বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা এবং সিআইএ, মোসাদ ও ‘র’ ষড়যন্ত্র
বাহাউদ্দীন চিশতী: ‘বাংলাদেশে আইএস আছে’ স্বীকার করাতে সরকারের উপর ষড়যন্ত্রমূলক চাপ সৃষ্টির ধারাবাহিকতায় গুলশান হামলা একটি বড় ধরণের অপারেশন।
লেখক, খ্রিস্টান ধর্মযাজক, হিন্দু পুরোহিতদের কুপিয়ে হত্যা কিংবা শিয়া সমাবেশে বোমা হামলার মতো ঘটনাগুলোতে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে ও পুলিশ প্রশাসনের অনেকেই দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন- এসব হামলা বা হত্যাকান্ড আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। যদিও মুখ খুলে কেউ বলতে সাহস করে না যে, এসব আমেরিকার সিআইএ, ইসরাইলের মোসাদ কিংবা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ষড়যন্ত্র; তথাপি ভারতে বসে মোসাদ গোয়েন্দার সাথে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ফাঁস হওয়ার মতো বিভিন্ন অকারেন্সে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অপতৎপরতা এখন ওপেন সিক্রেট। তারা যে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তানের মতো ক্ষেত্র তৈরিতে তৎপর এ বিষয়টিও বহু রাজনীতিকের বক্তব্যে প্রকাশ হয়েছে।
গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারি ক্যাফেতে ও শোলাকিয়ার ঈদগাহে হামলার মধ্য দিয়ে এসব বিদেশী ষড়যন্ত্র অনেকটা এক্সট্রিম পর্যায়ে চলে গেছে। সামনে আরো কি কি ষড়যন্ত্র অবশিষ্ট আছে বলা যায় না, তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসের মতো এইটুকু বলা যায়, ‘বাংলাদেশে আইএস আছে’ সরকার মহল এই স্বীকারোক্তি না দেয়া পর্যন্ত এসব হত্যাকান্ড থামবে না। আর প্রতিটা হত্যাকান্ডেরই ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমেরিকা গোয়েন্দা সিআইএ’র রিতা কাটজ পরিচালিত সাইট ইন্টেলিজেন্স ‘হত্যাকান্ডে আইএস-এর দায় স্বীকার’ দাবি করে খবর প্রচার করবে।
গত ৬ জুলাই জেরুজালেম অনলাইন-এ প্রকাশিত নিবন্ধে বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে চিঠি পাঠানোর তথ্য প্রকাশ হয়।
মোসাদ সদস্য মেনদি এন সাফাদির মারফতে দেয়া চিঠিতে হিন্দু স্ট্রাগল কমিটি নামকটি একটি সংগঠন থেকে জানানো হয়, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ইসরাইল রাষ্ট্রের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এটি আমাদের ইহুদী দাদাদের জন্য দুঃখজনক। বাংলাদেশের হিন্দুদের পক্ষে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা কয়েক দশক পরেও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে কাজ করেনি। বাংলাদেশের মুসলিম ভ্রাতৃত্বের কারণেই এই সম্পর্ক স্থাপন হয়নি। বাংলাদেশের সব সরকারই মুসলিমদের দ্বারা প্রভাবিত। তাই তারা ইসরাইল রাষ্ট্রের সঙ্গে এই অবিচার করেছে।
দ্য হিন্দু স্ট্রাগল কমিটি পরামর্শ দিয়ে বলেছে, এই অবিচার হ্রাস করতে বাংলাদেশ ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে অসম্পাদিত কাজটি করার সুযোগ তৈরি হবে। এই ধরনের আচরণের জন্য ইসরাইলের কাছে বাংলাদেশের অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।’
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে প্রতিটা সন্ত্রাসী হামলা বা হত্যাকাণ্ডের পর আমেরিকার সিআইএ’র উইং সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ কথিত আইএস’র স্বীকারোক্তির খবর প্রকাশে যেমন সন্ত্রাসী হামলায় সিআইএ’র সম্পৃক্ততা ফুটে ওঠে তেমনি বাংলাদেশের হিন্দু নেতাদের সাথে সরাসরি মোসাদ সদস্যদের কানেকশনের বিষয়টিতেও ‘র’ ও মোসাদের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি ফুটে ওঠে।
সাবেক সেনাসদস্য ও বাংলাদেশ ডিফেন্স জারনাল-এর সম্পাদক লে. জে. (অব) আবু রুশদ তার বাংলাদেশে ‘র’ বইটিতে লিখেছেন: “বাংলাদেশ সরকারের ভেতরে-বাহিরে ৩০ হাজার র’-এর এজেন্ট তৎপর শিরোনামে তিনি লিখেছেন, “মন্ত্রী, এমপি, আমলা, রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, লেখক, কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রকাশক, অফিসার, কর্মচারী পর্যায়ের লোকজনই শুধু নয়। ছাত্র, শ্রমিক, কেরানী, পিওন,রিক্সাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা, কুলি, টেক্সিড্রাইভার, ট্রাভেল এজেন্ট, ইন্ডেটিং ব্যবসায়ী, সিএন্ডএফ এজেন্ট, নাবিক, বৈমানিক, আইনজীবিসহ বিভিন্ন স্তরে তাদের এজেন্ট সক্রিয় রয়েছে।”
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ভারত তার গোয়েন্দা সংস্থা র’-এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সেক্টরে কল-কাঠি নাড়ছে। পুলিশে, সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে প্রচুর হিন্দুকরণ করা হচ্ছে। পোশাক শিল্প, চিনি শিল্প, পাট শিল্প ইত্যাদি কৃষিখাত বাংলাদেশের উৎপাদনমুখী খাতসমূহ একে একে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ভারত তার পছন্দের এবং সমর্থনপুষ্ট ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দ্বারা বাংলাদেশে এক মহাবিপর্যয় ঘটাতে চাচ্ছে। সবশেষে দেশকে অস্থিতিশীল করে মাইনাস টু ফরমুলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমেরিকা-ইসরাইল-ভারত তাদের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম রেপিডলি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।