‘সরকার শিক্ষাখাতকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলছে’

নিউজ ডেস্ক: বাজেটে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দ অর্থ দিয়ে শিক্ষাখাতে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। এতে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার কোনো পরিকল্পনা দেখা যায়নি। তার উপর যুক্ত হচ্ছে বাড়তি করের বোঝা। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মোট বাজেটের ৫ থেকে ৭ শতাংশ জিডিপি বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন হলেও সেখানে ২ শতাংশের উপরে উঠছে না। দেশে শিক্ষাখাতে বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বেশি ভূমিকা পালন করলেও তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ১৫ শতাংশ কর।

সরকার শিক্ষাখাতে যথাযথ বরাদ্দ ও সক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম না হলে শিক্ষাখাত বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বরাদ্দ দিলেও এবার ১১ দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামী বাজেট ব্যবসা সহায়ক হলেও এটি শিক্ষা সহায়ক হয়নি। করোনায় শিক্ষার যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থ দিয়ে মোচন করা সম্ভব নয়। শিক্ষার ক্ষতি পূরণে কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট দেখে মনে হয়নি করোনায় শিক্ষার কোনো ক্ষতি হয়েছে। অন্য খাতের ক্ষতি দেখা গেলেও শিক্ষার ক্ষতি দেখা যাচ্ছে না বলে বাজেটে শিক্ষাখাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যবিত্তরা পড়ালেখা করলে সেখানে ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দিচ্ছে আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর আরোপ করা হচ্ছে। এটি অন্যায় কাজ বলে বিবেচিত হচ্ছে। বাজেটে মেয়েদের কথা ভাবা হয়নি। যারা নিয়মিত কর দেন তাদের কর বাড়ানো হচ্ছে আর যারা ফাঁকি দেন তাদের সুযোগ তৈরি করে দেয়া হচ্ছে।’

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘দেশের মানুষের শিক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, অথচ শিক্ষার ক্ষতি পূরণে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হবে। এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া না হলে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুববে আর বিদেশ থেকে মানুষ এনে দেশের উন্নয়ন করতে হবে। বাজেটে ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠালে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়া হলেও কার্যত কোনো গুরুত্ব দেয়া হয়নি।’

বাজেট প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজেটে শিক্ষাখাতে এ বৃদ্ধিকে অত্যন্ত সামান্যই বলা যায়। আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটা উল্লম্ফন ঘটবে। কিন্তু সেটির বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেই কবে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি শিক্ষাখাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ চান। তার সময়ে তৈরি কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন তাদের রিপোর্টে বলছে, শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ৫ থেকে ৭ শতাংশ দরকার। বঙ্গবন্ধুর দলটিই এখন ক্ষমতায়, কিন্তু তারা শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২ শতাংশের বেশি কিছুতেই বরাদ্দ বাড়াচ্ছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাখাত। যদি সত্যিকার অর্থে এই ক্ষতি আমরা মোকাবিলা করতে চাই এবং অনলাইন-অফলাইন শিক্ষাকে সক্ষমতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে সেখানেই তো কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া উচিত।’

জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বাজেটে শিক্ষায় যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা অপর্যাপ্ত। শিক্ষায় একদমই যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। কলকারখানা বন্ধ হলে এবং শ্রমিকরা বিদেশে যেতে না পারলে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাচ্ছে না, সে বিষয়ে মনে হয় কেউ উদ্বিগ্ন নয়। এ উদাহরণ থেকেই আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে শিক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব দিই না।’