২১ শতকের মিউনিখ মোমেন্টের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

মুসলমানদের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেছে ব্রিটিশরা

নিউজ ডেস্ক : গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তৃতাটি ছিল ইতিহাসের বইয়ে স্থান পাওয়ার মতো এবং দেশটির বিশ্ব পর্যায়ে দ্রুত উত্তরণের পথনির্দেশক। দক্ষিণ এশিয়ার এই নেতা চারটি প্রধান বিষয় তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্নীতিবিরোধিতা, ইসলামফোবিয়া ও ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে অবনতিশীল মানবীয় পরিস্থিতি। প্রথম তিনটি থিমগতভাবে শেষটিতে নিয়ে গেছে। ইমরান খান জানিয়েছেন, কিভাবে তার সরকার খাইবার পাখতুনখাওয়ায় কয়েক বিলিয়ন বৃক্ষ রোপণ করেছিল এবং পরে গত বছরের নির্বাচনে জয়ের পর দেশব্যাপী পরিবেশবান্ধব নীতি প্রণয়নে কার্যকর করা হয়েছিল। এই বিশ্লেষণে ওই চমৎকার বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হবে।

দুর্নীতিবিরোধিতা নিয়ে তার বক্তৃতার দ্বিতীয় অংশে কিভাবে পাশ্চাত্যের সহযোগিতায় পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত এনে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যবহার করে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা দেখিয়েছেন।

ইমরান খানের তৃতীয় বিষয়টি ছিল ইসলামফোবিয়া। তিনি ইসলামফোবিয়ার মূল ব্যাখ্যা করেছেন, কথা বলার স্বাধীনতাকে কিভাবে মহানবী সা.-কে অপমান করার জন্য ব্যবহার করে মুসলিমদের স্পর্শকাতরতায় আঘাত হানে তাও তুলে ধরেছেন।

তার বক্তৃতার দ্বিতীয়াংশ ছিল কাশ্মীরবিষয়ক। তার বক্তৃতার এই অংশটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি কাশ্মীরকে ভারতের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়ার ঘটনাকে নাৎসি জার্মানির সাডেটেনল্যান্ড দখলের সাথে তুলনা করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে ২১ শতকের মিউনিখ মোমেন্ট এমনকি পরমাণু যুদ্ধও সৃষ্টি করতে পারে যদি নয়া দিল্লি ফুয়েরারের পদাঙ্ক অনুসরণ তার প্রতিবেশী দেশকে আক্রমণ করে। এই তুলনা তাত্ত্বিক কোনো কিছু নয়। কারণ পাকিস্তানি নেতা দেখিয়েছেন, কিভাবে বিজেপির মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস, মোদি এর আজীবন সদস্য) হিটলারের বর্ণবাদী বিদ্বেষে উদ্দীপ্ত হয়েছে এবং কোথায় এটি সফল হয়েছে ও কোথায় ব্যর্থ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্বকে এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে এই আরএসএসই গান্ধীকে খুন করেছে। তিনি বিশ্বকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এ কারণেই গুজরাটে আরএসএস সন্ত্রাসীরা ২০০২ সালে মুসলিমবিরোধী রক্তাক্ত নির্যাতনের সময় ওই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা মোদি তাদের সমর্থন করেছেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, কাশ্মীর উপত্যকায় ৮০ লাখ লোককে, তারা প্রধানত মুসলিম, ৫০ দিন ধরে তাদের বাড়িতেই বন্দী করে রাখার পরও মোদি কেন বিবেক যন্ত্রণায় দংশিত হচ্ছেন না, সেটিও দেখিয়েছেন।

পাকিস্তানি নেতা ভারতের আরেকটি হামলার আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছেন। তার মতে, এটি হবে পুলওয়ামা-পরবর্তী পাকিস্তানে হামলার মতো।। কাশ্মীরে কারফিউ তোলার পরই তেমন একটি ঘটনা ঘটিয়ে পাকিস্তানে হামলা করাটি ‘যৌক্তিক’ করা হবে। মোদি যদি পরিস্থিতিকে উত্তেজনাকর করতেই চান, তবে দুই দেশ আরেকটি পরমাণু যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে।

তাকে যাতে সতর্কতাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করা না হয়, সেজন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্রমবর্ধমান হারে বেপরোয়া হতে থাকা কাশ্মীরীদের অবস্থাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তারা যে ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে রয়েছে, তাতে তারা বা তাদের ১৩০ কোটি সহধর্মাবলম্বী যদি বন্দুক তুলে নেয়, তবে তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। ভারত যদি পাকিস্তানে হামলা করে এবং তা যদি গতবারের মতো কয়েকটি গাছকে হত্যা (গতবার ভারত ওই কাজটিই করেছিল) না করে সত্যিই মানুষ হত্যা করে পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়াকে উস্কে দেয়। ভারত ওই পথ বেছে নিয়ে পরমাণু যুদ্ধের দিকেই যাবে দুই দেশ।

তিনি বলেন, পাকিস্তানকে যদি আত্মসমর্পণ করার দিকে ঠেলে দেয়া হয়, তবে পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে, আর এর ফলে যে পরমাণু যুদ্ধ হবে তার প্রভাব সারা বিশ্বে পড়বে। এ কারণেই হিটলারকে যেভাবে জাতিপুঞ্জ তোষণ করেছিল, সেভাবে ভারতকে তোষণ করা বন্ধ করার জন্য তিনি জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কাশ্মীর দখল করে বিশ্ব সংস্থাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছে ভারত। কাশ্মীরে গণভোট আয়োজনের অনেক প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ভারত ওই পথে হাঁটেনি।

ভারতের ১.২ বিলিয়ন লোকের বিশাল বাজারে প্রবেশজনিত আগ্রহ থেকে উদ্ভূত অসৎ উদ্দেশ্য থেকে বিরত থেকে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভারতের ইসলামফোবিক নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে বলেন, কাশ্মীরে জাতি নির্মূল অভিযান থামানোর অনুরোধ করেন। আর তা না করা হলে মোদিকে আরো বেপরোয়া করে তুলবে। কাশ্মীরের ৮০ লাখ লোকের ওপর এই ভয়াবহ নীতি প্রয়োগ করা অব্যাহত থাকলে ভারতের ১৮ কোটি মুসলিম চরমপন্থার দিকে ঝুঁকতে পারে বলে আশঙ্কার সৃষ্টি হবে।

কাশ্মীর সঙ্কটের সাথে নজিরবিহীন ঝুঁকি সম্পৃক্ত করে এবং চরম দায়িত্বশীলতার সাথে এর সমাধানে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলে দেশটি বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে তার ক্রমবর্ধমান অবস্থান জোরদার করেছেন। ইমরান খান যদি কেবল আবেগময়ভাবে ইসলামের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতেন, তবেই বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তা যথেষ্ট হতো।