ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রেই কেবল সংখ্যালঘুদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় : নেজামী

নিউজ নাইন২৪, ঢাকা: ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রেই কেবল সংখ্যালঘুদের জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। ধর্মীয়, বিশেষ করে ইসলাম বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত লোকজন সংখ্যালঘুদের সাথে উদ্ধত ও অসদাচরণের স্পৃহা চরিতার্থ করার কাজে অবতীর্ণ হতে পারে না।

তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রথম মৌলিক মানবাধিকার চুক্তি বলে খ্যাত ‘মদীনা সনদে’ অমুসলিমদের  ধর্ম, দর্শন, সমাজ ও সংস্কৃতিকে পূর্ণভাবে হস্তক্ষেপমুক্ত রাখা হয়েছে।  তাছাড়া সংখ্যালঘুদের জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করে আখেরী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন যে, ‘তাদের রক্ত আমাদের মতই নিরাপদ’ তাই কলহ ভিত্তিক যে কোনো কার্যধারা ইসলামে পরিত্যাজ্য।

 ‘ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনার কারণেই সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে’ বলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে মাওলানা নেজামী রবিবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

বিবৃতিতে আইওজে চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, ধর্মভিত্তিক নয়, বরং ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক চেতনা ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনার কারণেই সমাজে ঘুষ-দূর্নীতি ও মাস্তানদের অবাধ পদচারণার সুযোগ, অপহরণ, গুম, খুন, হাইজ্যাক, প্রভৃতি অপরাধ প্রবনতা বেড়ে চলেছে অস্বাভাবিকহারে।

তিনি বলেন, এসব অপরাধের শিকার মজলুমদের আর্ত চিৎকার, আঘাত হানছে আকাশের দ্বারে উৎপীড়িতদের  আহাজারি এবং সর্বত্র ধ্বনিত হচ্ছে ক্রন্দনরোল। শুরু হচ্ছে সর্বত্র নৈতিক অবক্ষয়। অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং অপসংস্কৃতির পথ প্রশস্ত হচ্ছে। অপসংস্কৃতির দুষিত জোয়ারে শুধু সুস্থ সংস্কৃতিই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না, বরং ভেসে যাচ্ছে চিরায়ত মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চরিত্র, ধর্ম ও আদর্শ। বিপন্ন হয়ে পড়ছে নৈতিক মেরুদণ্ড। মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে নীতি-নৈতিকতায়। তাই  অপসংস্কৃতির এসব বাহন ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের অপলুপ্তি প্রয়োজন।

মাওলানা নেজামী বলেন, ধর্মভিত্তিক বিশেষ করে ইসলামী অনুশাসন অনুশীলনের মাধ্যমেই কেবল সার্বজনীন সাম্য, মৈত্রী, মানবিকতা সম্পন্ন মানসিকতা জোরদার করার মহড়া প্রদর্শিত হয় এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যবোধের চেতনাকে জাগ্রত করে। এতে পারস্পরিক সহমর্মিতার ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্বাস, চেতনা ও উপলব্ধি প্রতিবিম্বিত হয়।

তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম তৌহিদী মানুষের চিত্তকে পারস্পরিক সহমর্মিতার এক গরীয়ানের আসন দেয়। তাই ইসলাম ধর্মীয় অনুশীলন আমাদের কাছে সহযোগিতার শিক্ষার বাণী বহন করে ফেরে।

তিনি আরো বলেন,  ইসলামী অনুশাসনের ফলে মুসলিম জনতার মানসলোক ও চেতনারাজ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়। তাই ইসলাম ভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালিত হলেই কেবল সকলকে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা সম্ভব। এসব আমলের প্রতিটি কর্তব্য ঐশী বিধান এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত পথে সঠিকভাবে অনুশীলনের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হয়।

মাওলানা নেজামী আরো বলেন, ধর্মের বিশেষ করে ইসলামের অনুশীলন মানুষের অন্তরে একে অন্যের প্রতি ভালবাসা, সাম্য ও মৈত্রীর অনুভূতি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জাগ্রত করে এবং মানুষের মনে শৃংখলা, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ভুলে একত্রে জীবনযাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্যবোধ, ইত্যাদি নৈতিক ও আত্মিক গুণাবলী অর্জনে সহায়তা করে। এজন্যেই তৌহিদী জনতার চিত্তের ওপর ইসলামের প্রভাব অত্যন্ত বেশি ।

তিনি বলেন, ইসলাম অন্যের সুখ-দুঃখে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে মানুষের ঝিমিয়ে পড়া চেতনাকে শাণিত, ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক দায়বোধহীন ব্যক্তিদের কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত ও উদ্দিপ্ত করে, এবং মানুষের চিন্তা-ভাবনার জগতে বিরাজমান নৈরাজ্যের উন্নতি ঘটাতে, উন্নত মানবিক জীবন ও সমাজের মনোভূমিতে শৃংখলা আনতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিবৃতিতে ইসলামের সুমহান আদর্শের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এসব ধর্মীয় আচার-আচরণ ইসলামের আলোকে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম এবং সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে চেতনায় ও ঐতিহ্যে ইসলামের অবদানকে সামনে আনার সংগ্রামে জনগণ উজ্জীবিত হয়।