সুগন্ধি ব্রিধান প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন

সুগন্ধি ব্রিধান প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন

নিউজ ডেস্ক: খুলনা উপকূলীয় এলাকায় চলতি আমন মৌসুমে প্রথমবারের মতো মাঠে কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রিধান-৯০। মাত্র ৩ কাঠা জমিতে চাষ করা এ উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতের সুগন্ধি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চিকন দানার এ সুগন্ধি ধানের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ৫ টন হওয়ায় তা এলাকায় কৃষকের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

বর্তমানে এ এলাকায় স্থানীয় বড়ান জাতের ধানের মাঠ এখনও সবুজ এবং পুষ্পায়ন হচ্ছে। এসব ধান কাটতে আরও প্রায় ২ মাস সময় লাগবে। কিন্তু একই সময় রোপণ করে মাত্র ১১৮ দিনেরও কম সময়ে আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় এ জাতটি নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যেসব জমি মাঝারি উঁচু এবং উঁচু, সেখানে এ ধান চাষ করে মধ্য কার্তিকেই ধান কাটার পর সেখানে রবিশস্য চাষ, বিশেষ করে সরষে, আলু, শাকসবজি করা সম্ভব হবে। সাধারণত এ এলাকায় স্থানীয় জাতের আমন ধান অনেক নাবিতে পাকায় নতুন কোনো ফসল চাষ করা যায় না। ফলে এলাকার বেশিরভাগ জমি একফসলি এবং তা বছরের ৭ থেকে ৮ মাসই পড়ে থাকে। ব্রিধান-৯০ একদিকে মাত্র ৪ মাসের মধ্যেই পাকে এবং ফলনও বেশি। স্থানীয় রানী স্যালট, জটাই, হরকোচ, ভাটেল ধানের হেক্টরপ্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদন সাড়ে ৩ থেকে ৪ টন। সেখানে ব্রিধান-৫ টন পর্যন্ত উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।

বৃহত্তর খুলনা উপকূলীয় এলাকায় মাঠ পর্যায়ে এ ধানের চাষ হওয়ার খবর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাছেও নেই। এমনকি বটিয়াঘাটার দাউনিয়াফাদ গ্রামে চাষ হওয়া ব্রিধান-৯০ সম্পর্কেও খুব কম লোকে জানে।

গুপ্তমারি গ্রামের কৃষক রহমান মিয়া প্রথম এ ধানের চাষ করেন। তাকে ব্রি থেকে বীজ সংগ্রহ করে দেন একজন শৌখিন ধান চাষি। ধান পাকার পর ফলন দেখে অনেকরই এ ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে। রহমান মিয়া তার ৩ কাঠা বর্গাজমিতে ৩ মণ ফলন পাওয়ায় খুবই খুশি।

তিনি বলেন, এত অল্প জমিতে এত চিকন ধানের এভাবে ভালো ফলন পাব ভাবতেই পারিনি। এলাকার অনেকেই বীজ চেয়েছেন। প্রতি কেজি বীজ দেড়শ থেকে ২০০ টাকা দর চেয়েও আগ্রহী চাষি নিচ্ছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের

একজনই নিয়েছেন ২ মণ বীজ। তিনি আগামী বছর ৩ একর জমিতে এ ধান চাষ করতে চান।

দাইনিয়াফাঁদ গ্রামের কৃষানি জালাল শাহ বলেন, এমন সুন্দর ছোট ছোট দানার ধানের এত ভালো ফলন আগে কখনও দেখিনি। এছাড়া আমরা যখন আমন ধান কাটি, তখন পৌষ মাস। তার ২ মাস আগে এখন এ ধান পেকেছে এটাও বড় ব্যাপার। তিনি বলেন, আমি এর নাম দিয়েছি ‘মুসরি দানা’। এলাকার কেউ কেউ বলেন, ‘বেগুন বিচি’। আবার কেউ নাম দিয়েছেন ‘স্বর্ণালি ভোগ’। এ ধানের চালের ভাত খেতে সুস্বাদু এবং তাতে সুগন্ধ থাকায় পোলাওসহ বিভিন্ন উৎসবে রান্নার উপযোগী। এ ধানের চাল বিদেশে রপ্তানিযোগ্য বলেন বিজ্ঞানীরা।

শুধু খুলনা উপকূলীয় এলাকাতেই নয়, সারা দেশে আগাম আমন ধান হিসেবে ব্রিধান-৯০ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে এমনটাই আশা করেন উদ্ভাবক ব্রি’র বিজ্ঞানীরা। ২০১৯ সালে এ জাতটি মাঠ পর্যায়ে চাষে ছাড়পত্র দেয় বীজ প্রত্যায়ন বোর্ড।