হিজড়াদের চাঁদাবাজি ও দৌরাত্ম্য

রাজশাহী সংবাদদাতা: ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রাজশাহী নগরীর হিজড়ারা। হিজড়াদের যেখানে সেখানে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। এরা পুলিশ-প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই দেদারছে নগরীতে এ কাজ করছে। হিজড়া হলে চাঁদাবাজি করা যায়, আর হিজড়াদের মধ্যে যাদের লিঙ্গ নেই তাদের আবার চাঁদার পরিমাণ বেশি। অর্থাৎ লিঙ্গ না থাকলে মানুষের সামনে কাপড় খুলে ফেলে। তাই নিরুপায় হয়ে মানুষ চাঁদা দিয়ে বিব্রত হওয়া থেকে রক্ষা পান। তাই হিজড়াদের মধ্যে অনেকে লিঙ্গ কর্তন করে ফেলে। তবে এই লিঙ্গ কর্তনের প্রবণতার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

হিজড়াদের একটি সূত্র জানিয়েছে, লিঙ্গ কর্তনকে উৎসাহিত করতে নগরীর কাদিরগঞ্জে অনুরাগ কমিউনিটি সেন্টারে ‘বাড়াইয়ের উৎসব’ নামে একটি উৎসবের আয়োজন করেছে হিজড়ারা। এজন্য তারা তিনদিনের জন্য ওই কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নেয়। এর উদ্যোক্তা হীরা খান ও সেলিনা ওরফে সেলু নামের হিজড়াদের দুই গুরু। সম্প্রতি হীরা খান তার লিঙ্গ কর্তন করেছে। নগরীর কাজলা এলাকায় তার তিনতলা বাড়ি আছে। তার সন্তান-সন্ততিও আছে। সূত্র জানিয়েছে, সন্তান-সন্ততি থাকা সত্ত্বেও নিজেকে গুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই হীরা খান তার লিঙ্গ কর্তন করেছে। লিঙ্গ কর্তন করলে আয় বেশি হয়। কারণ এতে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করা সহজ হয়।

সূত্র জানিয়েছে, লিঙ্গ থাকলে উলঙ্গ হয়ে চাঁদা আদায় করা কঠিন হয়। লিঙ্গ না থাকলে চাঁদা আদায় করা সহজ। সাধারণ মানুষ চাঁদা দিতে না চাইলে এরা দ্রুত উলঙ্গ হয়ে যায়। তখন চাঁদা দিতে বাধ্য হয় সাধারণ মানুষ। আগে হিজড়ারা সাধারণত কোনো বাড়িতে সন্তান হলে চাঁদা নিয়ে আসতো। কিন্তু এরা এখন এতই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে যে, রাজশাহী মহানগরীর পাড়া-মহল্লা, বাসাবাড়ি, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, পার্ক ও যানবাহন সর্বত্রই চাঁদাবাজি করে। এতে অতিষ্ঠ ও ভীত-সন্ত্রস্ত নগরবাসী।

এরা এতই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে যে, গত রমযান মাসে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল হোসেনের উপর হামলা চালায়। এ সময় হিজড়ারা ওই শিক্ষকের বাম হাত ভেঙে দেয়। এছাড়া তিনি ঘাড়ে গুরুতর আঘাত পান। এ ব্যাপারে শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট মতিহার থানাকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছিলাম। লিখিত অভিযোগ করিনি। পরবর্তীতে আবারো হিজড়াদের সংঘবদ্ধ আক্রমণের ভয়ে সবার পরামর্শে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থেকেছি।

হিজড়াদের উৎসব করার জন্য অনুরাগ কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নেয়ার খবরটি নিশ্চিত করে সেন্টারের কর্তৃপক্ষ প্রতীম ঘোষ বলেছে, ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টা পর্যন্ত হিজড়ারা কমিউনিটি সেন্টারটি ভাড়া নেয়ার জন্য বুকিং করেছে। বুকিং বাবদ এ পর্যন্ত তারা ১০ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখা (সিটিএসবি) জানিয়েছে, উৎসব করার অনুমতি চেয়ে কোনো চিঠি হিজড়াদের কাছ থেকে তারা পাননি। সিটিএসবি’র পরিদর্শক রাশিদুল ইসলাম বলেন, হিজড়াদের কাছ থেকে এমন কোনো চিঠি তারা পাননি।

হিজড়া সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীতে আড়াইশ’র মতো হিজড়া আছে। এদের মধ্যে ৫০ জন বিভিন্ন বাসা, অফিস ও বাজারে গিয়ে চাঁদা আদায় করে, ১০০ জন যৌনপেশার সঙ্গে যুক্ত, ১০ জন ট্রেনে টাকা তোলে ও ৪০ জন ভাসমান অবস্থায় ঘুরে বেড়ায়।

এই হিজড়াদের নিয়ন্ত্রণ করে এক একজন গুরু। এই গুরুদের একেকজনের অধীনে রয়েছে ১০/১২ জন করে হিজড়া। এই হিজড়াদের আয়ের ৫০ শতাংশ পায় গুরুরা। একেকজন গুরু মাসে ২৫/৩০ হাজার টাকা করে আয় করে বলে সূত্র জানায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই গুরুদের অনেকেই প্রকৃত হিজড়া নয়। এদের কারো কারো পরিবার, সন্তান-সন্ততি রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গুরুরা জোর করে হিজড়াদের বিভিন্ন অপকর্মে ব্যবহার করে।

অনুরাগ কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত বাড়াইয়ের উৎসবের কথা স্বীকার করে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক সেলিনা খাতুন ওরফে সেলু বলেছে, উরস উপলক্ষে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছি। সেখানে নাচ-গান ও খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান হবে। অনেক বড় আয়োজনÑ দেশের সব জেলা ছাড়াও দেশের বাইরে ভারত থেকেও লোক আসবে।

বাড়াইয়ের উৎসবটি লিঙ্গ কর্তন উপলক্ষে কিনা জানতে চাইলে সে ক্ষেপে গিয়ে বলে যে, ‘এসব কথা আপনাকে কে বলেছে, তার ঠিকানা দেন, আর আপনি সামনাসামনি এসে কথা বলেন।’ যেই বলুক না কেন, অনুষ্ঠানটি কী লিঙ্গ কর্তন উপলক্ষে হচ্ছে কিনা আবারো জিজ্ঞেস করলে সে গালিগালাজ করতে থাকে।

সে বলে যে, ‘লিঙ্গ কর্তন করি আর যাই করি আপনার জানার দরকার কী, আপনে সামনে এসে কথা বলেন। আপনার নাম্বার আছে আপনাকে দেখে নেবো।’

অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা হীরা খানও অনুষ্ঠানের সত্যতা স্বীকার করে বলেছে, উরস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। অনুষ্ঠানের দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হিজড়া কমিউনিটির লোকজন আসবে। সেখানে সারা রাত নাচ, বাউল গান ও খাবার বিতরণ হবে। এই অনুষ্ঠান আমরা ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে করে আসছি। ‘বাড়াইয়ের উৎসবের’ কথা বলতেই সে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে যে, ‘আপনি হিজড়াদের ভাষা কোথায় পেলেন, কে আপনাকে বলেছে। কেউ না বললে তো আপনে এই ভাষা পাবেন না।’ একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হীরা খানও গালিগালাজ শুরু করে দেয়। সে বলে যে, ‘লিঙ্গ কর্তন করি, আর যাই করি তাতে আপনাদের কী? আপনাদের ইচ্ছা হলে আপনারাও কেটে ফেলুন।’ প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে সে বলেছে, ‘পুলিশ কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছি।’