নতুন ৩ সন্ত্রাসী আস্তানার সন্ধান! মৌলভীবাজারে ২, কুমিল্লায় ১ বাড়িতে অভিযান

ঢাকা: সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার সন্ত্রাসী বাড়ি ‘আতিয়া মহলে’ অভিযান শেষ না হতেই এবার মৌলভীবাজারে সন্ত্রাসী আস্তানা সন্দেহে দুটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আর কুমিল্লার কোটবাড়িতে একটি বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মৌলভীবাজারের যে দুটি বাড়ি ঘিরে রাখা হয়েছে তার একটির অবস্থান মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকায়। এটি একটি তিন তলা বাড়ি। অপর বাড়িটির অবস্থান সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজার এলাকার নাসিরপুর গ্রামে। এটি একটি একতলা পাকা বাড়ি। মঙ্গলবার গভীর রাত থেকেই বাড়ি দুটি ঘিরে রাখে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

পুলিশের ধারণা, সন্ত্রাসী আস্তানা সন্দেহে মৌলভীবাজারে ঘিরে রাখা বাড়ি দুটিতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বিস্ফোরক রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে এরই মধ্যে সব প্রয়োজনীয় কৌশল নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সন্ত্রাসী আস্তানা সন্দেহে বড়হাট এলাকার তিনতলা ও নাসিরপুরের একতলা এই দুটি ভবনের মালিক একই ব্যক্তি। তিনি হলেন লন্ডন প্রবাসী সাইফুর রহমান। গতকাল বুধবার দুটি বাড়ি ঘেরাও করার সময় তার শ্যালক মীজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মীজানুর রহমান বড়হাটে সাইফুরের বাড়ির পাশে আরেকটি বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন। তিনি সাইফুরের দুটি বাড়ি দেখাশোনা করেন।

বড়হাটের ওই বাড়িতে দুইটা ফ্লোরে তিনটা ফ্ল্যাট আছে। বড়হাটের এই বাড়িতে তিন-চার জনের মতো সন্ত্রাসী রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

অন্যদিকে নাসিরপুর গ্রামে বুধবার ভোর রাতে সন্ত্রাসী আস্তানা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে তিনটি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। এছাড়া গোলাগুলিও চলে।

নাসিরপুর গ্রামের সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী আস্তানার পাশের বাড়ি থেকে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে তথ্য জানতেই ওই ১১ জন আটক করা হয়েছে। এছাড়া এই বাড়ির ভেতরে ১১-১২ জনের মতো সন্ত্রাসী রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

জানা গেছে, নাসিরপুরের ওই বাড়িতে দুই মাস আগে প্রাণ আরএফএল-এর কর্মী পরিচয়ে মাসিক ৭ হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া নেয়া হয়। বাগান বাড়ির ভেতরে থাকা একতলা বাড়িটিতে দুজন পুরুষ, একজন নারী ও দুটি বাচ্চা থাকতো। ওই বাড়িতে ভাড়াটিয়া ছাড়াও কেয়ারটেকার জুয়েল আহমেদ ও তার ফুফাতো বোন থাকতো। এছাড়া এক রিকশাচালকও থাকে।

আজ বুধবার বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে নাসিরপুর গ্রামের সন্ত্রাসী আস্তানায় পৌঁছায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সোয়াত টিম।

কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় সন্ত্রাসী সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বাড়িটিতে প্রচুর বিস্ফোরকসহ একজন সন্ত্রাসী রয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন।

আজ বুধবার বিকালে তানভীর সালেহীন বলেন, ‘আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কোটবাড়ীর একটি বাড়িতে এক সন্ত্রাসী অবস্থান করছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী তার কাছে প্রচুর বিস্ফোরক রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্পেশাল টিমকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তারা আসলেই অভিযান চালানো হবে।’

কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় সন্ত্রাসী আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে রাখা হয়েছে। নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি চালাতে গেলে সেখানে সন্ত্রাসী আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার লোকজনও সেখানে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসী আস্তানা সন্দেহে চিহ্নিত বাড়িটির মালিকের নাম দেলোয়ার হোসেন। তিনি এক সময় সৌদি প্রবাসী ছিলেন। তার ভাই সাদ্দাম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে ঢাকাসহ সিলেটে সন্ত্রাসীবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার শিববাড়ি এলাকায় আতিয়া মহল নামের বাড়িতে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চারদিনের অভিযানে চার সন্ত্রাসী নিহত হয়।