৯০০ কোটি টাকা লুটপাট আয়োজন ওয়াসার

ওয়াসার ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের কাজে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ৯০০ কোটি বেশি চাওয়া সত্ত্বেও ‘ডিগ্রিমেন্ট-ওটিভি জেভি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঢাকা ওয়াসা। দরপত্রে থাকা অনেক শর্ত পূরণ না করলেও এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব অভিযোগ তুলে ধরে গত ২০ নভেম্বর দরপত্র পুনর্মূল্যায়নের জন্য সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ) আবেদন করে কারিগরি মূল্যায়নে চূড়ান্ত হয়ে দরপ্রস্তাব থেকে বাদ পড়া প্রতিষ্ঠান ‘ভা টেক ওয়াবাগ লিমিটেড-টেকনিকাছ রিইউনিডাস জেভি’। এ বিষয়ে ওয়াসা এবং অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য বিশ্লেষণ এবং তদন্ত শেষে সিপিটিইউ ৭ ডিসেম্বর দুই দরদাতার দরপত্র পুনঃমূল্যায়নের রায় দিলেও তা মানছে না ঢাকা ওয়াসা। এ ব্যাপারে প্রকল্পটির পরিচালক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি অর্থায়ন করছে এডিবি। তাই এডিবির গাইড লাইন অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। এখানে সিপিটিইউয়ের রায় কার্যকর হবে না। আর সিপিটিইউ-এর রায় কার্যকর করতে গেলে এডিবির টাকা চলে যাবে, ঢাকা শহর মরুভূমি হয়ে যাবে। প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ৯০০ কোটি টাকা বেশি চাওয়া প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে পরে আমরা কিছু অনুষঙ্গ যোগ করেছি, এজন্য প্রকল্প খরচ বেড়েছে।

বাড়তি টাকার জোগান কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এডিবির সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় মেঘনা নদীর পানি পরিশোধন করে ঢাকাবাসীকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করবে ঢাকা ওয়াসা। ২০১৫ সালের মার্চে ২ হাজার ১৯৮ কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই টেন্ডারে বিভিন্ন দেশের ৯টি প্রতিষ্ঠান কারিগরি তথ্য এবং দরপত্র জমা দেয়। এই প্রকল্পের কারিগরি মূল্যায়নে বিভিন্ন রকমের ত্রুটি বিচ্যুতি তুলে ধরে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়। কারিগরি মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হওয়া প্রতিষ্ঠান দুটো হলো, ডিগ্রিমেন্ট-ওটিভি জেভি এবং ভা টেক ওয়াবাগ লিমিটেড-টেকনিকাছ রিইউনিডাস জেভি। কিন্তু হঠাৎ করে কারিগরি মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হওয়া ভা টেক ওয়াবাগ লিমিটেড-টেকনিকাছ রিইউনিডাস জেভিকে বাদ দিয়ে শুধু ডিগ্রিমেন্ট-ওটিভি জেভির দরপত্র গ্রহণ করে ওয়াসা। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে দরপত্র জমা দেয় প্রায় ৩ হাজার ৯৪ কোটি টাকায়। তবুও এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে খুব দ্রুত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের কাছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন যে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশিতে দরপ্রস্তাব করেছে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, মেঘনা নদীর পানি পরিশোধন করে তা ঢাকা শহরে সরবরাহ করা। এই পরিশোধনের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে মেঘনা থেকে পানি তুলে নারায়ণগঞ্জের বিশনন্দীতে রিজার্ভারে রাখা হবে। সেখানে পানি থেকে ময়লা সরিয়ে নেওয়া হবে ট্রিটমেন্ট প্লান্টে। প্লান্টে পানি পরিশোধন প্রক্রিয়া শেষে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি টেনে আনা হবে রূপগঞ্জের গন্ধবপুরে। এরপর গন্ধবপুর থেকে ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ করবে ওয়াসা।

সরকারের পাশাপাশি প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এবং এজেন্সি ফ্রান্সচেইজ ডি ডেভেলপমেন্ট (এএফডি)। সিপিটিইউ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রখ্যাত দুজন বিশেষজ্ঞসহ কমপক্ষে তিনজনের ‘কারিগরি সাব কমিটি’ গঠনের আদেশ দিয়েছিল। এই কমিটিকে দুজন দরদাতার চূড়ান্ত কারিগরি প্রস্তাব পুনঃমূল্যায়ন করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রিভিউ প্যানেল-২ এর চেয়ারপারসন মুহাম্মদ এনামুল কবীরের নেতৃত্বে মুহাম্মদ শামছুল আলম এবং সৈয়দ এনায়েত উল্লাহ এ রায় দেন। কিন্তু সিপিটিউয়ের রায়কে আমলে না নিয়ে নিজেদের পছন্দ মতো কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কার্যক্রম সম্পন্ন করছে ঢাকা ওয়াসা। ঢাকা ওয়াসা সিপিটিইউয়ের রায় মানতে অস্বীকৃতি জানানো সম্পর্কে জানতে চাইলে সিপিটিইউয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, সিপিটিইউ হচ্ছে নিম্ন আদালত। তাই কেউ যদি রায় মানতে না চায় তাহলে তাকে উচ্চ আদালতে রিভিউ প্যানেলকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করতে হবে। আর এডিবির নীতিমালা বলবৎ থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের যে কোনো প্রতিষ্ঠান দেশীয় আইন মেনে চলবে। এডিবি, বিশ্বব্যাংক যেই হোক না কেন তাকে সিপিটিইউয়ের রায় মেনেই কাজ করতে হবে। -নয়া দিগন্ত