সীমান্তে উত্তেজনা: বাংলাদেশেরও শক্তি দৃশ্যমান করার অভিমত বিশেষজ্ঞদের

ঢাকা : সীমান্তে সেনা সমাবেশ জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার অজুহাত দিয়েছে মিয়ানমার সীমান্ত বাহিনী (বিজিপি)। ঘুমধুম সীমান্তে বিজিবি’র সাথে পতাকা বৈঠকে গুলি বর্ষণের কথাও অস্বীকার করেছে তারা। বৈঠক শেষে এসব কথা জানান কক্সবাজার- ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান।

এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের ওপারে এখনো মিয়ানমারের ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন রয়েছে। নোম্যান্স ল্যান্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে অবস্থান নেয় দেশটির সেনারা। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় ফাঁকা গুলি বর্ষণও করে তারা। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য নানাভাবে তাদের চাপ দিচ্ছে মিয়ানমার সেনারা।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ঘটনায় ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ‘দ্রুত ওই এলাকা থেকে সামরিক উপকরণসহ সেনাদের সরিয়ে নিতে’ বলা হয়েছে।

দৃশ্যমান শক্তি বাড়ানোর অভিমত বিশেষজ্ঞদের-
তমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের উচিত হবে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারে জোর দাবি জানানো। একইসঙ্গে নিজেদের শক্তি আরো বাড়াতে হবে যাতে তা মিয়ানমারের কাছে দৃশ্যমান হয়। বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত দিয়েছেন।

গত দুই দিনে মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশও সীমান্তে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। এ প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্ত থেকে তাদের সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয়ার দাবি করতে হবে মিয়ানমারের কাছে এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশ যেন এমনভাবে শক্তি বৃদ্ধি করে সেটি মিয়ানমারের কাছে দৃশ্যমান হয়।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদুল ইসলাম বলেন, অবিলম্বে তাদের সেনা সরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে দাবি করতে পারে। তিনি বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে যে আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়া হয়েছে সেটি সঠিক কূটনীতি।

সীমান্তে বাংলাদেশের শক্তি বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি খুব স্বাভাবিক। একপক্ষ নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করলে অন্য পক্ষ বসে থাকবে না এবং তারাও তাদের শক্তি প্রদর্শন করবে।

মিয়ানমারে বাংলাদেশের ডিফেন্স অ্যাটাশে শহীদুল হক বলেন, আমার মনে হয় না মিয়ানমার বাংলাদেশের জন্য এই সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে, বরং জিরো লাইনে যে রোহিঙ্গারা কয়েক মাস ধরে অবস্থান করছে, তাদের ভয় দেখিয়ে সরিয়ে নেয়ার জন্য এই সমাবেশ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচিত হবে এমনভাবে শক্তি প্রদর্শন যাতে করে মিয়ানমারের কাছে সেটি দৃশ্যমান হয়।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সেনাবাহিনী সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে পারে না, কিন্তু এর মধ্যেও এমনভাবে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখানো উচিত, যাতে করে মিয়ানমার উপলব্ধি করে যে বাংলাদেশ প্রস্তুত।’
এমন পদক্ষেপ নিলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জিরো লাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের একটি আস্থার জায়গা হতো।’ কিন্তু এখন তাদেরও (জিরো লাইনে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা) মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়ায় বিশ্বাস সৃষ্টির পরিবেশ তৈরিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।