‘হবু’ মেয়রদের হাতেই দূষিত নগরী!

 ‘হবু’ মেয়রদের হাতেই দূষিত নগরী!

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শহর ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বলছেন, নির্বাচিত হলে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তুলবেন। কিন্তু তাদের প্রচারণার পোস্টারে ঝুলছে পরিবেশের ক্ষতিকর উপাদান নিষিদ্ধ পলিথিন। যার কারণে নগরীর পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি আসন্ন বর্ষায় তীব্র পানিবদ্ধতাও হওয়ার আশঙ্কা করছে সিটি করপোরেশন।

সচেতন মহল বলছেন, ‘হবু’ দায়িত্বশীলদের থেকে এমন আচরণ মেনে নেওয়ার মতো নয়। তবে প্রার্থীরা বলছেন, বৃষ্টি ও কুয়াশা থেকে নিজেদের পোস্টারগুলোকে রক্ষা করতেই পলিথিন দিয়ে নিজ নিজ পোস্টার লেমেনেটিং করে নিয়েছেন তারা। প্রত্যেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচিত হলে এসব অপসারণ করবেন।

সরেজমিন নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান প্রধান সড়কগুলোতেও দেখা গেছে,দড়ি দিয়ে প্রার্থীদের লাগানো পোস্টারের ওপরে পাতলা পলিথিন মোড়ানো রয়েছে। এরমধ্যে সরকারদলীয় ও বিরোধী উভয়পক্ষের প্রার্থীদেরই পোস্টার দেখা গেছে।

পরিবেশ আইন অনুযায়ী পলিথিন উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি। পৃথিবীর কোনও দেশে নির্বাচনি প্রচারণায় পলিথিনের এমন ব্যবহার দেখা যায় না। আবার আইনে নিষিদ্ধ হলেও প্রার্থীর পোস্টার থেকে পলিথিন অপসারণের কোনও নোটিশও দিচ্ছেন না নির্বাচনে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। কোনও ভূমিকা দেখা যায়নি ভ্রাম্যমাণ আদালত বা পরিবেশ অধিদফতরেরও।

পোস্টারকে সাময়িক সুরক্ষা দিলেও পলিথিনের ভয়াবহতা টের পাওয়া যায় প্রধানত বর্ষা মৌসুমে। এর যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে বর্ষায় ড্রেন ও নালা ভরাট হয়ে পানিবদ্ধতা বাড়ে। অতীতের নির্বাচনগুলোতেও কোনও কোনও প্রার্থী পলিথিন মোড়ানো লেমিনেটেড পোস্টার লাগালেও তা সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ তেমন একটা দেখা যায়নি। ফলে রোদে বৃষ্টিতে ভিজে একসময় পোস্টারগুলো ছিঁড়ে পড়ে গেলে সবার অলক্ষে পোস্টারটি নষ্ট হলেও পলিথিনটি উড়ে গলি-মহল্লার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়ায়। কিছু অংশ টোকাইরা কুড়িয়ে নিলেও বাকিগুলোর স্থান হয় রাস্তা থেকে নর্দমা বা ড্রেনে। আর সেগুলোই নগরীতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে পোস্টার নষ্ট হয়ে যায়। এর পরেও আমরা বলে দিয়েছি পোস্টারে যাতে কোনও পলিথিনের ব্যবহার করা না হয়। এরপরেও অনেক প্রার্থী লাগিয়ে ফেলেছেন। আমরা বলবো, যাতে নির্বাচনের পর প্রার্থীরা নিজ দায়িত্বে এগুলো সরিয়ে নেন। তাছাড়া সিটি করপোরেশনও তখন কাজ করবে।

তবে পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি মালার লঙ্ঘন নয় বলে মনে করেন অনেক প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশনও। ২০১০ সালে প্রণীত আচরণবিধিতে এ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বলেন, আচরণবিধিতে সাদাকালো পোস্টারের কথা বলা হয়েছে। পোস্টার লেমেনেটিংয়ের বিষয়টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের আওতায় পড়ে না। তবে এটা পরিবেশের ক্ষতিকর। প্রার্থীদের ব্যয়ের সঙ্গে এই হিসাবটি যুক্ত হবে।