কোরবানি বিরোধী ষড়যন্ত্রে সরকারি আমলাদের সাবধান ও সতর্ক থাকা জরুরী
আবুল কালাম আর রাযী: ইন্দিরাকে ভারতের ক্ষমতাবান প্রধানমন্ত্রীদের একজন হিসেবে গণনা করা হয়। কিন্তু এই ইন্ধিরাকেও আরেক যালিম শাসক গৌর গোবিন্দের করুণ পরিণতিতে পড়তে হয়। কারণ ছিলো একই। ভারতে মুসলমানদের জন্য গরু কুরবানী নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার মাত্র কিছুদিনের মাথায় মহান আল্লাহ পাক উনার গযবের বহিঃপ্রকাশ হয়। তার নিজ দেহরক্ষীর হাতেই নির্মম পতন হয় তার।
লেখার শুরুতেই ইতিহাসের এ অংশটি টেনে আনার কারণ আছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঘটনাটি খুবই প্রাসঙ্গিক। কারণ বিগত কয়েক বছর থেকেই কুরবানীর বিপক্ষে একটি মহলের আটঘাঁট বেধে অপপ্রচার সবার নজরে এসেছে। এমনকি তাদের এই হাত এখন দেশের ক্ষমতাসীন সরকারি আমলাদের নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে। তারা সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আমলাদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে কুরবানীকে নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপও প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে। সকলের জ্ঞাতার্থে কয়েকটি বিষয় এখানে আলোচিত হলো।
রাস্তায় কুরবানী করতে না দেয়ার ঘোষণা:
কুরবানীবিদ্বেষীরা চায় কুরবানী নিয়ে মুসলমানরা কষ্ট পাক, বিড়ম্বনায় পড়–ক। যেভাবে উৎসাহ উদ্দীপনা আর আনন্দের সাথে মুসলমানরা কুরবানীর পশু জবাই করে ও গোশত বণ্টন করে সে আনন্দের বাতি তারা নিভিয়ে দিতে চায়। রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য শহরগুলোতে সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট মাঠে কখনোই যে এই লক্ষ লক্ষ গরু-ছাগল কুরবানীর যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা সম্ভব নয়, তা কিন্তু তাদের(!) খুব ভালো করেই জানা। শুধু জানা নেই অটিস্টিক (প্রতিবন্ধী) সরকারের ও তাদের মন্ত্রী, এমপি আমলাদের। একটি মাঠে কতগুলো গরু একসাথে জবাই করা যাবে, সেগুলো প্রসেসিং করতে কত সময় লাগবে, ১ম দফার পর কর্দমাক্ত মাঠে কিভাবে ২য় দফায় জবাই হবে এবং এভাবে সকল কুরবানীর পশুগুলোকে নির্দিষ্ট ৩ দিনের মধ্যে জবাই করা সম্ভব কিনা- এসব হিসাব অটিস্টিক প্রশাসনের জানা না থাকলেও জনগণের জানা আছে। তাইতো গতবারও তাদের এই হীনউদ্দেশ্য সফল হয়নি, এবারও হবে না। ইনশাআল্লাহ!
কুরবানীর পশুর হাটের সংখ্যা কমানো:
দেশের জনসংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে নাকি কমছে? যদি বাড়ে, তবে তো কুরবানী দাতারও সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাহলে কুরবানীর পশুরও চাহিদা বাড়ছে। একই সাথে কুরবানীর পশুর খামারও বেড়েছে। অর্থাৎ কুরবানীর পশুর উৎপাদন ও সংখ্যা বাড়ছে। তাহলে এর সাথে সাথে কি কুরবানীর পশুর হাটের সংখ্যা বাড়বে, নাকি কমবে? বাড়বে। তাহলে যারা হাটের সংখ্যা কমানোর কথা বলছে তারা কারা? মূলত, এরাই হলো কুরবানীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী গোষ্ঠি। এরাই ইহানতকারী।
পশুর হাটগুলোকে শহরের বাইরে নেয়া:
সারা বছর শহরের রাস্তা দখল করে মিটিং, মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ মঞ্চ ইত্যাদি হচ্ছে। শোভাযাত্রা, রথযাত্রা, দুর্গাপূজা, বৈশাখী মেলাসহ বছরজুড়ে আরো কত ‘মেলা’ আর কত ‘খেলা’। এগুলোর একটিও কি শহরের বাইরে করা যায় না? যায় না, কারণ এগুলো মুসলমানদের নয়, এগুলোর সাথে ইসলাম নেই। কিন্তু বছরের মাত্র কয়েকদিনের এই কুরবানীর পশুর হাটের সাথে তো ইসলাম আছে, মুসলমানিত্ব চেতনা আছে তাইতো সবার আগে এটাকেই শহর থেকে বের করে দিতে হবে। এটাই সেই সব হিংসুটে আমলাদের অন্তরের কথা। নাউযুবিল্লাহ!
জবাইকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ করা:
কে কোনো বয়সে বিয়ে করবে, কোনো বয়স থেকে জবাই করবে ইত্যাদি আরো অনেক বিষয়েই এখন সিদ্ধান্ত দেয়া শুরু করেছে সরকার। ভাবখানা এমন যেন- তাদের উপরও ওহী নাযিল হওয়া শুরু হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! নচেত বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রে, জবাইকারীর বয়সের ক্ষেত্রে যেখানে ইসলামী শরীয়ত নির্দিষ্টতা আনেনি, সেখানে সরকার কি করে হাত দেয়? এটা কি বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানো নয়? অথচ সরকারতো বিয়েপূর্ব কথিত প্রেম-ভালোবাসা, পরকীয়া, অবৈধ মেলামেশা; টিভি-সিনেমা, ইন্টারনেটে অশ্লীলতা দেখা ইত্যাদিতে কোনো বয়স নির্দিষ্ট করেনি। এর অর্থ হলো- যে কোনো বয়স থেকেই যা খুশি সব অপকর্ম করা যাবে, তবে দ্বীন ইসলাম পালনে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! যে অজুহাতেই জবাইকারীর বয়স নির্দিষ্ট করা হোক না কেন- এটা স্পষ্টতই পবিত্র কুরবানী উনাকে ইহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শামিল। নাউযুবিল্লাহ!
কুরবানীর পশু সম্পর্কে অপ্রচার:
বর্ষা এলেই যেমনি ব্যাঙের আওয়াজ শুনা যায়- তেমনিভাবে কুরবানী এলেই কিছু গরু-ছাগলপ্রেমীদের দেখা যায়। কুরবানী এলেই ব্যাঙের মতো তারা আওয়াজ তোলে- গরুতে বিষ আছে, গরুতে এনথ্রাক্স আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সব মৌসুমী পশুপ্রেমী ব্যঙগুলো পশু বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তার না হলেও নিজেদেরকে এর চেয়ে বড় মনে করে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা কুরবানীর গরু-ছাগল নিয়ে এসব অপপ্রচারে কান না দিতে বললেও তারা(!) কিন্তু ঘ্যাঙ্র ঘ্যাঙ করেই যাচ্ছে। মূলত, কুরবানীর প্রতি তীব্র ও প্রচ-তম বিদ্বেষ থেকেই তাদের এই মৌসুমী পশুপ্রেমের সৃষ্টি।
৯৮ শতাংশ জনগোষ্ঠি মুসলমানদের টাকা-পয়সায় লালিত-পালিত হয় এদেশের সরকার ও তার মন্ত্রী, এমপি আমলারা। অথচ তারা একের পর এক এমন সব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ও ঘোষণা দিচ্ছে, যেগুলোর প্রত্যেকটিরই উদ্দেশ্য পবিত্র কুরবানী উনাকে নিয়ন্ত্রণ করা, সীমিত করা। যা প্রকাশ্যে কুরবানী উনাকে ইহানত বা তাচ্ছিল্য করার শামিল। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
সবশেষে বলতে হয়- পবিত্র কুরবানী হলো যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহপাক উনারই একটি খাছ (বিশেষ) শিয়ার বা নিদর্শন মুবারক। ইসলাম ও মুসলমানদের ঐতিহ্য। শুধু এতটুকুই নয়, যারা কুরবানী উনাকে কোনোভাবে এড়ানোর চেষ্টা করবে তাদের সম্পর্কে হাদীছ শরীফে স্পষ্ট বলা হয়েছে- ‘যারা সামর্থ্যবান হওয়ার পরও কুরবানী করবে না, তারা যেন ঈদগাহেও না আসে।’ তাহলে যারা প্রকাশ্যে পবিত্র কুরবানী নিয়ে মনগড়া আইন-কানুন চালু করতে চায়, তারা কতবড় নাফরমান, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সময় থাকতেই এসব অপসিদ্ধান্ত থেকে খালিছ তওবা করে কুরবানী উনাকে কিভাবে আরো ব্যাপকভাবে ও উৎসাহের সাথে করা যায় তার জন্য ব্যবস্থা নেয়া সরকারের জন্য ফরয। ইন্দিরা, গৌর গোবিন্দদের করুণ পরিণতি কোনো সরকারই আশা করে না। – আল ইহসান