রেলে পণ্য পরিবহনে আয় বৃদ্ধির সুযোগ

উদ্বোধনের দিনেই ট্রেন চলাচল করবে পদ্মাসেতুতে

চট্টগ্রাম: পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির সুযোগ বাড়ছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করায় এ সুযোগ তৈরি হয়েছে। সুযোগ গ্রহণে রেলওয়ে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নির্দিষ্ট এক্সেলের চেয়ে বেশি ওজনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নতুন নিয়ম চালু হয়। এতে রেলপথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ বাড়ছে।

জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আবদুল হাই জানান, রেলে পণ্য পরিবহননের জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা চাইলে রেলে পণ্য পরিবহন বাড়াতে পারেন।

জানা গেছে, সারাদেশে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিমাণ পণ্য পরিবহন করে রেলওয়ে। এক সময় ভারী পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেলওয়ে। কিন্তু গত এক দশক ধরে দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় রেলপথে পণ্য পরিবহন কমে যায়। রেলের হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরও পণ্য পরিবহন খাতে আয় বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রয়াত্ত্ব সর্ববৃহৎ পরিবহন সংস্থাটি।

সাম্প্রতিক বন্দর থেকে কনটেইনার পরিবহনে আলাদা একটি সংস্থাও তৈরি করেছে রেলওয়ে। কিন্তু কাঙ্খিত রাজস্ব প্রবৃদ্ধি না থাকায় রেলপথে পণ্য পরিবহনে রেলের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছিল। তবে সর্বশেষ অর্থ বছরে রেলের রাজস্ব আয় পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৪০০ কোটি টাকা আয় বেড়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সরদার শাহাদাত আলী বলেন, পণ্য পরিবহনের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ওয়াগন আছে। দ্রুত সময়ে পণ্য পরিবহনে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।

৫ টি ট্রেনে পণ্য আনা-নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আগে সময় কিছুটা বেশি লাগলেও এখন অনেক কমে এসেছে। তাই ব্যবসায়ীরা দ্রুত এবং নিরাপদ বাহন হিসেবে রেলে পণ্য পরিবহন করতে পারে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দুটি কনটেইনারবাহী ট্রেন ঢাকায় কমলাপুর আইসিডির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া আরও দুটি ট্রেন কমলাপুর আইসিডি থেকে পণ্য অথবা খালি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। একটি ট্রেন প্রতিদিন চট্টগ্রামের সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে কনটেইনার লোডিং-এ থাকে। এছাড়াও প্রতিদিন ৪ থেকে ৫টি ট্রেন খাদ্যপণ্য, জ্বালানী ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে সারাদেশে চলাচল করে।

জানা গেছে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে রেলের সর্বমোট আয় হয়েছে ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। পূর্ববর্তী অর্থ বছরে আয় হয়েছিল ৯০৪ কোটি ১ লাখ টাকা। একই সময়ে শুধুমাত্র পণ্য পরিবহন খাতে রেলের আয় বেড়েছে ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ৫ হাজার টাকা।

জানা গেছে, দেশে চলাচলরত পণ্যবাহী যানবাহনগুলোর তিন ধরনের এক্সেল রয়েছে। এর মধ্যে ৬ চাকা বিশিষ্ট ২ এক্সেলের পণ্য পরিবহনের সীমা ২০ টন থেকে বাড়িয়ে ২২ টন করা হয়েছে। ১০ চাকা বিশিষ্ট ৩ এক্সেলে ২৫ টন থেকে বাড়িয়ে ৩০ টন এবং ১৪ চাকা বিশিষ্ট ৪ এক্সেলে ৩৩ টন থেকে বাড়িয়ে ৪০ টন করা হয়েছে। সাধারণত ২ এক্সেল যানবাহনের ওজন হয় ৮ থেকে ৯ টন। ফলে প্রতিটি ৬ চাকার ট্রাক সর্বোচ্চ ১৫ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করতে পারছে।

অন্যদিকে ১০ চাকার ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানের নিজস্ব ওজন ১২ টনের হিসাবে পণ্য পরিবহনের সুযোগ পাচ্ছে ১৮ টন এবং ৪ এক্সেলের ১৪ চাকার যানবাহনের নিজস্ব ওজন ১৩ টন হিসাবে পণ্য পরিবহন করতে পারছে ২৭ টন।