নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের আর্থিক সহায়তার সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে নাগরিক সমাজ। একইসঙ্গে বঙ্গোপসাগর ও ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা যাতে সংসার চালাতে পারেন, সেই জন্য তাদের বিকল্প আয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলেও অভিমত প্রকাশ করেন তারা। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এ সুপারিশ জানান।
মূল প্রবন্ধে কোস্ট ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক মজিবুল হক মনির বলেন, মৎস্যসম্পদ রক্ষা, বিশেষ করে ইলিশ রক্ষায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ফলে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরতে না পারায় ও বিকল্প কোনো আয়েরও সুযোগ না থাকায় প্রান্তিক অনেক জেলেকেই সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সরকার প্রতি মাসে নিবন্ধিত প্রায় চার লাখ জেলের প্রত্যেককে ৪০ কেজি করে চাল দিচ্ছে। কিন্তু অনেক জেলে এখনও নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে। এছাড়া চালের পরিবর্তে নগদ আর্থিক সহায়তা এক্ষেত্রে অধিকতর কার্যকর হতে পারে।
কক্সবাজার মৎস্যশ্রমিক জোট নেতা মিজানুর রহমান বাহাদুর বলেন, দেশের সম্পদ বাড়াতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার যে উদ্যোগ, সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু দরিদ্র জেলে পরিবারগুলোকে সঠিকভাবে বাছাই করে, তাদের সংসার চালানোর জন্য প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
ভোলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা নিষেধাজ্ঞা মেনে সাগরে না গেলেও, ভারতের জেলেরা এই সময় আমাদের এখানে এসে প্রচুর ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাই নিষেধাজ্ঞার ওই সময়টি কবে হবে, কতদিন থাকবে, সেটি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সংগতি রেখে করতে হবে।
বরগুনা থেকে আগত মৎস্যশ্রমিক প্রতিনিধি এসএম জাকির হোসেন বলেন, অনেকে জেলে না হয়েও জেলে কার্ড পেয়েছে। জেলে কার্ড সংশোধন করে প্রকৃত জেলেদেরকে কার্ড দিতে হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সামুদ্রিক মৎস্য) ড. আবু হাসনাত বলেন, বিশাল সমুদ্র বিজয়ের সুফল পেতে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার সুফল বাংলাদেশ পাচ্ছে। কীভাবে প্রান্তিক জেলেদের সম্পৃক্ত করে এই নিষেধাজ্ঞা আরও সফল করা যায়, তা নিয়েও সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, আমাদেরকে মৎস্য সম্পদ রক্ষা করতে হবে এবং এই সম্পদ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে যে, এই সম্পদ বাড়ানোর পরিকল্পনায় যেন সবার সম্পৃক্ততা থাকে। কেউ যেন এর কারণে পিছিয়ে না পড়ে। তবেই কেবল এই উদ্যোগ টেকসই হতে পারে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে ইলিশের উৎপাদন কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে। এই উৎপাদন আরও বাড়াতে বঙ্গোসাগরকে নিরাপদ-দূষণমুক্ত রাখতে হবে। সমুদ্রে চলাচলকারী প্রায় ৬০ হাজার জাহাজের কারণে সমুদ্র দূষিত হচ্ছে। এটা আমাদের মৎস্য সম্পদের জন্য বড় হুমকি।