৬ মাসে বিনিয়োগ বাড়লো এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা

৬ মাসে বিনিয়োগ বাড়লো এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা

নিউজ ডেস্ক: ছয় মাস আগে হতাশার কেন্দ্রবিন্দু ছিল দেশের শেয়ারবাজার। বর্তমানে সেই বাজার টেকসই বাজারে রূপ নিচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে টেকসই হবে পুঁজিবাজার। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) তিনি একটি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে এই ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, বিএসইসি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা দেবে।

এদিকে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। গত সপ্তাহে সবকটি মূল্যসূচক বৃদ্ধি পাওয়ায় টানা চার সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকলো শেয়ারবাজার। চার সপ্তাহের এই টানা উত্থানের ফলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এরমধ্যে গত সপ্তাহেই বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে শেয়ারবাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৬ মাসে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৯ কোটি টাকা। গত জুলাই মাসের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। আর গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ১৬ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৮ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে টানা চার সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়লো ৩৫ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৬ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। তার আগের দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ১১ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা এবং ৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘যখন অন্য কোথাও বিনিয়োগের জায়গা না থাকে, তখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ে।’ এখন এমন একটি সময় যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার বর্তমান কর্মকাণ্ডে অনেকেই শেয়ারবাজারের প্রতি আশাবাদী হচ্ছেন।’

ড. জায়েদ বখতের মতো আশাবাদী ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী। তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন আইপিও আসছে, যার সুফল এখন পাওয়া যাচ্ছে।’ বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ার পেছনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেওয়া বেশ কিছু উদ্যোগ বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি।

কতটা দুর্বল ছিল শেয়ারবাজার

বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৪ জুন দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে মোট লেনদেন হয় মাত্র ৪২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার, যা ছিল গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন।এর আগে ২০০৭ সালের ২৪ এপ্রিল ডিএসই-তে ৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়। শুধু তাই নয়, পতন ঠেকাতে এর আগে ৬৬ দিন বন্ধ থাকে শেয়ারবাজার।

নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ

৬৬ দিন বন্ধ থাকার সময়েই প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। তারপর থেকেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আশার আলো দেখতে থাকেন। এরপর নতুন করে লেনদেন শুরুর প্রথম দিনেই (৩১ মে) দুই বাজারে মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা ভালো বাজারের স্বপ্ন দেখেন। বছরের পর বছর ধরে টাকা হারানো সেই বাজার এখন শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে সোয়া লাখ কোটি টাকার বেশি মূলধন যুক্ত হয়েছে বাজারে।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত জুলাই মাসের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। আর গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা।

এদিকে, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১১০ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৩ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ১১৯ দশমিক ৮২ পয়েন্ট এবং তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ১০৫ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। অর্থাৎ চার সপ্তাহের বড় উত্থানে ডিএসই’র প্রধান সূচক বাড়লো ৩৪৮ পয়েন্ট।

এদিকে প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকেরও উত্থান হয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৭৮ দশমিক ১২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৩ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট । তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট এবং তারও আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ৩৭ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট ।

আর ইসলামি শরিয়াহর ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১০ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট। তার আগের সপ্তাহে বেড়েছিল ১৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট এবং তারও আগের সপ্তাহে বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট ।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। দাম কমেছে ৭৯টির। আর সাতটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১২৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৯১৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৬২৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৬৫৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।