২০২২-২৩ অর্থবছর: বেশ কিছু পণ্যের স্বনির্ভরতায় চমক থাকছে বাজেটে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে এবার উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে বেশ কিছু পণ্যের স্বনির্ভরতা আশা করা হচ্ছে। আসন্ন নতুন বাজেটে কৃষি খাতে প্রণোদনা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে প্রণোদনা বাড়ছে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।

কৃষিপণ্য উৎপাদনের ৬ খাতে ১০ বছরের কর অবকাশ:
কৃষিপণ্য উৎপাদনের ৬ খাতে ১০ বছরের কর অবকাশ থাকছেই। চলতি অর্থবছরে শর্তসাপেক্ষে ফল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন, সম্পূর্ণ দেশীয় কৃষি হতে শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী শিল্প এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে নতুন বিনিয়োগে ১০ বছরের করমুক্তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

মূলত, দেশীয় কৃষিভিত্তিক শিল্পে বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিজাত পণ্যের আমদানি বিকল্প তৈরির মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশ ও কমর্সংস্থান সম্ভব। অর্থনীতি গতিশীল করার পাশাপাশি নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন উদ্যোগ সৃষ্টি ও তরুণদের আরও সেখানে অর্ন্তভুক্ত করাই এর উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অর্থাৎ আগামী ২০৩০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে যারা এ খাতে বিনিয়োগ করবেন, তারা এই আয়কর অব্যাহতির সুবিধা পাবেন বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা বলেছেন।
করমুক্তি সুবিধা নিতে ন্যূনতম এক কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বিডার নিবন্ধন নিতে হবে। কাঁচামাল পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হতে হবে।

সারে ভর্তুকি ১৫ হাজার কোটি টাকা:
সরকার আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাসায়নিক সারের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কৃষকের স্বার্থসুরক্ষা ও খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জনস্বার্থে সরকারের নেওয়া ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে সার প্রণোদনা (ভর্তুকি) বাড়িয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও অর্থবছর শেষে এই বরাদ্দ বাড়াতে হতে পারে বলে মনে করছেন বাজেট সংশ্লিষ্টরা।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কৃষককে সার ও বীজসহ কৃষি উপকরণে প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২০০৮-০৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত তথা বিগত ১৩ বছরে শুধু সারেই সরকার ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকিতে ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল।

এদিকে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরকার সারবাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ রেখেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিল পর্যন্ত সরকারের প্রকৃত ভর্তুকি প্রায় ১৩ হাজার ৩৩২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যদিও ভর্তুকি বেড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভোজ্যতেলে স্বনির্ভরতার চিন্তা:
ভোজ্যতেলে স্বনির্ভর হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পুরোপুরি না হলেও আপাতত আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে অন্তত ৫০ শতাংশ দেশীয় উৎস থেকে ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা ভাবা হচ্ছে। এ কারণে আগামী বাজেটে সরিষা চাষ ও রাইস ব্র্যান ওয়েলের কাঁচামাল ধানের তুষ বা কুঁড়া সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্যাকেজের ঘোষণা আসতে পারে বাজেটে। এছাড়া উৎপাদন বাড়াতে গবেষণা, মানসম্মত বীজ সরবরাহ ও উৎপাদনে বিশেষ প্রণোদনা বা ভর্তুকির জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকবে। যাতে উৎপাদন খরচ কমিয়ে খুচরা পর্যায়ে দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে রাখা যায়। পাশাপাশি ভোক্তাদের এসব তেলের ব্যবহার বাড়াতে উৎসাহমূলক প্রচারণারও ব্যবস্থা করা হবে। অর্থাৎ একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকবে আসছে বাজেটে।

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এজন্য বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রাইস ব্র্যান ওয়েল কিংবা সরিষার তেলের উৎপাদন বাড়াতে থাকছে বিশেষ নজর। এছাড়া ভালো মানের বীজ সরবরাহ কিংবা মাঠপর্যায়ের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ারও চিন্তাভাবনা থাকছে।
এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘ভোজ্যতেলে আমরা বিশ্ববাজারের কাছে জিম্মি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বাজেটে এমন পরিকল্পনা থাকা উচিত, যাতে দেশীয় উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন। তিনি বলেন, রাইস ব্র্যান অয়েলের কাঁচামাল সম্পূর্ণ দেশীয়। তবে দেশীয় হলেও এর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ফলে বাজারে এর দাম সয়াবিনের তুলনায় বেশি। এ কারণে রাইস ব্র্যান অয়েল এখনও জনপ্রিয়তা পায়নি। দাম বেশি হওয়ায় অনেক উৎপাদক প্রতিষ্ঠান তা রফতানির দিকে ঝুঁকছে। এই তেলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং উৎপাদন খরচ কমাতে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে।’