দায়িত্ব ঋণলে গেছে ঢাকা দক্ষিণের ৯ কাউন্সিলর!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসি’র ৯ জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে করপোরেশনের বোর্ড সভায় একনাগাড়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি করপোরেশনের বিভিন্ন কাজে তাদের দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের অনেকেই নিজ নিজ ওয়ার্ডের নাগরিকদের সমস্যায় এগিয়ে আসেন না। কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকেই তারা নিজের দায়িত্বও ঋণলে গেছেন।

এছাড়া অনুপস্থিত থাকা এই কাউন্সিলরদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ও জুয়াসহ এলাকায় নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে কাউন্সিলরদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, তাদের কোনও কাজ না দেওয়ায় এবং ঠিকাদারের কাজে স্বাক্ষর দিতে না পারায় তারা অভিমান করে বোর্ড সভায় যোগ দিচ্ছেন না।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে ডিএসসিসিতে মোট ১৯টি সভা অনুষ্ঠিত হলেও উল্লিখিত কাউন্সিলররা তাতে একাধারে তিন থেকে আটটি পর্যন্ত বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থেকেছেন। কেউ কেউ ১৪-১৫টি সভায় অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই-একজন দুই-একবার ছাড়া বাকিরা অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে কেউ পূর্বানুমতিও নেননি। এরই মধ্যে একাধারে করপোরেশন সভায় অনুপস্থিত কাউন্সিলরদের একটি তালিকা করেছে ডিএসসিসি। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই তালিকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হতে পারে। আইন অনুযায়ী যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে তাকে বরখাস্ত করা যাবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পুরনো ৫৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মধ্যে ৯ জন করপোরেশনের নিয়মিত বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকেন। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, তাদের বেশিরভাগই নগরীতে অবৈধ ক্যাসিনো, জুয়ার আসর ও ফুটপাতের অবৈধ বাডুজ্য নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। রাতভর তারা এসব অপকর্ম করেন, আর দিনের বেলা ঘুমিয়ে কাটান। করপোরেশনের বোর্ড সভাগুলো যেহেতু দিনে অনুষ্ঠিত হয়, সে কারণেই তারা উপস্থিত থাকতে পারেন না। অভিযোগ আছে, এই কাউন্সিলরদের অনেকেই সরকারের অনুমোদন না নিয়ে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন।

স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, মেয়র অথবা কাউন্সিলর তার স্বীয় পদ হতে অপসারণযোগ্য হবেন, যদি তিনি যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে সিটি করপোরেশনের পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন। দেখা যাচ্ছে, উল্লিখিত ৯ জন কাউন্সিলর একাধারে তিনটি থেকে শুরু করে আটটি সভা পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এখনও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এছাড়া, বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে ২০১১ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জরি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ/পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর সদস্যরা, সিটি করপোরেশনের কমিশনাররা এবং পৌরসভার মেয়ররা বিদেশ ভ্রমণে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর অনুমোদন নেবেন। কিন্তু আলোচিত কাউন্সিলররা বিদেশে গেলেও মন্ত্রণালয়ের কোনও অনুমোদন নেননি।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, যদি কোনও কাউন্সিলর একাধারে করপোরেশনের তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে প্রথমে তাকে নোটিশ করে পরে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেবে। মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ কারণে তাদের অপসারণও করা যাবে। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটার পরেও কেন তারা আইনের আওতায় আসছে না, বিষয়টি হতাশাজনক।