কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো অবস্থায় নেই -অর্থমন্ত্রী

* ভারতীয় বিশেষজ্ঞ রাকেশ আস্তানার কাজের পরিধি কমানো হবে

* কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো অবস্থায় নেই

* জানেন না বলে দায় এড়াতে পারেন না

নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা:বাংলাদেশ ব্যাংকে ৮১০ কোটি টাকা লুটের ঘটনায় তদন্তকারীদের চোখে সন্দেহ ভাজন ব্যক্তি সদ্য নিযুক্ত ভারতীয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ রাকেশ আস্তানাকে অপসারণ নয়, কাজের পরিধি কমানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ দেয়া ভারতীয় নাগরিক রাকেশ আস্তানার কাজের পরিধি কমানো হবে। একজন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগের বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। অনলাইনে সামাজিক গণমাধ্যমগুলোতেও তার বহিস্কার ও গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করছেন অনেকেই। এর প্রেক্ষিতে গতকাল সাংবাদিকদের কাছে ভারতীয় ওই বিশেষজ্ঞের কাজের পরিধি কমিয়ে আনার কথা জানালেন অর্থমন্ত্রী।

Bangladesh Bank

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো অবস্থায় নেই –

অর্থ লোপাটের খবর গোপন করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরসহ তিন শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনার পর দেশের আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে ঠিক কীভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঢেলে সাজাতে চান তা স্পষ্ট না করে নতুন গভর্নরকে সেই দায়িত্ব দেওয়ার ইংগিত দেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, নতুন গভর্নর সম্ভবত ১৯ অথবা ২০ মার্চ দায়িত্ব নেবেন। তিনি এখন নিউ ইয়র্কে আছেন, ১৮ মার্চ দেশে ফিরবেন। নতুন গভর্নর আসার পরে তিনি নিজেকে সেটেল করতে কিছু সময় নেবেন। তখন উনি আরও (সংস্কারের বিষয়গুলো) দেখবেন।

এছাড়া সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোথায় কোথায় সংস্কার প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখবে বলেও জানান মুহিত। ফেব্রুয়ারির শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার সুইফট ‘মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে’ ফিলিপিন্সে সরিয়ে ফেলা হলেও বাংলাদেশের মানুষ বিষয়টি জানতে পারে মার্চের শুরুতে বিদেশি পত্রিকার খবরে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় এক মাস বিষয়টি চেপে রাখায় ক্ষুব্ধ মুহিত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললে মঙ্গলবার চাপের মুখে সরে যেতে হয় সাত বছর ধরে গভর্নরের দায়িত্ব পালন করে আসা আতিউর রহমানকে। সেই দায়িত্ব পান সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফজলে কবির, যিনি এক সময় সরকারের অর্থ সচিব ছিলেন।

আতিউর সরে যাওযার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা ও আবুল কাশেমকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমকেও সরিয়ে দেয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রী মুহিত। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গতকাল আসলামকে ওএসডি করে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য ইউনুসুর রহমানকে ব্যাংক সচিব করার আদেশ জারি করে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব পদাধিকার বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। তবে অর্থ লোপাটের ঘটনায় সচিব জড়িত ছিলেন না বলেই মুহিতের বিশ্বাস। তারপরও তাকে সরিয়ে দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, এখানে প্রিন্সিপালটা হলো- সচিব হবেন ভিজিলেন্ট। সো ইউ শুড নো অ্যাবাইট ইট, দুর্ভাগ্যবশত নোবডি নিউ।

নতুন দুজন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা লম্বা প্রোসেস। কারণ এটাতে সার্চ কমিট হয়। সার্চ কমিটি নোমিনেশন দেয়, তারপরে নিযুক্তি হয়, সো এটা সময় লাগবে।

জানেন না বলে দায় এড়াতে পারেন না-

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন সচিব হিসেবে এম আসলাম আলমের বিষয়টি জানা উচিত ছিল বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তাই তিনি কোনোভাবেই এই দায় এড়াতে পারেন না। গতকাল সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিকেরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব পদ থেকে কেন এম আসলামকে সরানো হলো?

জবাবে মন্ত্রী বলেন, তিনি যেহেতু সচিব ছিলেন বিষয়টি তাঁর জানা উচিত ছিল। জানেন না বলে তিনি দায় এড়াতে পারেন না। তাই তাঁকে সরানো হলো।

বেসরকারীকরণ কমিশনের সদস্য ইউনুসুর রহমানকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আজ এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। একই প্রজ্ঞাপনে এম আসলাম আলমকে ওএসডি করা হয়েছে।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ফজলে কবীর ১৯ বা ২০ মার্চ দায়িত্ব নেবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি ১৮ মার্চ দেশে ফিরবেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের যাবতীয় বিষয় দেখভাল করবেন। মন্ত্রী বলেন, নতুন দুই ডেপুটি গভর্নর নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের কাজটি তিনিই (গভর্নর) করবেন। এটি অবশ্য সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।