অমুসলিমদের সম্পর্কে মহান আল্লাহর সতর্কবাণী
মাওলানা মুহম্মদ সিরাজ উদ্দীন: অমুসলিম বলা হয় তাদেরকে যারা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালাকে স্রষ্টা হিসেবে মেনে নেয়নি এবং শেষ নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসেবে কিংবা অনুসরণীয় ও আদর্শ হিসেবে অস্বীকার করে। এসব অমুসলিম বা কাফির-মুশরিক সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় মুসলমানদের প্রতি সতর্কতামূলক আয়াত নাযিল করেছেন, কাফিরদের হাক্বিকত (বাস্তবতা) সম্পর্কে বলে দিয়েছেন এবং তাদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক, ওঠা-বসা, ব্যবসা বাণিজ্য কিভাবে করতে হবে সে সম্পর্কেও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। গবেষকদের তথ্য মতে, পবিত্র কুরআনে কাফিরদের সম্পর্কে কাফির সম্পর্কে সাতশত আয়াত শরীফ রয়ছে। এখানে বিষয় অনুযায়ী কতিপয় আয়াত শরীফের বাংলা অনুবাদ তুলে ধরছি-
কাফিরদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক:
১) নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদের শত্রু (সূরা বাকারার : ৯৮)
২) ‘তোমরা (মুসলমানরা) তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে প্রথমতঃ ইহুদীদেরকে অতঃপর মুশরিকদেরকে।’ (সূরা মায়িদা: ৮২)
৩) “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা মায়িদা-৫১)
৪) “মু’মিনগণ যেন মু’মিনগণ ব্যতীত কাফেরদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহ’র কোন সম্পর্ক থাকবে না ”(সূরা আল ইমরান: ২৮)
শ্রদ্ধা কিংবা প্রশংসা করা যাবে না:
৫) হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে ভক্তি বা শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে গ্রহণ করোনা।” (সূরা মুমতাহিনা-১)
ইহুদী-খ্রিস্টান-হিন্দু-বৌদ্ধরা আমাদের ঈমান নষ্ট করতে চায় এবং এর জন্য সর্বদা চক্রান্ত করে:
৬) মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা এটাই কামনা করে যে, তারা যেরূপ কুফরী করেছে তোমরাও সেইরূপ কুফরী কর, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। (সূরা নিসা: ৮৯)
৭) “ইহুদী-নাছারা তথা আহলে কিতাবদের মধ্যে অনেকেই প্রতিহিংসাবশতঃ চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদের কোন রকমে কাফির বানিয়ে দিতে।” (সূরা বাক্বারা-১০৯)
৮) “ইহুদী-নাছারারা কখনো তোমাদের (মুসলমানদের) প্রতি সন্তুষ্ট হবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তাদের ধর্ম গ্রহণ না করবে বা অনুগত না হবে।” (সূরা বাক্বারা-১২০)
কাফিরদের অন্তরের খবর:
৯) হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও। [সূরা আল ইমরান: ১১৮]
১০) “দেখ! তোমরাই তাদের ভালবাস, কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আর আল্লাহ মনের কথা ভালই জানেন।” [সূরা আল ইমরান: ১১৯]
১১) “তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে। [সূরা আল ইমরান: ১২০]
কাফিরদের বিরুদ্ধেই জিহাদ ফরজ করেছেন আল্লাহ:
১২) “আর তাদের হত্যা করো যেখানেই তোমারা তাদের দেখা পাও, আর তাদের তাড়িয়ে দাও যেখান থেকে তারা তোমাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল, আর উৎপীড়ন যুদ্ধের চেয়ে নিকৃষ্টতর। কিন্তু তাদের হত্যা করো না পবিত্র-মসজিদের আশেপাশে যে পর্যন্ত না তারা সেখানে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, কাজেই তারা যদি তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তবে তোমরাও তাদের সাথে লড়বে। এই হচ্ছে অবিশ্বাসীদের প্রাপ্য।”-সূরা আল বাক্বারাহ (১৯১)
১৩) নবীজির সময় কাফেরদের সাথে মুসলমানদের ২৭টি যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল, যার ৯টিতে নবীজি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন।
হিন্দুদের তথা কাফিরদের দেশ থেকে বের করে দেয়া:
১৪) নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হেজাজ থেকে সমস্ত মুশরিকদের বের করে দাও।” তাই করা হয়েছিল।
১৫) খাইবারে ইহুদিদেরকে রাখা হয়েছিল এই শর্তে যে, তাদেরকে যেকোন সময় বের করে দেয়া হতে পারে। সে মুতাবিক হযরত উমর রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু তাদেরকে পরবর্তীতে বের করে দিয়েছিলেন। নাজরানের খ্রিস্টানদেরকেও তিনি রাখেননি। (সূত্র: শিবলী নোমানীর লেখা ‘আল ফারুক’)
সূরা লাহাব:
আখেরি নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়া ও উনার সম্পর্কে কুৎসা রটনা করেছিলো আবু লাহাব। মহান আল্লাহ তায়লা তা বরদাশত করেননি। তাই তিনি আবু লাহাব’এর ধ্বংস হবে এমন মর্মে সূরা লাহাব নাযিল করেছেন। এ সূরার ব্যাখ্যায় তাফসীরকারকগণ বলেন, কেয়ামত পর্যন্ত যারা আবু লাহাবের মতো বদ আমল করবে, তারাও ধ্বংস হবে।