স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আইনী নোটিশ

একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে আইনি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:  গত ১২ জুলাই ২০২০ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বছর রাজধানীতে কুরবানীর পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই অবিবেচক ও অপরিপক্ক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল ইয়াওমুছ ছুলাছা (১৪ জুলাই) বিশিষ্ট নাগরিক খন্দকার মুহম্মদ জালাল উদ্দিনের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রতি আইনী নোটিশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি শেখ ওমর শরীফ।

নোটিশে মুসলমানদের জন্য পবিত্র কুরবানীর গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়, পবিত্র ঈদুল আজহা এবং পশু কুরবানী মুসলমানদের জন্য একটি দ্বীনি ইবাদত। পবিত্র ঈদুল আজহায় সাধ্যমতো পশু কুরবানী করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের একটি ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) আমল।

কুরবানীর অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে নোটিশে বলা হয়, কুরবানীর সঙ্গে শুধু দ্বীনি বিধানই জড়িত নয়, এর সঙ্গে বাংলাদেশের বহু নাগরিকের জীবন-জীবিকা ও দেশের অর্থনীতিও জড়িত। অনেক খামারি আছেন, যাঁরা পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বছরব্যাপী পশু লালন-পালন করেন। গ্রামের অনেক দরিদ্র মানুষ আছেন, যাঁরা একটা-দুটো গরু-ছাগল পালন করেন ঈদুল আজহার হাটে বিক্রির জন্য। এতে যা আয় হয়, তাতে তাদের জীবন চলে বা অভাব কমে। আবার কুরবানীর পশুর চামড়া দেশের চামড়াশিল্পের কাঁচামালের জোগানের সিংহভাগ পূরণ করে, এই শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়েও বহু শ্রমিক ও ব্যবসায়ী জড়িত। এমনকি পশুর হাটের আয়োজন, পশু বাড়িতে আনা, কুরবানী দেওয়া, কাটাকাটির করার সঙ্গেও বহু মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। এছাড়া দেশে এমন কিছু প্রান্তিক মানুষ আছেন, যাঁরা সারা বছর মাংস খেতে পান না, পবিত্র ঈদুল আজহার কুরবানীর জন্য তারা অপেক্ষা করেন।
কুরবানীর পশুর হাট, পশু কেনা-বেচা, পশু কুরবানী ইত্যাদি কাজ সারতে সারা বছরে মাত্র ৩/৪ দিন লাগে। কুরবানীর পশুর হাট প্রকৃতপক্ষে ঢাকাবাসীর নাগালের মধ্যেই বসাতে হবে। কুরবানীর জন্য পশু কিনতে পারা মুসলিমদের একটি নাগরিক অধিকার।
বর্তমান লকডাউনভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার কুরবানী মৌসুমে প্রায় ৪০ লাখ পশু অবিক্রিত থাকতে পারে বলে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। এমন অবস্থায় ঢাকায় পশুর হাট না বসানোর সিদ্ধান্ত কুরবানীর পশুর ব্যবসাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

নোটিশে আরও বলা হয়, তথাকথিত লকডাউনভাইরাস সংক্রমণের সাথে পশু কুরবানী করা কিংবা কুরবানীর পশুর কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার ইতোমধ্যে সারা দেশে ‘সাধারণ ছুটি’-এর মাধ্যমে ঘোষিত কথিত লকডাউনও অনেকটাই তুলে নিয়েছে। তাছাড়া মানুষকে ঘরে আটকে রেখে লকডাউন করলে লকডাউনয় মৃত্যুহার কমে- এমন ধারণার পক্ষে কোনো প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

নোটিশে কুরবানী করা এবং কুরবানীর পশু ক্রয়ের অধিকারকে দ্বীনি অধিকার হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, একজন মুসলমানদের নাগরিক অধিকার সাংবিধানিকভাবে যেহেতু বাংলাদেশের রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম, সুতরাং ইসলামী আক্বীদাসমূহ রাষ্ট্র দ্বারা সুরক্ষিত। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: “আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে।” সুষ্ঠুভাবে কুরবানীর পশু কিনতে পারা ও পশু কুরবানী করতে পারা বাংলাদেশের প্রত্যেক মুসলিমের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ধরণের সিদ্ধান্ত ঢাকাবাসী মুসলিমদেরকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার পালনে বাধা সৃষ্টি করছেন।

সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার অধিকার রয়েছে। প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি পশু বেচাকেনা হয়। এই বছর ঢাকায় পশুর হাট বসাতে না দিলে লক্ষ লক্ষ গরু ব্যবসায়ীসহ ট্যানারি মালিক, চামড়া শ্রমিক ও প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে।

নোটিশদাতা গরু ব্যবসার সাথে জড়িত বিধায় তিনি এ সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রহস্ত হওয়া আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, তিনি দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ গরু ব্যবসার সাথে জড়িত। প্রতি বছর তিনি ঢাকায় কুরবানীর হাটে পশু বিক্রি করেন। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষেও তিনি ঢাকায় পশু বিক্রির জন্য প্রায় ৫০ টি গরুতে গত এক বছর ধরে বিনিয়োগ করে আসছেন। এই বছর ঢাকায় গরুর হাট বসতে না দেওয়ার মাধ্যমে গরু ব্যবসাকে কঠিন ও প্রায় অসম্ভব করে তুলেছেন এবং এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংবিধানস্বীকৃত পেশাগত স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।

নোটিশগ্রহীতাকে এই নোটিশ পাওয়ার দুই কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকায় এই বছর পবিত্র কুরবানীর পশুর হাট বসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ঢাকায় পশুর হাটের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়।