সিনহা হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হচ্ছে, শিগগির রায়

কক্সবাজার সংবাদাদতা: আগামীকাল বুধবার (১২ জানুয়ারি) মেজর সিনহা হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রমের শেষ ধাপ যুক্তিতর্ক শেষ হতে যাচ্ছে। এরপর রায় ঘোষণার পর্যায়ে যাবে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি।

মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তৃতীয় দিনের যুক্তিতর্ক শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মেজর সিনহাকে হত্যা করা হয়েছে। ৬৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করার মাধ্যমে বাদীপক্ষ তা আদালতে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের মক্কেলদের বাঁচাতে চেষ্টা করছেন।

এদিকে এ মামলাটি আইনের গতিতে চলছে না বলে অভিযোগ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত। তিনি বলেছেন, বিধান অনুযায়ী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট র‌্যাবকে দিয়ে এই মামলা তদন্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন না।

মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ যুক্তিতর্ক চলে। আসামি বরখাস্ত হওয়া পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত এবং বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপের পক্ষে ৮ জন আইনজীবী তাদের যুক্তিতর্ক আদালতে তুলে ধরেন।

প্রথমে লিয়াকতের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার দাশ যুক্তিতর্ক শুরু করেন। তার সঙ্গে আরও তিন আইনজীবী লিয়াকতের পক্ষে যুক্তিতর্কে অংশ নেন। এরপর দুপুরে বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপের পক্ষে তার প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত যুক্তিতর্ক শুরু করেন।

এ সময় আরও তিন আইনজীবী প্রদীপের পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্কে অংশ নেন। অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের যুক্তিতর্ক অসমাপ্ত রেখে মঙ্গলবার আদালতের কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করেন আদালত। আগামীকাল বুধবার তিনি তার অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক শুরু করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ আসামিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে আনা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে খুন হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব।

চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

গত বছরের ২৭ জুন ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর গত বছরের ২৩ আগস্ট কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শুরু হয়, এটি শেষ হয় গত ১ ডিসেম্বর। এ মামলায় মোট ৬৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।