২৫ খেলাপির কাছে বকেয়া ১০৬৩৫ কোটি টাকা

ঢাকা: খেলাপি ঋণের ভারে দেশের ৭ ব্যাংক আজ প্রায় দেউলিয়া অবস্থা। দেশের শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপির নিকট বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা।

বুধবার সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৩তম বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি ড. আব্দুর রাজ্জাক সভাপতিত্ব করেন। এ সময় কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, ফরহাদ হোসেন এবং আখতার জাহান উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বলা হয়, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ৬৬৯ কোটি যার ফলে দেশের প্রথম সারির রাষ্ট্রায়ত্ব ৪টিসহ মোট ৭টি ব্যাংক দেউলিয়া হবার জোগাড়। এ ঋণ আদায়ে ব্যাংগুলো কী পরিকল্পনা নিয়েছে সে সম্পর্কে কমিটিকে রিপোর্ট দেয়া এবং সেই সাথে ব্যাকগুলোকে পূণ মূলধন জোগান দেবার বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্তেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
এছাড়া বাজারে চালসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মন্ত্রণালয়কে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়।

বৈঠকে বিগত ২২তম সভার কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ করা হয়, পঁচিশটি শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকা এবং এ খেলাপি ঋণ আদায়ে করণীয়, কার্যকরি ও সুষ্ঠু শেয়ার বাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অগ্রগতি এবং বিদ্যমান সমস্যাবলী থেকে উত্তরণের কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এ বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কী কী প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, কী উপায়ে সেগুলো দূর করা যায়, ঋণখেলাপি বন্ধে আইনের কী সংস্কার প্রয়োজন, উচ্চ আদালতের করণীয় ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে ৪৫ দিনের মধ্যে একটি বাস্তবভিত্তিক রিপোর্ট প্রদানের সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া কার্যকরি ও সুষ্ঠু শেয়ার বাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে আধুনিক সার্ভেইলেন্স সিস্টেম সংযোজন এবং সুপারভিশন ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে শেয়ারবাজারের বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্ভাবনা নেই বলে কমিটিকে জানানো হয়। সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে নতুন জনবল নিয়োগ প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে থাকায় নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না বিধায় জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।
দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নামে বেনামে নানা ধরনের সার্ভিস চার্জ আদায়, ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত সুদহার, সুপ্ত চার্জ আদায়সহ গ্রাহকদের নানা ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে আগামী বৈঠকে প্রতিবেদন প্রদানের সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ২৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ নয় হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা ৮৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্সের খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ৮৮৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের কাছে ৫৫৮ কোটি নয় লাখ টাকা, জাসমির ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেড ৫৪৭ কোটি ৯৫ লাখ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ৫১৬ কোটি ৯৪ লাখ, ঢাকা ট্রেডিং হাউজ ৪৮৫ কোটি ২৯ লাখ, আনোয়ার স্পিনিং মিলস ৪৭৪ কোটি ৩৭ লাখ, সিদ্দিক ট্রেডার্স ৪২৮ কোটি ৫৭ লাখ, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ ৪১৪ কোটি ৮০ লাখ, আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেড ৪০১ কোটি ৭৩ লাখ, লিজেন্ড হোল্ডিংস ৩৪৭ কোটি ৮৫ লাখ, হলমার্ক ফ্যাশন লিমিটেড ৩৩৯ কোটি ৩৪ লাখ, ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল ৩৩৮ কোটি ৭৪ লাখ, মুন্নু ফেব্রিক্স ৩৩৮ কোটি ৩৭ লাখ, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স লিমিটেড ৩২২ কোটি ৪ লাখ, শাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেড ৩১২ কোটি ৯৬ লাখ, নুরজাহান সুপার ওয়েল লিমিডেট ৩০৪ কোটি ৪৯ লাখ, কেয়া ইয়ার্ন লিমিটেড ২৯২ কোটি ৫৩ লাখ, সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেড ২৮৭ কোটি ১ লাখ, ফেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং লিমিটেড ২৭৩ কোটি ১৬ লাখ, এসকে স্টিল ২৭১ কোটি ৪৮ লাখ, চৌধুরী নিটওয়ার লিমিটেড ২৬৯ কোটি ৩৮ লাখ, হেল্প লাইন রিসোর্সেস লিমিটেড ২৫৮ কোটি ৩০ লাখ, সিক্স সিজন অ্যাপার্টমেন্ট লিমিটেড ২৫৪ কোটি ৫৭ লাখ, বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লিমিটেড ২৪৩ কোটি ৮৪ লাখ।