নগরদরিদ্ররা জীবনমান উন্নয়নে কতটা সুযোগ পাচ্ছে?

 

ঢাকা: যারা শহরমুখী হয়ে বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছেন, তারা তাদের জীবনমান উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ পাচ্ছে না। বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সামাজিক সুরক্ষা না থাকায় দিনের পর দিন তাদের জীবনধারা একইরকম থাকছে। ফলে দেশে সামাজিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন নগরদারিদ্র্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এসব মানুষকে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সহায়তা না দিলে তাদের পক্ষে নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়।

২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বস্তিবাসীদের নিয়ে একটি জরিপ করে। সেই জরিপে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর বস্তি এলাকায় বসবাসকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯৭ সালে সংখ্যাটি ছিলো ১৩ লাখ ৯১ হাজার। ২০১৪ সালে তা প্রায় ৮ লাখ বেড়ে দাঁড়ায় ২২ লাখ ৩২ হাজারে।

জরিপে দেখা যায়, বস্তিগুলোতে যারা থাকেন তাদের অর্ধেকই শহরে আসে কাজের খোঁজে। বাকি ৩৫ শতাংশ আসেন দারিদ্র্য ও নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে। কিন্তু শহরে আসার পর তাদের জীবনমানে খুব একটা উন্নতি হয় না।

নগরদারিদ্র গবেষক ও পাওয়ার অ্যন্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এর নির্বাহী সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান মনে করেন, দারিদ্রের শিকার এসব মানুষের জন্য যে ধরণের সামাজিক সুরক্ষা দরকার ছিলো তা নেই।

তিনি বলছিলেন, শহরগুলোতে একধরণের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। ফলে মানুষজন এখানে আসছে। কিন্তু ঐ কর্মসংস্থান থেকে তারা যে আয় করছে, সেই আয় থেকে তাদের মানসম্মত জীবনযাপনের সুযোগ হচ্ছে না। পরিবেশ, নগরনীতি, আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, এলিট শ্রেণির ব্যবহার সবিকিছু মিলয়েই এটা হচ্ছে।”

নগরদরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হয় মূলত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে।

যেমন, মহাখালির কড়াইল বস্তিতে দেখা গেলো সেখানে শিক্ষার সুযোগ বলতে কিছু ছোট ছোট স্কুল। যেগুলোতে মূলত পড়ানো হয় পঞ্চম শ্রেণি, কোন কোন ক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর আর পড়ানোর সুযোগ নেই।

এছাড়া বস্তিগুলোতে বসবাসকারীদের স্বাস্থ্যের অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানীর বেগুনটিলা বস্তিতে শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং নারী স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে জরিপ তথ্য সংগ্রহ করে তারা দেখতে পান, এসব এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেই। দারিদ্রের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বিশেষত মা ও শিশুরা।

বস্তি এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, শুধু যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, বাসস্থান কিংবা নিম্ন আয় নিয়ে ভুগছে এখানকার মানুষ, তা নয়। বরং মানবিক সংকটেও রয়েছেন তারা।

কিন্তু নগর দরিদ্রদের এই যে পিছিয়ে পড়া সেখান থেকে তাদের টেনে তুলবে কে? আর কিভাবেই বা তা সম্ভব?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলছিলেন, এই উদ্যোগ রাষ্ট্র ও সমাজেই নিতে হবে। তিনি বলছিলেন, বর্তমান বিশ্বে সামাজিক ন্যায়বিচার কিংবা জীবনমান উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার মূলত: দুইটি। প্রথমটি হচ্ছে, শিক্ষা। দ্বিতীয়টি স্বাস্থ্য।ৃনগরদরিদ্যদের জন্য মানসম্মত কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ দিতে হবে।

তার মতে, দরিদ্রদের জন্য ন্যুনতম এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে পারলে তারা তাদের জীবনমান নিজেরাই উন্নত করে নিতে পারবে।