হাতেগোনা কয়েকজনের জন্য সব ডিসিদের দুর্নাম : হাইকোর্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক : মধ্যরাতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘সাংবাদিকের ওপর যে নিযার্তন হয়েছে তার জন্য আমরা লজ্জিত। এখন আমাদের উদ্দেশ্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।’
তখন আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দণ্ড স্থগিত করা হয়েছে, রুল জারি করেছি, ভালোভাবে প্রস্তুতি নেন। আপনারা বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত সেবা দিবেন।’ তখন আইনজীবী আদালতকে ধন্যবাদ জানালে আদালত বলেন, ধন্যবাদ দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা আমাদের কর্তব্য করেছি।
এ সময় সাংবাদিককে ঘর থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে আদালত বলেছেন, সব ডিসি এক না। হাতে গোনা কয়েকজন ডিসির জন্য ডিসিদের দুর্নাম হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত।
কুড়িগ্রামের সাংবাদিক নির্যাতন সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।
আদালতে সাংবাদিক আরিফের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
শুনানিতে সাংবাদিক আরিফুলকে নির্য্তানের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে কিনা জানতে চান আদালত। জবাবে আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, মামলা করেনি। তবে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন কিন্তু তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি। তখন আদালত বলেন, ‘এখন দণ্ড স্থগিত করা হয়েছে, রুল জারি করেছি প্রস্তুতি নেন। পরে দেখা যাবে।’
শুনানিতে থানায় দায়ের করা অভিযোগে ডানহাত পক্ষাঘাতগ্রস্থ থাকা সত্ত্বেও আরিফুল ইসলাম কিভাবে স্বাক্ষর করলেন সে বিষয়ে জানতে চান আদালত। এসময় আদালতে উপস্থিত আরিফুল ইসলাম জানান, আমি বামহাত দিয়ে অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছি।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমার বক্তব্য শোনেন। তিনি আদালতকে বলেন, আমরা কেউই আইনের ঊর্ধে নই। তখন আদালত বলেন, ধন্যবাদ, রাষ্ট্রপক্ষের কাছ থেকে যখন এমন কথা বলা হয় তখন আমাদের ভালো লাগে।
প্রতিকার চাকমা আদালতকে বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বিভাগীয় প্রক্রিয়া গ্রহণ করছে। অভিযোগটি গ্রহণ করা হবে নাকি হবে না সে বিষয়ে কুড়িগ্রামের এসপির সঙ্গে কথা বলেছি।
তখন আদালত বলেন, যেকোনো সাধারণ নাগরিক বা যে কেউ যখন থানায় অভিযোগ দিতে যাবে তখন তা অন্তর্ভুক্ত করে তদন্ত করাই তার (ওসি) দায়িত্ব। সেখানে আরিফুল ইসলামের মতো সাংবাদিকের এই অবস্থা (সাংবাদিকের অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ না করা) হলে সাধারণ মানুষের কি হবে? থানায় ফোন করে দিলেও অভিযোগ নিতে হবে। তারপর তদন্ত করে জানাবে কী আছে কী নেই। অভিযোগ গ্রহণ করা তার প্রধান দায়িত্ব। ক্রিমিনাল মামলায় সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওনার (সাংবাদিক আরিফুল) বিচার পাওয়ার ডিমান্ড নষ্ট হবে। আসামীরা এর বেনিফিট পাবে। তখন আরিফুলকে তার নিজের পক্ষে অনেক কিছু প্রমাণ করা নিয়ে কত কাহিনী হবে। ফৌজদারি অপরাধের বিচার এখানে হবে, কোর্ট করবে।