভাইকে শৌচাগারে আটকে রাখে ঐশী। পরে তাকে ওই বাসা থেকে নিয়ে যেতে এক বন্ধুকে কল দেয়। পরবর্তী সময়ে সে পুলিশের কাছে ধরা দেয় এবং দোষ স্বীকার করে বলে জানা যায়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে ঐশীকে মৃত্যুদ-াদেশ দেয় নিম্ন আদালত। রায়ে আদালত বলেন, ঐশী তার মা-বাবাকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে’। এই রায়ের সময় ঐশীর বয়স ছিল ১৯ বছর। চলতি বছরের জুনে বয়স ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঢাকার উচ্চ আদালত মৃত্যুদ-াদেশ কমিয়ে ঐশীকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেয়।
ঐশীর এ ঘটনায় বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে ইয়াবা আসক্তি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। অনেকেই ঐশীর এই মানসিক বিকৃতির জন্য ইয়াবাকে দায়ী করেন। জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ২০১৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮৮ শতাংশ মাদকসেবীর বয়স ৪০ বছরের নিচে। সিলেট শহরে চলতি বছরের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ মাদকসেবীর বয়স ২২ থেকে ২৯ বছর।