ভারতের স্বার্থে কাজ করছে ২৬৫টি মিডিয়ার নেটওয়ার্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৬৫টিরও বেশি দেশে ২৬৫টির বেশি স্থানীয় ভুয়া নিউজ সাইট পরিচালনা করছে ভারতের একটি নেটওয়ার্ক।
আপনি কিভাবে বুঝবেন যে, newyorkmorningtelegraph.com, thedublingazette.com, বা timesofportugal.com এর মতো ওয়েবসাইটগুলো ভারতের স্বার্থ রক্ষা করছে?
আমরা এই নেটওয়ার্কটির কর্মকাণ্ডকে ফাঁস করেছি, যেগুলো অব্যাহতভাবে পাকিস্তানের সমালোচনা করে ইইউ এবং জাতিসংঘকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে।
অক্টোবরের শুরুর দিকে, ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশান সার্ভিসেসের ইস্ট স্ট্র্যাটকম (ইইউ ডিসইনফরমেশান টাস্ক ফোর্স) জানায় যে, ব্রাসেলসের ইউরোপিয় পার্লামেন্টের জন্য স্বঘোষিত ম্যাগাজিন eptoday.com রাশিয়া টুডে এবং ভয়েস অব আমেরিকা থেকে বিপুল পরিমাণ প্রতিবেদন পুনঃপ্রকাশ করছে। এই সিন্ডিকেটেড সংবাদের মধ্যে আমরা অপ্রত্যাশিতভাবে দেখতে পেয়েছি যে, পাকিস্তানের সংখ্যালঘু ও ভারত সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে একটা বড় সংখ্যক নিবন্ধ ও মতামত সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
ইইউ ডিজইনফোল্যাচ দ্রুত আবিস্কার করে যে, ইপি টুডে পরিচালিত হচ্ছে ভারতীয়দের দ্বারা। এবং এদের সাথে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, এনজিও ও শ্রীবাস্তব গ্রুপের কোম্পানিগুলোর একটি বড় নেটওয়ার্কের যোগাযোগ রয়েছে।
সার্ভার, আইপি অ্যাড্রেস, এবং টুইটার একাউন্টগুলোর সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে আমরা 4newsagency.com এর খোঁজ পেয়েছি, যারা নিজেদেরকে সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, থাইল্যান্ড ও আবু ধাবির চারটি বার্তা সংস্থার সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবে দাবি করে, এবং “১০০টি দেশে যাদের টিম রয়েছে”। আবারও আমরা এগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে ইপি টুডে এবং টাইমস অব জেনেভার মতো একই বৈশিষ্ট্য দেখতে পেয়েছি:
- কনটেন্স সিন্ডিকেশান (একই বিষয়ে বারবার প্রকাশ করা)
- যোগাযোগের ঠিকানাগুলো একটি অফিস স্পেসের মধ্যে অবস্থিত
- ভারত-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের অত্যধিক কাভারেজ।
4newsagency.com এর সূত্র ধরে এবং ইপি টুডে এবং শ্রীবাস্তব গ্রুপের একই সার্ভারের অন্যান্য এনজিও ও থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়ে আমরা ৬৫টিরও বেশি দেশে ২৬৫টির বেশি মিডিয়ার নেটওয়ার্কের সন্ধান পাই, যেগুলো একই ধরনের বৈশিষ্ট্য সম্বলিত।
এই সব ওয়েবসাইটগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের কতগুলো হলো নিম্নরূপ:
- এগুলোর অধিকাংশই বিলুপ্ত কোন সংবাদপত্র বা কোন বড় মিডিয়ার নামের আদলে নামকরণ করা;
- বেশ কিছু সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন তারা পুনরায় প্রকাশ করে (কেসিএনএ, ভয়েস অব আমেরিকা, ইন্টারফ্যাক্স);
- ভারত সম্পর্কিত একই ধরনের ঘটনার কাভারেজ করছে তারা;
- বিভিন্ন ভারতীয় নেটওয়ার্ক থেকে পাকিস্তান-বিরোধী খবর তারা পুনরায় প্রকাশ করে (এর মধ্যে রয়েছে ইপি টুডে, ৪নিউজএজেন্সি, টাইমস অব জেনেভা, নিউ দিল্লী টাইমস);
- অধিকাংশ ওয়েবসাইটের টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
কেউ ভাবতে পারেন: কেন তারা এই সব ভুয়া সংবাদ মাধ্যম তৈরি করেছে? এই সাইটগুলোর সংবাদ এবং যেভাবে সেগুলো শেয়ার করা হয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায়:
১. বিশেষ ঘটনা ও সমাবেশের সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে প্রভাবিত করা;
২. এনজিওগুলোকে তাদের উপযোগি তথ্য দেয়া যাতে তারা আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে প্রভাব ফেলতে পারে;
৩. কয়েক স্তরের মিডিয়া আউটলেট গড়ে তোলা, যারা একে অন্যের সংবাদ পুনঃপ্রকাশ করে, এবং পাঠকের জন্য তাদের অপকৌশল ধরা কঠিন হয়ে পড়ে, এবং কখনও কখনও এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহায়তার একটা ‘ভ্রম’ তৈরি করা হয়;
৪. পাকিস্তান সম্পর্কিত একই ধরনের তথ্য বারবার প্রকাশ করে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর জন্য ওই তথ্যগুলোকে সহজলভ্য করে তোলা হয় এবং এর মাধ্যমে জনমানুষের ধারণাকে প্রভাবিত করা হয়।
-সাউথ এসিয়ান মনিটর