ভারতীয়দের দখলে দেশের চাকরির বাজার, দেশের মেধাবীরা বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার
নিউজ নাইন২৪ডটকম,
অনলাইন প্রতিবেদক : বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ভুয়া নাগরিকরা পুলিশে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে গণহারে । যাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাদের কাউকেই চিনেন না সেই সব এলাকার স্থানীয় লোকজন। চেনেন না, স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, এলাকার বয়স্করা লোকজন । সম্প্রতি যমুনা টিভি’র অনুসন্ধানী রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সেখানে দেখা যাচ্ছে ঢাকার কয়েকটি উপজেলা যেমন দোহার, ধামরাই এলাকার দেড় শতাধিক যুবক সম্প্রতি পুলিশে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু তারা ঐ এলাকার বাসিন্দা নন । এলাকার কেউই তাদের চিনেনও না । এমনকি তাদের দেয়া সব ঠিকানাই ভুয়া ।
একই সময় পুলিশের চাকরীর জন্য লাইনে দাঁড়ানো এক যুবকের ভাষ্য মতে, সেই অপরিচিত ব্যক্তিদের আচরণ রহস্যজনক। তাদের ভাষাও বোধগম্য নয়।
তাহলে এরা কারা?
পরিচয় গোপন করে এক জেলার লোকজন আরেক জেলার বলে পরিচয় দিচ্ছে কেন? এভাবে কোন বাংলাদেশীর চাকরী নেয়ার দরকার হয়না । অসাধু পন্থায় নিয়োগ পেতে স্থানীয় ঠিকানাইবা ভুয়া দেখাতে হবে কেন? তাদের ভাষা ভিন্ন কেন?
যমুনা টিভির ভিডিও:
এদিকে, ভুয়া ঠিকানা দিয়ে পুলিশে চাকরি নেওয়া ভুয়া নাগরিকরা বৈধ/অবৈধভাবে ভারত থেকে আসা বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়। বিভিন্ন সময়ে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অনেকেই ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ধরা পড়েছেন।
যেমন ২০১১ সালে বাংলাদেশের এক সরকারি হাসপাতালের নার্সের কাছ থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছিলো। তার ওই ভারতীয় পাসপোর্টে (নম্বর জে- ৬১২৮০৫৯) নাম লেখা ছিলো কৃষ্ণা হীরা দাশ (৩৭)। ঠিকানা- ক্ষুদিরামনগর, পোস্ট ঘোলা, ওয়েস্ট বেঙ্গল ৭০০১১১।
ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা এসআই রাশেদ জানান, গোপালগঞ্জ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স কৃষ্ণা হীরা দাশ ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে ২ লাখ টাকা নিয়ে ওই দেশে যাচ্ছেন বলে গোপন সংবাদ পাওয়া যায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। আগেভাগে অবহিত হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে জানান।
ইমিগ্রেশনের অপর একটি সূত্র জানায়, কৃষ্ণা গত মে মাসে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যাবহার করে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে যান এবং ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে ভোমরা বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
রোবাবার ২ লাখ টাকা নিয়ে ভোমারা বন্দর দিয়ে তিনি আবারও ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
ইমিগ্রেশনে পৌঁছানোর আগেই কৃষ্ণা ওই টাকা কোনো হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে আগেই ভারতে পাঠিয়ে দেন বলে ধারণা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের। এর আগেও তিনি কয়েক লাখ টাকা ভারতে পাচার করেছেন বলেও একাধিক সুত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও ২০১২ সালে এক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশের ভোটার হিসেবে ভোট দিতে যেয়ে ধরা পড়ে।
ভারতীয় নাগরিক মন্টু চন্দ নম দাস ওরফে মন্তোষ দাস কামরাঙ্গীরচরের ঠিকানা ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভোটার হয়। এ দেশে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ১৯৬৭২৬১৩৪৫১৩১০৬১৩ এবং ভোটার নম্বর ২৬১৮৯৬৩১০৬১৩। অপরদিকে ভারতের বিধানসভা নির্বাচনে তার ভোটার নম্বর হচ্ছে- ২৬৮ এবং পরিচয় নম্বর বিজিএইচ ০৪৪৭৩৯১। মন্টু চন্দ নম দাস ওরফে মন্তোষ দাস, বাবা মৃত নিধীরাম চন্দ নম দাস ওরফে নিধীরাম দাস, মা মহারানী চন্দ নম দাস ওরফে মহারানী দাস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুর মহকুমার রাধাকিশোরপুর থানার ফুলকুমারী গ্রামের ভূমিহীন কলোনির বাসিন্দা (বাড়ি নং-৫৮)। কিন্তু এ ব্যক্তি আজিজ মিয়ার বাড়ি, রোড নং ১০/০২ আশ্রাফাবাদ, থানা কামরাঙ্গীরচর, জেলা ঢাকা এবং স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম-মইনপুর, ইউনিয়ন-ময়নামতি, উপজেলা-বুড়িচং, জেলা-কুমিল্লা ব্যবহার করে বাংলাদেশে ছবিসহ ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
আরো উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে সরকারি হিসেবে মতে বাংলাদেশে প্রায় ৫ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক ছিলো এবং বাংলাদেশ থেকে তাদের পাঠানো অর্থ ভারতের টেমিটেন্সের ৫ম শীর্ষ অবস্থান দখল করেছে। এ বিষয়য়ে একাধিক বার খবর এসেছে যে- বাংলাদেশে প্রচুর বেকারত্ব থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় নগরিকরা বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির উচ্চপদগুলো দখল করে নিচ্ছে।
এভাবে বৈধ-অবৈধ ভারতীয় নাগরিকদের দখলে চলে যাচ্ছে দেশের চাকরির বাজার। দেশের মেধাবীরা হচ্ছেন বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার। দেশীয় বড় বড় কোম্পানি ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি ভারতীয়দের একচেটিয়া নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে ওয়ার্কপারমিট নিয়ে গার্মেন্ট, বায়িং হাউস, এয়ারলাইন্স ও বিভিন্ন বিপণন প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক ভারতীয় কাজ করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বিভিন্ন জেলার ভূয়া স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে গণহারে নিয়োগ হচ্ছে পুলিশেও। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় এদের আয়ের সঠিক হিসাব নেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে। ফলে মোটা অঙ্কের বেতন-ভাতা পেলেও রাজস্ব দিতে হয় না এসব অবৈধ বিদেশির। আবার বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ পদের প্রায় সবই ভারতীয় নাগরিকের দখলে থাকায় বাংলাদেশী নাগরিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তারা। নিয়ে দেশ থেকে পাচার করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। বাংলাদেশে একাধিক বহুজাতিক কোম্পানির অফিসে খোঁজখবর নিয়ে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।