দেশেই তৈরি হবে যুদ্ধজাহাজ: দেশের সম্পদ ও বিশ্বশান্তি রক্ষায় ভূমিকা রাখবে ৩ যুদ্ধজাহাজ -প্রধানমন্ত্রী

নিউজ নাইন২৪ডটকম, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের বিশাল নৌসীমার সুরক্ষায় নৌবাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা বাড়াতে নৌবহরে সংযোজিত হলো নতুন তিনটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ। বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ বানৌজা ‘স্বাধীনতা ও বানৌজা ‘প্রত্যয়’ নামের জাহাজ তিনটির কমিশনিং শেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের সম্পদ ও বিশ্বশান্তি রক্ষায় ভূমিকা রাখবে এই তিন যুদ্ধজাহাজ।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাজের অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। এরমধ্যে দিয়ে যুদ্ধজাহাজ তিনটি নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করল। জাহাজ তিনটি নৌবাহিনীতে অন্তর্ভূক্তির ফলে দেশের বিশাল নৌসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সমুদ্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধ, গভীর সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা বৃদ্ধি, মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদক সংরক্ষণ, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ব্লকসমূহে অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সার্বিকভাবে দেশের ব্লু -ইকোনমি উন্নয়নে সহায়ক হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

কমিশনিং অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীকে একটি আধুনিক শক্তিশালী ও সক্ষম ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রূপান্তরে বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও যুদ্ধবহর বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌবাহিনীর নিজস্ব বিমানঘাটিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়সমূহ গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা ও দূর্যোগ মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আধুনিক নৌবাহিনীর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি তা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। সদ্য সংযোজিত ‘সমুদ্র অভিযান, ‘স্বাধীনতা’ ও ‘প্রত্যয়’ যুদ্ধজাহাজ তিনটি দেশের সম্পদ রক্ষা, নিজ নৌসীমায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং বিশ্বশান্তি রক্ষায় আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে দেশের নৌবাহিনী আরও এক ধাপ এপিয়ে গেলো। তিনি বলেন, এই সব জাহাজের প্রয়োজন কেবলই নৌবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্যই এগুলো কাজে লাগবে। সদ্য সংযোজন করা বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং বানৌজা ‘স্বাধীনতা ও ‘প্রত্যয়’ গণচীন থেকে আনা হয়েছে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নৌ ঘাঁটি বানৌজা ঈশাখাঁ-এ এসে পৌঁছালে নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল এম আখতার হাবীব তাকে স্বাগত জানান।

বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ জাহাজটি ঘণ্টায় প্রায় ২৯ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। অন্যদিকে বানৌজা ‘স্বাধীনতা ও ‘প্রত্যয়’ নামের আধুনিক ক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ দুটি বিমান বিধ্বসী কামান, জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইল এবং সমুদ্র তলদেশের টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম।

নৌবাহিনী সূত্র জানায়, বানৌজা সমুদ্র অভিযান বাংলাদেশ নৌবহরের ৯ম ফ্রিগেট স্কোয়াড্রনের দ্বিতীয় যুদ্ধজাহাজ। এই স্কোয়াড্রনের প্রথম যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ‘সমুদ্র জয়’ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশনিং করা হয়। ৩ হাজার ৩১৩ টন ওজনের সমুদ্র অভিযান যুদ্ধ জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১১৫ মিটার। জাহাজটিতে ২টি ডিজেল ইঞ্জিন এবং ২টি গ্যাস টারবাইন রয়েছে। অপরদিকে গণচীন থেকে আনা করভেট ক্লাসের মিসাইল ফ্রিগেট ‘স্বাধীনতা’ ও ‘প্রত্যয়’ জাহাজ দুটি দৈর্ঘ্যে ৯০ মিটার যা সর্ব্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম।

নৌবাহিনীতে এ বছরই আসছে দুটি সাবমেরিন-

প্রধানমন্ত্রী শনিবার চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর তিনটি যুদ্ধজাহাজের কমিশনিং অনুষ্ঠানে বলেছেন, চলতি বছর নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে একে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস ঈশা খাঁয়ে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত বানৌজা স্বাধীনতা, বানৌজা সমুদ্র অভিযান ও বানৌজা প্রত্যয়-এর কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরই ধারাবাহিকতায় না.গঞ্জ শিপইয়ার্ডে নিজস্ব প্রযুক্তিতে সাবমেরিনের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দেশে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম ড্রাই ডকে যুদ্ধজাহাজ তৈরির পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের সরকারের আমলে নৌবাহিনীতে মেরিটাইম হেলিকপ্টার এবং মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট সংযুক্ত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি দ্বি-মাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে।’ নৌবাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে আরও দুটি করভেট চীনে নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও তিনি জানান।

দেশেই যুদ্ধজাহাজ তৈরি হবে-

নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করতে দেশেই যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন। শনিবার নৌবাহিনীতে তিনটি নতুন যুদ্ধজাহাজ অন্তর্ভুক্তির অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমাদের সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দেশে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম ড্রাই ডকে যুদ্ধজাহাজ তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

চলতি বছরই বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর বহরে প্রথমবারের মতো ডুবোজাহাজ (সাবমেরিন) আসছে।

চট্টগ্রামের বিএন ফ্লোটিলায় এই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই প্রসঙ্গ তুলে নৌবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, চলতি বছরে নৌবাহিনীতে সংযোজিত হতে যাচ্ছে বহু আকাঙিক্ষত দুটি সাবমেরিন।

“এরই ধারাবাহিকতায় না.গঞ্জ শিপইয়ার্ডে নিজস্ব প্রযুক্তিতে সাবমেরিনের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে।” যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া যুদ্ধজাহাজ ‘সমুদ্র অভিযান’ এবং চীনের তৈরি ‘স্বাধীনতা’ ও ‘প্রত্যয়’- এর ‘কমিশনিং’ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা নৌবাহিনীকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিটি সদস্যের নৈতিক মূল্যবোধ ও পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, নৌবাহিনীর অবস্থান আরও সুসংহত এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে ‘শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

নৌবাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে আরও দুটি করভেট চীনে নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করতে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

স্থলভাগের সম্পদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “তাই সারা বিশ্বের নজর এখন সমুদ্র সম্পদের দিকে। বর্তমান সরকারও ব­ু ইকোনমির মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।”

বর্তমানে বাণিজ্যিক কর্মকান্ড জ্যামিতিক হারে বাড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ বাণিজ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হলো সমুদ্রপথ। আমাদের সরকারের উদ্যোগে আজ বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের রয়েছে সুনির্দিষ্ট সামুদ্রিক এলাকা। “দেশের এই বিশাল সমুদ্র এলাকায় বাণিজ্য পরিচালনা ছাড়াও আছে মৎস্য,খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ পদার্থসহ মূল্যবান সম্পদ।” ভৌগোলিক অবস্থান ও কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের এই জলসীমা ও তার সম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনীকেই ভূমিকা রাখতে হবে- বলেন প্রধানমন্ত্রী।