সহযোগিতার নামে কিছু বিদেশি মায়াকান্না দেখায়, এদের ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকুন: আইজিপি

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেখি- সিরিয়ার, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরাকের কেন এ অবস্থা। শুধু দেশ নয় বিশ্ব নিয়ে চিন্তা করুন, দেখুন- সেখানে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে। আর মায়ের চেয়ে মাসির কান্না যে বেশি, সেটাও আমরা দেখছি। আমার দেশ স্বাধীন দেশ, সরকার আছে, প্রশাসন আছে, পুলিশ আছে। কোনও ঘটনা ঘটলে আমাদের দায়িত্ব খুনিদের খুঁজে বের করা। কিন্তু অনেক দেশ এসে মায়াকান্না দেখায়। মায়াকান্না দেখিয়ে তারা চায় আমাদের পাশে আসতে। যেভাবে এসেছিল সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশের পাশে। সেসব দেশের অবস্থা আমরা দেখেছি। এজন্য এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউটে ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। ধর্মীয় উগ্রতা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং দেশের সব ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়াতে ইসলাম, হিন্দু, বোদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন এসময় উপস্থিত ছিলেন।

শহীদুল হক বলেন, আমার দেশ ধর্মীয়, নৈতিক, সামাজিক মূল্যবোধের প্রতীক। যারা বিদেশ থেকে এসে এদেশে বসবাস করেন তাদের এক্ষেত্রে শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। একটি দেশের সমাজে যখন মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়, তখন সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। যে সমাজ যে জিনিস পছন্দ করে না, সমর্থন করে না, সে জিনিস সেখানে কৌশলে বাইরের শক্তির মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তখন এগুলো সমস্যার সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে আমরা যেমন সচেতন, প্রত্যেক নাগরিককেও সচেতন হতে হবে।

আইজিপি বলেন, আমরা সম্প্রীতির কথা বলি, তারপরও কিছু মহল থাকে সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়। নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে যায়, নাশকতা চালায়, হত্যাকাণ্ড চালায়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। ইসলামের নামে যারা মানুষ হত্যা করে- তাদের বিরুদ্ধেই আমাদের অবস্থান। এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। যারা ধর্মের নামে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।

দৃঢ়ভাবে বলছি, এদেশে যেকোনও ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি, ব্যঙ্গ বা অপমানজনক মন্তব্য দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যেমন কুণ্ঠাবোধ করবো না, তেমনি ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি, মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস কোনওক্রমেই সহ্য করা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।

শহীদুল হক আরও বলেন, যারা বিদেশিদের মদদে বিভিন্ন কৌশলে অপকর্ম করছেন তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। বাংলাদেশে গত দুই বছরে জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে উৎঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। আমেরিকাও ৯/১১ এর ঘটনার রহস্য উৎঘাটন করতে পারেনি। অনেক সময় গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি করা হয়। একটি মসজিদে কোরআনের পাতা ছিড়ে ফেলা হয়। আমরা গোপনে তদন্ত করে দেখেছি জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতার নির্দেশে এসব কাজ হয়েছে, যাতে ওই এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে সরকারকে বিপদে ফেলা যায়। যারা এসব কাজ করেছিল তারাও আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সারাবিশ্বের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য ধর্মের অপব্যবহার হচ্ছে। ধর্মের নামে মানুষের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, বিশৃঙ্খলার প্রসার ঘটাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও উগ্রবাদ উথ্থানের মাধ্যমে সারাবিশ্ব আজ বিভিষিকাময় হয়ে ওঠেছে। বিশ্বায়নের আবহে বাংলাদেশের মাটিতেও উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সন্ত্রাস ও বোমাবাজির মাধ্যমে কোনও ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। বাংলাদেশে কখনো ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠী ছিল না। বর্তমানে এক শ্রেণির মানুষ অসৎ উদ্দেশ্যে ধর্মের ভুল ও অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সাম্প্রাদিয়ক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে বিভেদের দেয়াল তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এজন্য সবাইকে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে, রুখে দিতে হবে এসব অপচেষ্টাকে।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শোলাকিয়া ঈদগার ইমাম ও খতিব ফরিদ উদ্দীন মাসউদ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্মল রোজারিওসহ বিভিন্ন ধর্মের নেতারা।