ইতালিতে শক্তিশালী ভূমিকম্প, নিহত অন্তত ২৪৭
ডেস্ক: ইতালির মধ্যাঞ্চলে গতকাল বুধবার ভোরে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে বহু ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পে নিহত হয়েছে অন্তত ২৪৭ জন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩৬৮ জন। আরও বহু লোক ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের (ইউএসজিএস) হিসাব অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ২। এর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পার্বত্য এলাকার বেশ কিছু গ্রাম।
মধ্যাঞ্চলের উমব্রিয়া, মার্খে এবং লাজিও অঞ্চলে ভূমিকম্প ব্যাপকভাবে আঘাত হানে। এই অঞ্চলগুলোতে ২০০৯ সালেও ভূমিকম্প হয়েছিল। সরকারি বাহিনী জন সুরক্ষা ইউনিটের (সিভিল প্রোটেকশন ইউনিট) জরুরি বিভাগের প্রধান ইম্মাকোলাতা পোস্তিগ্লোনি বলেন, ‘এখনো অনেক লোক নিখোঁজ রয়েছেন। অনেকেই আটকা পড়ে আছেন।’ প্রাচীন শহর আমাত্রিচে ও কাছের আকুমোলিতেই বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
ভূমিকম্প আঘাত হানা গ্রাম ইল্লাকার অধিবাসী গিদো বোর্দো (৬৯) বলেন, ‘আমার বোন আর তাঁর স্বামী ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকা পড়েছে। আমরা উদ্ধারকারীদের জন্য অপেক্ষা করছি। তবে তারাও আসছে না।’ বোর্দো বলেন, ‘ধ্বংসস্তূপের ভেতরে কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না ওদের। ভূমিকম্পের সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। ঘটনার পর আমি বাড়িতে যাই। বোনের দুই বাচ্চাকে উদ্ধার করা গেছে। ওরা হাসপাতালে।’
গতকালের ভূমিকম্পটি ২০০৯ সালের পর ইতালির সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। ওই বছর লা আকুইলা শহরে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৩০০ মানুষ নিহত হয়। গতকাল যে অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে তা লা আকুইলার দক্ষিণে। যুক্তরাজ্যের ওপেন ইউনিভার্সিটির প্ল্যানেটারি জিও সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড রথারি বলেন, গতকালের ভূমিকম্পের ধরন ২০০৯ সালের মতোই। দুটি ভূমিকম্পই সৃষ্টি হয়েছে ভূপৃষ্ঠের কম গভীরে।
এ দুর্যোগের পর ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি তাঁর নির্ধারিত ফ্রান্স সফর বাতিল করেছেন। সামগ্রিক পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি দেশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকার কাছের শহর আমাত্রিচের মেয়র সের্গেই পিরোজ্জি বলেন, ‘পরিস্থিতি বেশ জটিল। অনেক মানুষ মারা গেছে। আমার শহর আর নেই।’
ভূমিকম্প উত্তর-দক্ষিণ জুড়ে প্রায় সারা দেশেই অনুভূত হয়। আঘাত হানা এলাকা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরের রাজধানী রোম নগরেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। সিভিল প্রোটেকশন বিভাগের প্রধান ফ্যাব্রিজিও কার্সিও এই ভূমিকম্পকে ‘মারাত্মক’ বলে অভিহিত করেছেন।
মার্খের কাছাকাছি এলাকা পেসকারা দেল ত্রন্তো ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল। এলাকাটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বলে জানান স্থানীয় এক মেয়র আলেন্দ্রো পেত্রুসি। ওই এলাকা থেকে ১০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও লাশ পাওয়ার আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকারীরা।
ইউএসজিএস বলেছে, ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। প্রথম আঘাতের এক ঘণ্টা পর ৫ দশমিক ৪ মাত্রার একটি পরাঘাত অনুভূত হয়। তার পরও বিভিন্ন মাত্রার পরাঘাত অব্যাহত ছিল।