তিয়ানানমেন স্কোয়ার, চীনের পাঠ্য বই বা গণমাধ্যমেও এ নিয়ে কোন লেখা বা আলোচনা নিষিদ্ধ!

ঢাকা: ১৯৮৯ সনে বেইজিং এর তিয়ানানমেন স্কোয়ারে চীনের গণতন্ত্রপন্থীদের যে বিক্ষোভ সেনাবাহিনী ট্যাংক দিয়ে দমন করেছিল, তাতে আসলে কত লোক মারা গিয়েছিল?
চীনে সে সময়ের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লন্ডনে পাঠানো এক কূটনৈতিক বার্তায় তখন দাবি করেছিলেন, অন্তত দশ হাজার মানুষ সেনাবাহিনীর এই দমন অভিযানে নিহত হয়েছিল। এই কূটনৈতিক বার্তাটি সম্প্রতি ব্রিটেনের জাতীয় আর্কাইভ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করে থাকে এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল মাত্র দুশো জন।
কিন্তু তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত এ্যালান ডোনাল্ডের ভাষায়, “নিহতের আনুমানিক ন্যূনতম সংখ্যা হচ্ছে দশ হাজার।”
ব্রিটেনের জাতীয় আর্কাইভ থেকে ঘটনার ২৮ বছর পর এই বার্তাটি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
তবে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের দেয়া এই হিসেবে সেসময় মৃত্যুর সংখ্যা সম্পর্কে অন্যান্যদের অনুমান থেকেও প্রায় দশ গুণ বেশি।
একজন ফরাসী বিশেষজ্ঞ এবং হংকং ব্যাপটিস্ট ইউনিভার্সিটির জ্যাঁ পিয়েরে ক্যাবেস্টান অবশ্য মনে করেন ব্রিটিশদের এই আনুমানিক হিসেব যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য, কারণ সম্প্রতি অবমুক্ত করা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক  দলিলেও এ ধরণের সংখ্যার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।
“তখন বেইজিং-এ যে পরিমাণ মানুষের সমাগম ঘটেছিল তাতে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের এই রিপোর্ট অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়।”
জ্যাঁ পিয়েরে ক্যাবেস্টান নিজেও তিয়ানানমেন স্কোয়ারে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার সময়ের কয়েকদিন আগে থেকে বেইজিং এ ছিলেন।
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত এ্যালান ডোনাল্ডের বার্তায় চীনা সেনাবাহিনির অভিযানের নৃশংসতার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।
তিয়ানানমেন স্কোয়ারে গণতন্ত্রপন্থীদের এই বিক্ষোভ চলছিল সাত সপ্তাহ ধরে।
জুনের ৩ এবং ৪ তারিখের রাতে সেনাবাহিনী ট্যাংক নিয়ে সেখানে ঢুকেছিল।
“তিয়ানানমেন স্কোয়ারের জনতার উপর সেনাবাহিনীর আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) থেকে সরাসরি গুলি চালানো হয়। এরপর সেসব মানুষের উপর এই এপিসি চালিয়ে দেয়া হয়।”
“সৈন্যরা তিয়ানানমেন স্কোয়ারে হাজির হওয়ার পর বিক্ষোভরত ছাত্রদের সেই জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য এক ঘন্টা সময় দিয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনি কার্যত পাঁচ মিনিট পরেই তাদের আক্রমণ শুরু করে।”
বার্তায় বলা হয়, “ছাত্ররা হাতে হাত বেঁধে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু তাদের গুলি চালিয়ে ফেলে দেয়া হয়। এরপর এসব মৃতদেহের উপর দিয়ে বার বার সাঁজোয়া গাড়ি চালিয়ে পিস্ট করে ফেলা হয়। এরপর বুলডোজার দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয় দেহাবশেষ। হোস পাইপ দিয়ে পানি ছিটিয়ে পরিস্কার করে ফেলা হয় তিয়ানানমেন স্কোয়ার।”
ঘটনার প্রায় তিন দশক পরেও চীনে গণতন্ত্রপন্থীদের এই বিক্ষোভ এবং এটি দমনে সেনাবাহিনীর চালানো অভিযান নিয়ে কোন কথা বলা নিষেধ। চীনের পাঠ্য বই বা গণমাধ্যমেও এ নিয়ে কোন লেখা বা আলোচনা নিষিদ্ধ।