সূর্যমুখী চাষে, কৃষক হাসে

লবণাক্ত জমিতেও সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন

নিউজ ডেস্ক : ফেনীতে চলতি রবি মৌসূমে সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয়েছে। রসিক ব্যক্তিরা এক সময়ে বাড়ির আঙ্গিনা অথবা বাগানের সৌন্দয্য বর্ধনে সূর্যমুখী লাগালেও এবার বাণিজ্যিকভাবে ফেনীতে ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সরকারিভাবে আর্থিক প্রণোদনা নিয়ে জেলায় নির্বাচিত জমিতে ৫০টি প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এখন সূর্যমুখী ক্ষেতগুলোতে ফুলের সমারোহ আশপাশের মানুষের নজর কাটছে। কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে চলছে মাঠ দিবস। মাঠ দিবসে কৃষকরা শিখছেন এ ফসল চাষের পদ্ধতি, সুবিধা। জানিয়ে দেয়া হচ্ছে কিভাবে এ ফসল বাজারজাত করা হবে।

জানা যায়, বিগত বছর গুলোতে কৃষকরা তাদের জমিতে রবি মৌসুমে তেমন কোন ফসল করতেন না। কিছু কিছু জমিতে খাল-বিল থেকে পানি দিয়ে সেচের মাধ্যমে শাক সবজি, ডাল, আলু জাতীয় ফসল করতেন। রবি মৌসূমে বাকী জমি থাকতো পতিত। কিন্তু এবার ফেনীতে বিভিন্ন স্থানে পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছে কৃষকরা। অন্যান্য ফসলে সাথে এবার স্থানীয়দের চোখ জুড়াচ্ছে বাহারী ও সুদর্শন সূর্যমুখী। সূর্যমুখী ফুল এখন আশপাশে মানুষের মাঝে বিনোদনের ক্ষেত্র হয়েও দাড়িয়েছে।ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, সূর্যমূখী ভালো জাতের সংকট, বাজারজাতকরণের সমস্যা, পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের ভালো ধারণা না থাকায় ফেনীতে সূর্যমুখী চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় কৃষকরা। মাঝে মধ্যে রসিক কৃষক বাড়ির আঙ্গিনায় সৌন্দয্য বর্ধন করতে অ-বাণিজ্যিক ভাবে লাগাতো সূর্যমুখী। কিন্তু এবার জেলায় অন্তত ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের মাধ্যমেই এ ফসল বাজারজাত করে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগ জানায়, রবি ২০১৯-২০ মৌসুমে নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ফেনীতে সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রদর্শনীর আওতায় ৫০টি জমিতে সরকার কৃষকদেরকে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪শ টাকার বীজ, সার ও নগদ সহায়তা দিয়েছে। এখন চলছে প্রদর্শনীর আশপাশে খোলা জমিতে মাঠ দিবস। এসব মাঠ দিবসে স্থানীয় কৃষকদের ডেকে এনে এ ফসল চাষের পদ্ধতি, সুবিধা, প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হচ্ছে। জানিয়ে দেয়া হচ্ছে কিভাবে এ ফসল বাজারজাত করা হবে। ফেনী সদর উপজেলায় চলতি মৌসূমে কৃষকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করতে ২ হেক্টর জমিতে ১২টি প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এ জন্য সরকার প্রদর্শনীর আওতায় জমিতে ব্যয় করতে ৯০ হাজার ২৫৬ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে। এসব প্রণোদনার অর্থ দিয়ে কৃষকদের মাঝে উন্নত মানের বীজ, সার ও নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, সূর্যমুখীর চারা রোপণের ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যায়। সূর্যমুখী ফুলের দানা থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদন করা হয়। এক একর জমিতে সূর্যমুখী চাষে খরচ পড়ে প্রায় ১২ হাজার টাকা। একরে সূর্যমুখী উৎপাদন হয় ৩৩-৩৫ মণ। একমণ সূর্যমুখী ফুলের বীজের বাজার মূল্য প্রায় ১৩-১৪ শ’ টাকা। একর প্রতি উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের প্রায় কমবেশি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। এছাড়াও সূর্যমুখী ফুলের বীজ সংগ্রহ করার পর গাছগুলো জমিতে পঁচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জমির জৈবসারের ঘাটতি পূরণ হয়। অনেক কৃষক পরিবার তার দৈনন্দিন জীবনে রান্নার কাজের জ্বালানি হিসেবে সূর্যমুখীর খড়ি ব্যবহার করে থাকে। এতে করে জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাচ্ছে।

ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় ছাগলনাইয়া উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে ৭টি প্রদর্শনী করা হয়েছে। একই ভাবে ফুলগাজীতে ২ হেক্টর জমিতে ৫টি প্রদর্শনী, পরশুরামে ১ হেক্টর জমিতে ৬টি প্রদর্শনী, দাগনভূঞায় ১ হেক্টর জমিতে ৮টি প্রদর্শনী ও সোনাগাজীতে ৩ হেক্টর জমিতে ১২টি প্রদর্শনী করা হয়েছে। প্রতিটি প্রদর্শনীতে সরকার বীজ, সার ও জমি প্রস্তুত করে আগাছা নিড়ানীর জন্য নগদ সহায়তা বাবদ ৭ হাজার ৫শ টাকা করে ব্যয় করছে।

ফেনী জেলা কৃষি সম্পাসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন খান জানান, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা তেল উৎপাদনে বিদেশ নির্ভরতায় রয়েছি। তাই সরকার দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে তেলের চাহিদা পূরন করতে সূর্যমুখী আবাদে কৃষকদেরকে উৎসাহ ও প্রণোদনা দিচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ফেনীতে ১০ হেক্টর নির্বাচিত জমিতে ৫০টি প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। এসব প্রদর্শনীতে ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।