সার সংকট দেখিয়ে চাষিদের লুটছে ডিলাররা

সার সংকট দেখিয়ে চাষিদের লুটছে ডিলাররা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গায় টিএসপি ও ডিএপি সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন ডিলাররা। ১১০০ টাকা মূল্যের টিএসপি সার প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে বাজারে ১৪শ থেকে সাড়ে ১৭শ টাকায়। আর ডিএপি সার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১১শ টাকায়।

অনেক ক্ষেত্রে কৃষকদের সারের সংকট দেখিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা তাদের জমিতে আলু, ভুট্টা, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করছেন। সার সংকটের কারণে সমস্যায় পড়ছেন তারা।

এদিকে চুয়াডাঙ্গায় সারের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তাদের দাবি এখনও যথেষ্ট সারের মজুত রয়েছে ডিলারদের কাছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় বিসিআইসি ও বিএডিসির নিবন্ধনকৃত ডিলার রয়েছেন ১১৩ জন। নিবন্ধনকৃত ডিলারদের নির্দিষ্ট সময়ে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়। অক্টোবর মাসে ইউরিয়া ৩ হাজার ৭৯৫, টিএসপি এক হাজার ১৬৩, এমওপি এক হাজার ৬৩১ ও ডিএপি ২ হাজার ৪৪৯ মেট্রিক টন করে ডিলারদের বরাদ্দ দেয়া হয়।

মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) পর্যন্ত জেলায় ইউরিয়া এক হাজার ৪০৯, টিএসপি ২১৯, এমওপি ৩৯৫ ও ডিএপি এক হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন সার মজুত রয়েছে ডিলারদের কাছে। টিএসপি সার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৬৮ মেট্রিক টন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫ মেট্রিক টন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৭০ মেট্রিক টন ও জীবননগর উপজেলায় ৪৬ মেট্রিক টন মজুত রয়েছে।

আর ডিএপি সার চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৭৭ মেট্রিক টন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৪৮৫ মেট্রিক টন, দামুড়হুদা উপজেলায় ২২৯ মেট্রিক টন ও জীবননগর উপজেলায় ১৬৭ মেট্রিক টন মজুত রয়েছে ডিলারদের গোডাউনে।

চুয়াডাঙ্গার বেশ কয়েটি স্থানে সার ডিলারের গোডাউন ঘুরে দেখা যায় সব জায়গায় টিএসপি ও ডিএপি সারের মজুত রয়েছে গোডাউনে। কৃষকরা ডিলারদের কাছে সার কিনতে গেলে তাদের বলা হচ্ছে সার নেই। অনেক ডিলার বলছেন সার বেশি দামে কিনেছি তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। অন্য জায়গা থেকে এনে দিলে দাম বেশি পড়বে।

চুয়াডাঙ্গায় সরকার নির্ধারিত টিএসপি দেশি সারের দাম ১১শ টাকা হলেও কৃষকদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে এক হাজার ৭৪০ টাকা পর্যন্ত। আবার টিএসপি অন্য কোম্পানির সারের দাম নেয়া হচ্ছে ১৩শ-১৪শ টাকা পর্যন্ত। আর ডিএপি সারের সরকার নির্ধারিত মূল্য ৮শ টাকা হলেও এক হাজার টাকা থেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে।

সারের সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধির ফলে জেলায় এ মৌসুমে চাষ ব্যাহত হতে পারে। কৃষকরা বর্তমানে মাঠে সবজি, ভুট্টা, আলুসহ বিভিন্ন ফসল লাগাচ্ছেন। সারের অভাবে চাষ বন্ধ থাকলে এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অনেক কৃষক নির্ধারিত সময়ে সার কিনতে না পারার আশঙ্কায় আবাদ বন্ধও রেখেছে।

চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ বাজারে বিসিআইসির সার ডিলার আনছার আলীর গোডাউনে টিএসপি সার ১১৩ বস্তা ও ডিএপি ৬৬৯ বস্তা মজুতের তালিকায় লেখা থাকলেও কৃষকদের ফেরত দেয়া হচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে তাদের মনোনীত গ্রামের দোকান থেকে স্লিপ নিয়ে গেলে ঠিকই সার গোডাউন থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা হানুরবাড়াদী গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, টিএসপি সার সকালে ডিঙ্গেদহ থেকে এক হাজার ৭৪০ টাকায় কিনে আনলাম। জমিতে সার দিতে হবে বলেই এ দামে সার কিনেছি।

চুয়াডাঙ্গা হানুরবাড়াদী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, ডিঙ্গেদহ বাজারে আনছার আলীর কাছে সার কিনতে গেলে তিনি বলেন টিএসপি সার নেই পরে আসো। কিন্তু বেশি দামে গ্রামের অন্যরা সার সেখান থেকে ঠিকই কিনে আনছেন।

চুয়াডাঙ্গা গড়াইটুপি বাজারের সার ডিলার আনোয়ার ট্রেডার্সের মালিক হাজি আনোয়ার বলেন, চায়না ডিএপি সার এক হাজার টাকায় বিক্রি করছি প্রতি বস্তা। দেশি ডিএপি সার আমার কাছে নেই।

চুয়াডাঙ্গা ডিঙ্গেদহ বাজারের সার ডিলার আনছার আলী বলেন, অন্য জায়গা থেকে বেশি দামে সার কিনে আনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সার বেশি দামে বিক্রির বিষয়টি ওপর মহলের লোকজন জানেন।

সারের সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাহিদা মোতাবেক সার পাচ্ছি না। তাই টিএসপি ও ডিএপি সারের সংকট রয়েছে।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা শাখার সভাপতি মীর মহি উদ্দিন বলেন, কিছুটা সমস্যা আছে। বেশি দামে সার বিক্রি হচ্ছে বলে শুনেছি।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলী হাসান বলেন, জেলায় কোনো সারের ঘাটতি নেই। ডিলারদের কাছে যথেষ্ট সার মজুত রয়েছে। এ মাসে সকল ডিলার নির্দিষ্ট সময়ে সার উত্তোলন করেছেন।

জেলা প্রাশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, বেশি দামে সার বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। যেসব ডিলার সারের দাম বেশি নেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সালাউদ্দীন কাজল/এফএ/পিআর