সুন্দরবনে অগ্নিকান্ড পরিকল্পিত, চিহ্নিত ৬

নিউজ নাইন২৪ডটকম, মংলা: পূর্ব-সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্প এলাকায় পরিকল্পিতভাবেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো বন সন্নিহিত লোকালয়ের সংঘবদ্ধ ৬ অপরাধী। বন বিভাগ এসব অপরাধীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হলেও শনিবার পর্যন্ত তাদের নামে কোনো মামলা হয়নি।

বন বিভাগ বলছে, ‘ব্যক্তি স্বার্থে সুন্দরবনে আগুন লাগানো হয়’ এমন অভিযোগে ৬ অপরাধীর নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দায়ের প্রস্ততি শেষ হয়েছে। আদালত বন্ধ থাকায় আজ রোববার বন আইনে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বাদী হয়ে বন আইনে আদালতে মামলাটি দাখিল করবেন।

এ নিয়ে গত ১৪ বছরে ২০বার ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও এই প্রথম বন বিভাগ অপরাধীদের সনাক্ত করতে সক্ষম হলো। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) সাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে আগুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনে প্রতি বছর আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে বন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের আঙ্গুল খোদ এসিএফ বেলায়েতের দিকে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ জানায়, মঙ্গলবার রাতে নাংলী ক্যাম্প সংলগ্ন বনে পরিকল্পিতভাবে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট স্থানীয়দেরে সহায়তায় বৃহস্পতিবার রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে সুন্দরবনের ৮ দশমিক ৫৫ একর বনাঞ্চল সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আরো ৬৬ একর বনাঞ্চলসহ জীববৈচিত্র্যের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির জিপিএস ডিভাইজের মাধ্যমে সুন্দরবন বিভাগ পুড়ে যাওয়া বনাঞ্চলের এই হিসাব বের করেছে। এই ঘটনার মাত্র ১৭ দিন আগে নাংলী ক্যাম্প এলাকায় আরো একটি আগুনের ঘটনায় পুড়ে যায় প্রায় দেড় একর বনভূমি।

চলতি বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে, ‘কথিত লীজ’ নেয়া সুন্দরবনে বিলে মাছ ধরার সুবিধার্থে ওই এলাকায় পরিকল্পিতভাবে আগুন দেয়া হয়েছিল এমন অভিযোগে ১৯২৭ সালের বন আইনের ২৬ এর ১ক (গ) ধারায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে রোববার বাগেরহাট আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে তারা সবাই বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বাসিন্দা।

বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার্থেই তারা নিজেরা লাভবার হতে পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবনে আগুন দেয়। মামলার প্রধান আসামি শাহজাহান শিকারীর বাড়িও সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটে শরণখোলা উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের ভোলা নদীর পাড়ে।

এদিকে সুন্দরবন বিভাগ আগুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত তিন সদস্যেদের কমিটি কাজ শুরু করেছে। সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েতকে এই তদন্ত কমিটির প্রধান করায় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে সুন্দরবন সন্নিহিত লোকালয়ের মানুষের মনে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনে প্রতি বছর আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে বন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের আঙ্গুল খোদ এসিএফ বেলায়েতের দিকে। কয়েকটি অসাধু মৎস্য শিকারি চক্র প্রতি বছর বনে আগুন লাগিয়ে থাকে।

শুষ্ক মৌসুমে তারা আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে মাছের বিল তৈরী করে। বর্ষা এলেই শুরু হয় ওই চক্রের মাছ ধরার উৎসব। বন কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই চক্রের কাছে মৌসুম ভিত্তিক অলিখিত ইজারা (লিজ) দেয় ওই বিলগুলো। সেখানে কারেন্টসহ বিভিন্ন ধরণের জাল পেতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করা হয়। প্রতি মৌসুমে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হলেও সরকারের ঘরে একটি টাকাও রাজস্ব জমা পড়ে না। পকেট ভারি হয় সুন্দরবনের অসাধু কর্মকর্তাদের। মঙ্গলবার রাতের নাংলী ক্যাম্প সংলগ্ন আব্দুল্লারছিলার বনে আগুনের ঘটনাটি তারই অংশ।