সীমন্ত হাট এখন ভারত থেকে আসা অবৈধ অস্ত্রের বাজার
নিউজ ডেস্ক : সীমান্ত হাট যেন এখন এক অবৈধ অস্ত্রের বাজার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আড়ালে এই হাটে চলে অবৈধ অস্ত্র বিকিকিনি। চোরাকারবারিরা এসব অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা সন্ত্রাসীদের কাছে। ঘটছে চাঁদাবাজি, রাহাজানি এবং খুনাখুনির মতো ঘটনা। যানা গেছে ভারতের মেঘালয়ের লাকাটঘাট থেকে সীমান্ত দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আসা হয়।
সিলেটের বিছানাকান্দি সীমান্তে সোনারহাট ও ভারতের মেঘালয়ের লাকাটঘাট সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সীমান্ত হাটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি কেনাবেচা হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। দুই হাত ঘুরে ঢাকায় আসা অত্যাধুনিক তিনটি রিভলবারসহ তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর গোয়েন্দারা জানতে পারে নতুন এই রুটের তথ্য। ১২ চেম্বারের দুটি অত্যাধুনিক রিভলবার দেখেও রীতমতো বিস্মিত তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নজরদারি নিশ্চিত না হলে সীমান্ত হাটগুলো নিয়ে আরও প্রশ্ন উঠতে পারে। সেখানে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখ এড়িয়ে বিছানাকান্দিতে গড়ে ওঠা অবৈধ সীমান্ত হাট নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন তারা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সিলেটের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এ এম এম খায়রুল কবীর বলেন, দেখুন এখানে কোনো সীমান্ত হাট নেই। বিট বা খাঠালের জন্য একটি জায়গা দুই দেশের অনুমতি সাপেক্ষে প্রস্তুত হচ্ছে। খুব শিগগিরই হয়তো এটা উদ্বোধন হবে। আর সীমান্ত হাটের বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
জানা গেছে, রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার ১৬ রাউন্ড গুলিসহ ১২ চেম্বারবিশিষ্ট পয়েন্ট টু টু বোরের দুটি রিভলবার এবং ৬ চেম্বারের পয়েন্ট থ্রি টু বোরের একটি রিভলবারসহ পেশাদার তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও প্রতিরোধ টিম। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অস্ত্র ব্যবসায়ী দোলন মিয়া (৩৮), সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের বাসিন্দা আবদুস শহীদ (৪০) ও আনছার মিয়া (৪০)।
এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়। পরে শুক্রবার গ্রেফতার তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় সিটিটিসি। গ্রেফতারকৃতদের তথ্যের বরাত দিয়ে সিটিটিসি’র অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিছানাকান্দি এলাকার সোনারহাট সীমান্ত হাট থেকে কেনা অস্ত্রই হাত বদলের মাধ্যমে ঢাকায় এসেছিল।
প্রথমে ভারতের মেঘালয়ের লাকাটঘাটের এক খাসিয়া ব্যক্তি সীমান্তে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আড়ালে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে আসে। চাহিদা অনুযায়ী সিলেটের বিছানাকান্দি নোয়াগাঁওয়ের আরব আলী এসব অস্ত্র নিয়ে এসে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে সরবরাহ করে। সে আরও জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলেও আরব আলী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আমিনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তবে আমরা অবাক হয়েছি ১২ চেম্বারের টু টু বোরের রিভলবার দেখে। বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত ছয় চেম্বারের রিভলবার তৈরি করে থাকে। উদ্ধার করা রিভলবারের গায়ে ইউএসএ লেখা থাকলেও আমাদের ধারণা সীমান্তবর্তী দেশেই এগুলো তৈরি করা হয়েছে। এই অস্ত্রগুলো নাশকতার কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল বলেও জানতে পেরেছি আমরা।
সূত্র বলছে, উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বেশি থাকায় অস্ত্র ব্যবসায়ীরা এখন সিলেটের গোয়াইনঘাটের রুট বেছে নিয়েছে। রবিবার বাদ দিয়ে সপ্তাহে দুই দিন পরপর বেলা ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, মাসে অন্তত দুটি চালান তারা নিয়ে আসেন আরব আলীর কাছ থেকে। প্রতিটি চালানে থাকে কমপক্ষে দুটি অস্ত্র। আরব আলীর কাছ থেকে আবদুস শহীদ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় কিনে ৭০-৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। অস্ত্রগুলো সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আমীনের কাছে পৌঁছানোর কথা ছিল। আবদুস শহীদ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এবং আনছার মিয়া একই উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। শহীদের বাড়ি জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ ইউনিয়নের টিয়ারগাঁও গ্রামে। তার বাবা প্রয়াত আবদুল জলিল। আর আনছার মিয়া একই ইউনিয়নের ঘোষগাঁও গ্রামের প্রয়াত মন্তাজ মিয়ার ছেলে। আনসার মিয়া জগন্নাথপুর থানা যুবদলের যুুগ্ম-আহ্বায়ক। পলাতক আমিন মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে।